ঢাকা, ২ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

ভূখণ্ড থেকে বিলীন হয়ে যাওয়ার ১১ বছর এবং বেপরোয়া কথাবার্তা

যুক্তরাজ্য থেকে ডাঃ আলী জাহান

(৭ মাস আগে) ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১১ অপরাহ্ন

mzamin

১.
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত কোনো পত্রিকাই খবরটি ছাপেনি। হয়তো তাদের কাছে খবরটি ছাপানোর মতো সংবাদই মনে হয়নি। এ ভূখণ্ডে মানুষের পরিচয় এখন গৌণ। তাঁর সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিচয়টাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণেই হয়তো বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোর কাছে খবরটি প্রকাশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। জলজ্যান্ত দু'জন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের অন্তর্ধান দিবসের খবর তাই তাদের মনে কোনো দাগ কাটতে পারেনি।

 

হতভাগা ওয়ালীউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস এখন কোথায়?


২.
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখটি ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়ালীউল্লাহ এবং আল মুকাদ্দাসের বিলীন হয়ে যাবার ১১ বছর পূর্তি। ক্রসফায়ার এবং গুমের যে তালিকা আছে সেখানে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর নাম থাকলেও রাষ্ট্র তাদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারেনি। কেন পারেনি? উত্তরটা অনেকের জানা থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে সাহস পাবেন না। আমরা যারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে একটু খোঁজ খবর রাখি তারা জানি যে, এই দুই ছাত্র হয়তো আর কখনো ফিরে আসবে না। এই দুই অসহায় মানবসন্তানের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ছিল কার? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ওয়ালীউল্লাহ এবং আল মুকাদ্দাসের পরিবারের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে? কেন করা হয়নি? নাকি বিরোধী মতের মানুষকে মানুষের কাতারে বাংলাদেশে এখন ধরা হয় না? অনেকেই বলেন সরিষার মধ্যে ভূত!


৩.
আমি ভাবছি এই দুই ছাত্রের পরিবার ও সহপাঠী এবং বন্ধু-বান্ধবরা এখন কী করছেন? আল্লাহর কাছে বিচার চাওয়া ছাড়া আর কিছু করার সুযোগ আছে? মনের অজান্তেই কাউকে অভিশাপ দিচ্ছেন?


৪.
অবশ্য নিজেকে অভিশপ্ত মনে করার অন্য কারণও আছে।

বিজ্ঞাপন
ক'দিন আগে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে "ওনাদের কথা বস্তিবাসীদের চাইতেও খারাপ"!  একদম প্রকাশ্যে। কোনো লুকোচুরি ছাড়াই। রাষ্ট্রের কাছে সব নাগরিকই সমান। আপনি প্রকাশ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে পুরো বস্তিবাসী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। আপনি যে চেয়ারে বসে এ বাণীর জন্ম দিচ্ছেন, সেই চেয়ারের খরচপাতির কিছুটা হলেও এ বস্তিবাসীরা দিচ্ছেন। আপনি তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে পারেন না। প্রকাশ্যে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার তো প্রশ্নই উঠে না। তবে  মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলার সংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রকট বলে মনে হচ্ছে।


৫.
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা বহুল আলোচিত-সমালোচিত হিরো আলমকে আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু তাই বলে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার অধিকার আপনাকে দিলো কে? হিরো আলম এমপি হয়ে গেলে সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এমন দায়িত্বহীন মন্তব্য যখন একজন দায়িত্বশীল মানুষের মুখ থেকে আসে তখন বুঝতে বাকি থাকে না আমাদের নৈতিক অধঃপতন কতটুকু হয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়। দু'দিন আগে পুলিশের সাবেক আইজি প্রকাশ্যে বলেছেন যে, হিরো আলমকে নিয়ে কথা বলতে তার রুচিতে  বাঁধে।

৬.
মানুষের বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তা এবং আচার আচরণে মাঝেমধ্যে বেপরোয়া হয়ে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে তাদের এই কথাবার্তা এবং আচার-আচরণের জন্য কোনো জবাবদিহিতা করতে হবে না। সেই জবাবদিহিতা এখন বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে ক্ষমতার আশপাশে
যারা আছেন তাদের কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় বলে মনে হয় না। সে কারণেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়ালীউল্লাহ এবং আল মুকাদ্দাসরা বছরের পর বছর ধরে নিখোঁজ থাকলেও কাউকে কোনো জবাব দিতে হয় না। দুঃখ প্রকাশ করতে হয় না। বস্তিবাসীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেও চেয়ারে বসে থাকা যায়। হিরো আলম সংসদে আসলে  সংসদের সৌন্দর্য নষ্ট হবে অথবা হিরো আলমকে নিয়ে কথা বলতে রুচিতে বাঁধে এমন মন্তব্য করেও নিশ্চিন্তে চেয়ারে বসে থাকা যায়। বাস্তবতা হচ্ছে যে, এই নিশ্চিন্ত থাকা সময়েরও একটি সমাপ্তি আছে। প্রকৃতির নিয়মে একদিন আমরা সবাই বিলীন হবো। তারপর? তারপর কী হবে? উত্তর প্রস্তুত আছে তো?

 

ডা: আলী জাহান

কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, যুক্তরাজ্য।

সাবেক পুলিশ সার্জেন, যুক্তরাজ্য পুলিশ।

[email protected]

 

পাঠকের মতামত

আশা করি আজকের এই পোস্টে থাকা উক্তি গুলো আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। জীবনের পথে নিজেকে চলতে হয় এ পথে নিজেকে পাড়ি দিতে হয় অন্য কেউ এগিয়ে দেয় না অন্যেরা শুধু সান্ত্বনা দিয়ে যায়। তাই জীবনের লক্ষ্য অর্জন করার জন্য আবার সফলতা অর্জন করার জন্য নিজেকে পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। কেননা যেখানে পরিশ্রম নেই সেখানে সফলতা অর্জন করা খুবই কষ্টকর।

এনামুলইসলাম
১১ জুন ২০২৩, রবিবার, ২:৪০ অপরাহ্ন

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status