ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সহকর্মীকে যৌন হেনস্তা

সংসদের সেই কর্মকর্তার পদাবনতি

কাজী সোহাগ
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার

নারী সহকর্মীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তার পদাবনতি হয়েছে। রফিকুল ইসলাম নামের ওই কর্মকর্তা আগে ছিলেন কমিটি অফিসার। বর্তমানে তার পদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। গত ২৫শে জানুয়ারি সংসদ সচিবালয়ের ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রিভিলেজ শাখা থেকে তার পদাবনতির আদেশ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হয়। গত বছরের ১০ই এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক মানবজমিন। পরে সংসদ সচিবালয় ওই ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ওই কর্মকর্তাকে নিচের পদে নামিয়ে দেয়া হয়। সংসদ সচিবালয়ের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা অনেকটা বিরল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা মানবজমিনকে বলেন, সংসদ সচিবালয়ে এ ধরনের ঘটনার উদাহরণ নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন
তবে ওই কর্মকর্তার শাস্তি হওয়াতে এটা সবার জন্য একটি বার্তা বহন করবে বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে যে কেউ পার পাবেন না তার নজিরও স্থাপন করলো সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসন। প্রজ্ঞাপনের আদেশে বলা হয়েছে- অভিযুক্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, কমিটি অফিসার, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (শৃঙখলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৫ (জুন,২০২২ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচারণ এর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে একই বিধিমালার বিধি ৪ এর ৩(ক) বিধি মোতাবেক তাকে ‘নিম্নপদে নামাইয়া দেয়া’ গুরুদণ্ড প্রদান করা হলো। প্রজ্ঞাপনে আদেশের পাশাপাশি পুরো ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- মো. রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কমিটি অফিসার পদে কমিটি শাখা-৬ এ কর্মরত আছেন এবং তিনি উক্ত শাখার কর্মরত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বেগম নাজমুন নাহারকে কিছুদিন ধরে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, তার সঙ্গে অপ্রীতিকর আচরণ এবং আপত্তিকর কথাবার্তা বলে আসছেন। এ ধরনের আচরণ না করার জন্য বেগম নাজমুন নাহার তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও অফিস কক্ষ ফাঁকা থাকলে অথবা প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিটে না থাকলে অফিস সহায়ক আদু মিয়া চৌধুরীকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে তিনি আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন। তিনি তাকে রুমে ডেকে নিয়ে কম্পিউটারে নানা ধরনের নোংরা ও আপত্তিকর ছবি বের করে দেখান এবং বলেন এগুলো দেখলে মনে প্রশান্তি আসবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, যেহেতু তিনি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বেগম নাজমুন নাহারকে তার সঙ্গে মার্কেটে ও বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। বেগম নাজমুন নাহার ওয়াশ রুমে গেলেও মাঝে মাঝে তার গতি রোধ করার চেষ্টা করেন। তিনি (বেগম নাজমুন নাহার) মান-সম্মান ও ইজ্জত রক্ষার কথা ভেবে তার এ ধরনের আচরণ বার বার সহ্য করে চলার চেষ্টা করেন। এতে বলা হয়, তিনি (কমিটি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বেগম নাজমুন নাহারের অফিস রুম ফাঁকা পেয়ে তার গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। চিৎকার ও চেঁচামেচি করার চেষ্টা করলে তিনি তার মুখ চেপে ধরেন, তার সংসারে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টির জন্য বুদ্ধি দেন এবং কাউকে বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- মো. রফিকুল ইসলাম, কমিটি অফিসার, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উক্তরূপ কার্যকলাপ একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য অশোভনীয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ২০০৫ এর ২৫ বিধির লঙ্ঘন। উক্ত বিধিমালার যেকোনো বিধির লঙ্ঘন যা জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (শৃঙখলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৫ (জুন, ২০২২ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ২(চ) মোতাবেক ‘অসদাচরণ এবং একই বিধিমালার ৩(খ) বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে- কমিটি অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগ আনয়নপূর্বক জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (শৃঙখলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৫ (জুন, ২০২২ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করে তাকে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী দেয়া হয়। তিনি বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামার জবাব প্রদান করেন এবং জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে আনীত অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আনীত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অভিযুক্ত কমিটি অফিসার মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য, দাখিলকৃত তথ্য, কাগজপত্র এবং সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় পর্যালোচনায় তদন্ত প্রতিবেদনে মহিলা সহকর্মীকে যৌন উৎপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (শৃঙখলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৫ (জুন, ২০২২ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি দণ্ড পাওয়ার যোগ্য। এর আগে বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ১০ই এপ্রিলে প্রকাশিত মানবজমিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জোর করে অনেকবার জড়িয়ে ধরেছেন, অশ্লীলতা করেছেন এমনকি শ্লীলতাহানিও করেছেন অধীনস্থ নারী সহকর্মীকে। অনুনয়, অনুরোধেও নিজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে থামাতে পারেননি। চাকরি আর লোক লজ্জার ভয়ে দিনের পর দিন সহ্য করে গেছেন বসের নির্যাতন। সম্প্রতি অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই তো শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। করেছেন সাধারণ ডায়েরি। কিন্তু ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তার দাবি শ্লীলতাহানি নয় শাসন করেছি মাত্র। ঘটনাটি সংসদ সচিবালয়ের। সরকারি কর্মচারী হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরির মতো অনেকটা বিরল ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত ২০শে মার্চ রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় ওই জিডিটি করেন সংসদ সচিবালয়ের কমিটি শাখা-৬ এর অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নাজমুন নাহার। যার নম্বর ১২৫২। ৫০ বছর বয়সী ওই নারী কর্মচারীর স্বামীও সংসদ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status