শেষের পাতা
সিলেটে কয়েক ঘণ্টার উৎকণ্ঠা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
সকাল থেকে নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ। বিরাজ করে হিমশীতল আতঙ্ক। প্রস্তুত দুই মঞ্চ। একটি রেজিস্ট্রারি মাঠ। অন্যটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বলে দেয়া হয়েছিল; মিছিল সহকারে আসতে হবে সমাবেশস্থলে। এ বলে দেয়া নিয়ে যত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বেলা দেড়টার পর থেকে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় সিলেট। চলে বিকাল চারটা পর্যন্ত। বিএনপি’র কর্মীরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছে রেজিস্ট্রারি মাঠে।
দুপুর তখন দুইটা। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছিলেন সুরমা টাওয়ারে। ওই টাওয়ারের পাশের রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপি’র সমাবেশ। ওই বলয়ের হাজারো নেতাকর্মী আড়াইটার দিকে মিছিল নিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করে সড়ক ভবনের সামনে চলে আসেন। এর আগে ওই এলাকা দিয়ে বিএনপি’র একাধিক মিছিল রেজিস্ট্রারি মাঠে ঢুকলেও কেউ কাউকে বাধা দেননি। পুরান লেন, জিন্দাবাজার এলাকায় ছিল যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অবস্থান। ওই এলাকা বিএনপি’র শক্তিশালী ঘাঁটি। পুরান লেন, জিন্দাবাজারে যখন যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছিলেন তখন তাদের সামনে দিয়েই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মিছিল গেছে। ছাত্রলীগের তেলীহাওর গ্রুপের নেতাকর্মীরা কাজিরবাজার মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলের কারণে সেখানে জড়ো হননি। তবে- যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকটি মিছিল ওই এলাকায় গিয়ে রেজিস্ট্রারি মাঠে গেছে। নগরঘুরে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে গোটা নগরী থেকেই মিছিল সহকারে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসেছেন। বিশেষ করে ২৭টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে আসেন। তাদের অনেক মিছিল বিএনপি’র সমাবেশস্থলের পাশ দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন। আবার বিএনপি’র সমাবেশের অনেক মিছিল আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলের পাশ দিয়েও গেছে। একে অন্যের সমাবেশস্থল পাড়ি দেয়ার সময় নানা উৎকণ্ঠা থাকলেও কোনো অঘটন ঘটেনি। সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপির নেতৃত্বে যুবলীগের একটি মিছিল সড়ক ভবন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে। এরপর টিলাগড় ছাত্রলীগের একটি বড় মিছিল নয়াসড়ক এলাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসে। তবে- বিকাল ৩টার দিকে নগরের আম্বরখানা এলাকায় যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং যুবদল ও ছাত্রদলের একাধিক মিছিল মুখোমুখি হয়। এ সময় একে অপরের পাশ দিয়ে গেলেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়নি। এদিকে- সিলেটের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে লোকসমাগমের প্রতিযোগিতা ছিল। এই প্রতিযোগিতার কারণে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুটি এলাকা পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল।
রেজিস্ট্রারি মাঠে বিএনপি’র সমাবেশের কারণে নগরের তালতলা থেকে সুরমা মার্কেট এলাকা পর্যন্ত যানজট ছিল। মিছিলের পর মিছিল আসার কারণে বিকাল থেকেই ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে নগরের লোকজন ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেননি। তবে- টুকেরবাজারগামী সিএনজি অটোরিকশা ও প্রাইভেট যানবাহনের ভিড় ছিল বেশি। বিকাল ৪টার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার ভেতর ছাপিয়ে নেতাকর্মীদের অবস্থান ছিল আম্বরখানা সড়কে। এ কারণে সড়কের একটি লেনে পুরোপুরি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষ করে যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নেন। আর ভেতরে ছিলেন আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীরা। সিলেটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র রাজনীতির এই ডামাঢোলে রাজপথে পুলিশের অবস্থান ছিল। সকাল থেকে নগরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশের সদস্যরা সক্রিয় ছিলেন। বিশেষ করে সুরমা মার্কেট, কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা এলাকায় পুলিশের সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিয়েছেন। রাজনীতির মাঠে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি খুবই কম দেখা যায় সিলেটে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থাকার কারণে তারা আগেই কর্মসূচি ঘোষনা করেছেন। এবং রেজিস্ট্রারি মাঠকে তাদের বিভাগীয় সমাবেশস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রের নির্দেশে তারা সিলেটের এ শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। প্রথমে রেজিস্ট্রারি মাঠকে তারা বেছে নিলেও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করেন। উভয়পক্ষের কর্মসূচির কারণে সিলেটে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা ছিল। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা ছিল।