ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

ই-মেইল হ্যাক করে রনির ডলার কামানোর মিশন

স্টাফ রিপোর্টার
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার
mzamin

বাংলাদেশে শাখা অফিস আছে এমন বিদেশি কোম্পানির ই-মেইল ও বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড হ্যাক করে প্রতারণা করছিল একটি চক্র। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল হ্যাক করে বিদেশে থাকা হেড অফিসে বিভিন্ন ইস্যুতে ডলার চেয়ে মেইল করতো। কোম্পানির নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জায়গায় চক্রটি তাদের নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতো। পরে এসব অ্যাকাউন্টে আসা ডলার আত্মসাৎ করতো চক্রটি। এ ছাড়া ব্যাংকিং কার্ডের তথ্য চুরি করে অনলাইনে নামকরা কোম্পানির দামি দামি পণ্যের অর্ডার করতো। পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতো হ্যাক করা কার্ড থেকে। এভাবে চক্রটি বছরের পর বছর ধরে ই-মেইল ও ব্যাংকিং কার্ড হ্যাক করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের তদন্ত করে ওই হ্যাকার চক্রের দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ)। চাঁদপুর জেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান ওরফে রনি (৩৮) ও মো. মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাকিল (২৪)।

বিজ্ঞাপন
গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে ১টি ল্যাপটপ, ৩টি মোবাইল ফোন, ৩টি সিম কার্ড ও ১টি রাউটার উদ্ধার করা হয়। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জার্মানভিত্তিক কার্গো কোম্পানির সার্ভারে প্রবেশ করে ই-মেইল হ্যাক করে জার্মান প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আত্মসাৎ এবং ডার্ক ওয়েব থেকে আর্থিক তথ্য নিয়ে বিভিন্ন দেশের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে অভিনব প্রতারণার অভিযোগে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার বাদী এম এ আহসানুল বারী জার্মানির কারকন কার্গো লিমিটেডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এবং কারকন কার্গো কন্ট্রোল বিডি’র স্বত্বাধিকারী। তিনি অভিযোগ করেন কেউ তার মেইল আইডি হ্যাক করে জার্মানিতে মূল কোম্পানির কাছে কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করে অফিসের খরচ বাবদ ৪ হাজার ৮০০ ডলার ডিমান্ড নোট দিয়ে মেইল করে। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর ডিবি সাইবার তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় আইপি অ্যাড্রেস অ্যানালাইসিস করে আসামিদের শনাক্ত করে। 

তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, রনি ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন সাইট থেকে ই-মেইলের তথ্য সংগ্রহ করে। ডার্ক ওয়েব থেকেই কারকন কোম্পানির বাংলাদেশ প্রতিনিধির ই-মেইলের তথ্য পায়। এই তথ্য দিয়ে সে কোম্পানির ই-মেইল অ্যাড্রেসে প্রবেশ করে জার্মানিতে অবস্থিত মূল কোম্পানির কাছে খরচ বাবদ ৪৮০০ ডলার চেয়ে মেইল করে। মেইলে রনি পূর্বের প্রদানকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন করে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য উল্লেখ করে টাকা পাঠাতে অনুরোধ করে। নতুন অ্যাকাউন্ট দেখে জার্মানি থেকে আবারো অ্যাকাউন্টটি কনফার্ম করার জন্য বলা হয়। রনি আবার কনফার্ম মেইল প্রদান করার পর তার পাঠানো সব মেইলগুলো অ্যাকাউন্ট থেকে ডিলেট করে দেয়। কোম্পানি তার দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি টের পায় কোম্পানির বাংলাদেশের প্রতিনিধি। পরে তিনি দ্রুত কোম্পানির হেড অফিসে যোগাযোগ করে লেনদেনটি স্থগিত করান। 
ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রনি ও শাকিল সম্পর্কে শালা-দুলাভাই। 

ডিবি জানায়, প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোহাম্মদ শহীদুজ্জামান রনির বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় হলেও ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় তার জন্ম। জন্মের ৫-৬ বছর পর তার মা-বাবার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। সে নাখালপাড়া হোসেন আলী হাইস্কুল থেকে ২০০০ সালে এসএসসি পাস করে। ২০০০-২০১৫ সাল পর্যন্ত সে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে এবং রানী মার্কা ঢেউটিনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করে। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণও নেয়। এরপর অনলাইনেও ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে পুরাতন কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি চকবাজার থেকে কসমেটিকস কিনে ঢাকার গাউছিয়া ও নিউমার্কেটে বিক্রি করতো। ২০১৫ সালে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চাঁদপুরের মতলবে বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সাল থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঢাকার জুরাইন এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে পুরাতন কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করে। ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, কম্পিউটার যন্ত্রাংশের ব্যবসা করতে গিয়ে রনির হ্যাকারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং তাদের কাছ থেকেই হ্যাকিং করা শিখে। তখন কম্পিউটার যন্ত্রাংশের পাশাপাশি অনলাইন প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে। অনলাইন প্রতারণার কারণে অন্য হ্যাকারদের সঙ্গে সেও গ্রেপ্তার হয়। গত বছরের ১লা আগস্ট জামিনে মুক্তি পেয়ে তার শ্যালক শাকিলকে নিয়ে আবার ই-মেইল, ভিসা, মাস্টারকার্ড, পেপালসহ বিভিন্ন ডেবিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আয় এবং আইফোনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য, উন্নতমানের কসমেটিকস পণ্য প্রতারণামূলকভাবে অর্ডার করে। 

ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ মানবজমিনকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শাকিল পলিটেকনিক থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া করেছে। সে ভিসা-মাস্টারকার্ড, পেপাল, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে রনিকে দিতো। রনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান ও নেদারল্যান্ডের দামি পণ্য অর্ডার করে হ্যাক করা কার্ড থেকে মূল্য পরিশোধ করতো। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল হ্যাক করে বিদেশ থেকে ডলার আত্মসাৎ করছিল তারা। তিনি বলেন, রনি এর আগে স্যামসাং ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার ও ডিস্ট্রিবিউটর ফেয়ার ইলেকট্রনিক লিমিটেডের ওয়েবসাইট হ্যাক করে গ্রাহকদের পণ্য হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িত ছিল। ওই ঘটনায় সে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছে। এভাবে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইট ও ই-মেইল হ্যাক করেছে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status