শেষের পাতা
আনোয়ারে নীরব শফিক চৌধুরী
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার
সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর চির প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। একই আসনে নৌকার জন্য তারা দু’জনই লড়াই করছিলেন। ছিলেন দুই মেরুতে। বলয় আলাদা, নেতাকর্মীরাও আলাদা। একজন ডানে গেলে অন্যজনের অবস্থান ছিল বামে। এবার হঠাৎ করে সিলেট সিটি নির্বাচনের মাঠে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই বলছেন; সিলেট-২ আসনের রাজনীতির মাঠে ‘ওয়াকওভার’ পেয়েছেন শফিক চৌধুরী। তবে কী আনোয়ারের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের বরফ গলছে শফিক চৌধুরীর- এমন প্রশ্ন এখন সিলেটের রাজনীতিতে। এ প্রশ্নের উত্তর এখনো খোলাসা হয়নি। যদিও এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছুটে গেছেন শফিক চৌধুরীর টিলাগড়স্থ বাসায়।
নৌকার জয়ের জন্য কাজে কোনো গাফলতিও হবে না।’ সিলেটের রাজনীতিতে লন্ডনের প্রাধান্য বাড়ছে বিষয়টি কীভাবে দেখছেন- প্রশ্নের জবাবে শফিক চৌধুরীর খোলামেলা উত্তর- ‘লন্ডনের ওরা তো সিলেটেরই। এখানে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। যারা লন্ডন থেকে এসে প্রার্থী হচ্ছেন তারা তো সিলেটের রাজনীতিরই অংশ।’ শফিকুর রহমান চৌধুরী এক সময় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে এসে তিনি সিলেট-২ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছিলেন। বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে তিনি ওই আসনের এমপি হন। তবে, ভাগ্য সহায় নেই তার। এ আসনে বিগত দুই টার্ম নৌকার কেউ মনোনয়ন পাননি। শরীকদের হাতেই গেছে নেতৃত্ব। সিলেট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ইফতেখার হোসেন শামীমের পর হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। টানা ৯ বছরের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে শেষদিকে এসে দলীয় কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হওয়ার কারণে এর আঁচড় এসে পড়ে তার গায়েও। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সম্মেলনে তাকে পদ থেকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নেন। তবে, সিলেটের রাজনীতিতে এখন বেশ সুসংহত শফিক চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নীতি নির্ধারক মহলেরও একজন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে টিমওয়ার্ক গড়ে তোলায় জেলার রাজনীতিতে এখন নির্ভার শফিক চৌধুরী। এই অবস্থায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরে সক্রিয় হওয়ায় সংসদীয় আসনের রাজনীতিতেও তিনি একক কর্তৃত্ব পেলেন। সিলেট-২ আসনের আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সরে গেলেও নিজ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরীর রাজনীতি আরও কঠিন হয়ে গেছে। দুটি উপজেলায়ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখনো দ্বিধাবিভক্ত। এর পাশাপাশি কয়েক মাস আগে শেষ হওয়া উপজেলা ও পৌর নির্বাচন নিয়ে নানা নাটকীয়তা হয়েছে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে। দুটিতেই নৌকার প্রার্থী ছিলেন আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতারা। এ কারণে রাজনীতির মাঠ ছিল নানা নাটকীয়তায় ভরপুর।
এই নাটকীয়তার মধ্যও ওসমানীনগরে নৌকার প্রার্থী জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি জয়লাভ করেছেন। তবে, বিশ্বনাথে আটকে গেছেন নৌকার প্রার্থী ফারুক আহমদ। বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের একাংশের দাবি হচ্ছে- বিশ্বনাথ পৌরসভায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে শফিক চৌধুরী ও তার বলয়ের নেতারা মাঠে সক্রিয় থাকলেও ভেতরে ভেতরে স্বতন্ত্রদের পক্ষে ছিলেন। এ কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়লাভের পর শফিকুর রহমানের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্য আসে। এরপর থেকে বিশ্বনাথ আওয়ামী লীগের একাংশও ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ রয়েছে। ওসমানীনগরে ভোটে নানা সমীকরণের সৃষ্টি করা হলেও শেষ মুহূর্তে আনোয়ার বলয়ের নেতা শামীম আহমদ ভিপি জয়লাভ করেন। এরপর থেকে ওসমানীনগরের রাজনীতিতে অবস্থান হারাচ্ছেন শফিক চৌধুরী। তার অনুসারী একাংশের নেতারা ঘোষণা দিয়ে শফিক চৌধুরীর সঙ্গ ছাড়ার কারণে ওসমানীনগরে অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে। এই অবস্থায়ও সিলেট নগর নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে নীরব ভূমিকায় রয়েছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। পক্ষে, বিপক্ষেও তার অবস্থান পরিষ্কার করছেন না। সিলেট আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাট্টা হয়েই তিনি রাজনীতিতে রয়েছেন। অন্যদিকে, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা এখনো মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেননি যুক্তরাজ্য থেকে আসা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। সিলেটে অবস্থান সুসংহত করতে আনোয়ার নেতাদের বাসায় গেলেও এখনো পরিবেশ তার পক্ষে আনতে পারেননি। এতে করে কিছুটা ব্যাকফুটে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে সিলেট আওয়ামী লীগের মুল স্রোতে একীভূত করতে শফিক চৌধুরীর ভূমিকা রহস্যময়। তিনি আগ বাড়িয়ে কোনো কিছুই করছেন না। তবে, শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘সিলেটে কী হচ্ছে, কী হবে- সেটি সবাই দেখতে পারছেন, পাবেনও। এখানে বলার কিছুই নেই। তবে- সিলেট আওয়ামী লীগ যে গতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই গতিতেই চলবে। এখানে নতুন করে কোনো ফরম্যাট হচ্ছে না, হবেও না।’