শেষের পাতা
সংকটেও জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবারকরোনা মহামারির পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে বিশ্ব। গত বছর কেটেছে এই সংকটে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে নতুন বছরের শুরুতেই দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের আরও বিপাকে ফেলেছে। এসব সংকটের মাঝে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই আয় আগের বছরের একই মাসের ৪৮৫ কোটি ডলারের চেয়ে ৫.৮৯ শতাংশ বেশি। তবে এবারের জানুয়ারির ৫২৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.১০ শতাংশ কম। জানুয়ারিতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।
এর আগে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। সবশেষ ডিসেম্বর মাসে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয় রপ্তানি থেকে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এদিকে সংস্থাটির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি এই ৭ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩২ হাজার ৩৩৭ কোটি ডলার। এ সময় তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য কোনো পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়নি। এই ৭ মাসে মোট দুই হাজার ৭৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪.৫০ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪.৩১ শতাংশ।
ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত ৪ মাস ধরেই দেশে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের শিল্প মালিকরা। এর সঙ্গে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট যুক্ত হওয়ায় রপ্তানি খাতের দুরবস্থা বোঝাতে জানুয়ারি মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক দিকে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি।
তৈরি পোশাক রপ্তানি মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যদি আমরা একক মাস বিবেচনা করি, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমাদের রপ্তানি আয় ছিল ৪.৪২ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২২ সালের একই মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.২৪ শতাংশ। বিজিএমইএ পরিচালক বলেন, যদিও আমরা গত কয়েক মাস ধরে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানি আয় বজায় রাখছি। এই শক্তিশালী পারফর্মেন্সের পেছনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ২০২৩ সালে মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বিশ্ব দুর্বল প্রবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির একটি প্রলম্বিত সময়ের মধ্যে প্রবেশ করছে। আমাদের বেশিরভাগ কারখানায় নতুন অর্ডারও কমে গেছে। তাই ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের নজিরবিহীন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
এদিকে চামড়াজাত পণ্যে ৭.৩৭ শতাংশ ও প্লাস্টিক পণ্যে ৪০.১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার কৃষিপণ্য ২৫.৮৬ শতাংশ, হিমায়িত মাছে ২২.৩৯ শতাংশ, হস্তশিল্পে ৩৪.১০ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ২১.২২ শতাংশ এবং কাঁচপণ্যের রপ্তানি ৪৭.৮৮ শতাংশ কমেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৮ বিলিয়ন ডলার।