ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না

কাজী সোহাগ ও এম এ রহমান (আসলাম) রাজশাহী থেকে:
৩০ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার
mzamin

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলার মানুষের কথা ভেবেই দেশে এসেছি, পালাতে নয়। আওয়ামী লীগ পালায় না, পিছু হটে না। গতকাল রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে আমি জানি, বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। তারা আমাদের আবার নোটিশ দেয়। আবার বলে, আমরা নাকি পালানোর পথ  পাবো না। আমি এই বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করি, পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না। তিনি বলেন, ওই জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম। শেখ হাসিনা বলেন, আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তখনো আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল।

বিজ্ঞাপন
তার বাচ্চা হয়েছিল, অপারেশন হয়েছিল, তাকে দেখতে। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাব। এই কেস আমি মোকাবিলা করবো। আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধু বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে। তিনি বলেন, আজকে যারা বলে, পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই। এর আগে বেলা ৩টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে হেলিকপ্টারে করে নগরীর জেলখানা প্রশিক্ষণ মাঠে নেমে গাড়িতে করে সভামঞ্চে আসেন। 

এ সময় ময়দান ভর্তি জনতা হাততালি ও গগনবিদারি স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে জনতার প্রতি শুভেচ্ছা জানান। বিভাগীয় জনসভায় উপস্থিত হয়ে ৩২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরমধ্যে রাজশাহী জেলার ২৬টি সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্প কাজের উদ্বোধন ও ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।  রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। জনসভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বেগম আখতার জাহান প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতারা কে? বিএনপি তারা নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে। যে নাকি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, পালিয়ে গিয়েছিল, সে কথা কি আমাদের বিএনপি নেতাদের মনে নাই? শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা-তারেক। এমনকি খালেদা জিয়া তারেক-কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানিলন্ডারিং করে।

 ৪০ কোটি টাকা আমরা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছি তাদের পাচার করা টাকা। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। ‘নৌকার কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে জিয়াউর রহমান মেজর থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। এরপর নৌকার ওপর তাদের রাগ এত কেন?’ সরকারপ্রধান বলেন, রাজশাহী সারাজীবন অবহেলার ছিল। আপনারা এখানে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। রাজশাহীতে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাজশাহীতে ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে। আজ যে কাজগুলো উদ্বোধন করা হলো এগুলো রাজশাহীবাসীকে আমার উপহার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভালো তারা বিএনপি চায় না। তারা সন্ত্রাস ও লুটপাট ছাড়া কিছু বোঝে না। এই রাজশাহীতে বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছিল। তারা পুলিশের সহায়তায় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করে। 

জনসভায় উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের এ জয়যাত্রা, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ যেন গড়তে পারি আপনারা সেই জন্য নৌকায় ভোট দেবেন। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবারো আপনাদের আহ্বান করবো আগামী নির্বাচনে এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কিনা ওয়াদা চাই। এ সময় মাঠে স্লোগান দিয়ে নেতাকর্মীরা ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। যেখানে ৪০ ভাগ দারিদ্র্যসীমা ছিল, আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সমস্ত ভাতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাজশাহীতে একটি আন্তর্জাতিক মানের হোটেল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাহলে আমরা এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করতে পারবো।

৩২টি প্রকল্পের উদ্বোধন
এদিকে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় জনসভায় উপস্থিত হয়ে ৩২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজশাহী জেলার ২৬টি সমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্প কাজের উদ্বোধন ও ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্প কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ৩২টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- রাজশাহী তথ্য কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকাজ, রাজশাহী আঞ্চলিক পিএসসি ভবন নির্মাণকাজ, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ তলাবিশিষ্ট একাডেমি ভবন নির্মাণ, রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ষষ্ঠ থেকে দশমতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত নির্মাণকাজ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের হেড কোয়ার্টার নির্মাণ, রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ভবন উদ্বোধন, মোহনপুর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন, রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি উদ্বোধন। এ ছাড়াও শেখ রাসেল শিশুপার্ক, মোহনপুর রেলক্রসিং ফ্লাইওভার, নগরীর বন্ধগেট-সিটি বাইপাস পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চার লেন সড়ক নির্মাণকাজ, নগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী সড়ক প্রশস্তকরণ ও সম্প্রসারণ কাজ, ভদ্রা রেলক্রসিং থেকে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেন সড়ক উদ্বোধন, হাইটেক পার্ক থেকে ঢালুর মোড় পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ, পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজ, রাজশাহী সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ, চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাল্টিপারপাস ভবন, রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিস, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ছয় তলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস, রাজশাহী সদর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধন, বাগমারার ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট সড়ক, পদ্মা নদীর ড্রেজিং প্রকল্প, রাজশাহী পিটিআইয়ের বহুমুখী অডিটোরিয়াম নির্মাণ, চারঘাট ও বাঘায় পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প। সকালে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন। পরে তিনি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন।

প্রয়োজনে ফখরুল-টুকুর বাড়িতে উঠবো: ওবায়দুল কাদের
সরকারের উন্নয়নের জ্বালায় বিএনপি পুড়ে মরছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমরা পালাবো না, প্রয়োজনে ফখরুল-টুকুর বাড়িতে উঠবো। তিনি বলেন, বিএনপি লাল কার্ড দেখায়। ১০ই ডিসেম্বর সরকারের পতন বলে। ৩০শে ডিসেম্বর সরকার চলে যায়। ১১ই জানুয়ারি সরকার নেই। বিএনপি এখন পদযাত্রা করছে। পদযাত্রা মানে শেষ যাত্রা, মরণ যাত্রা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ফখরুল সাহেব বলেন আমরা না কি পালানোর সুযোগ পাবো না। আমরা পালাবো না। পালিয়ে তো বেড়ান আপনারা। আপনাদের দলের নেতা পালিয়ে আছেন। আমরা পালাবো না। প্রয়োজনে ফখরুলের বাড়িতে উঠবো, টুকুর বাড়িতে উঠবো। ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের উন্নয়নের জ্বালায় মির্জা ফখরুল ও বিএনপি পুড়ে মরছে। পদ্মা সেতুর জ্বালা শেষ হতে না হতেই মেট্রোরেলের জ্বালা শুরু হয়েছে। এরপর আবার বঙ্গবন্ধু টানেলের জ্বালা। যেদিকে তাকাই সেদিকেই জ্বালা। তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে ফাইনাল খেলা হবে। তৈরি হয়ে যান। বিএনপি’র এখনো শিক্ষা হয়নি। আগামী নির্বাচনে হারের মুখ দর্শন করার পর তাদের শিক্ষা হবে।

রাজশাহীতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভিন্নরকম প্রচারণা
এদিকে রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে ভিন্ন রকম প্রচারণায় নামেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম এমপি। তার প্রচারণার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন। গত এক মাস ধরে রাজশাহীজুড়ে বিভিন্ন অলিগলিতে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছেন তিনি। ব্যানারে প্রতিমন্ত্রীর প্রচারণার মূল বিষয়বস্তু হিসেবে লেখা রয়েছে- ‘২০০৯ থেকে ২০২২ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের অর্জন। ধন্যবাদ শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কন্যা।’ প্রতিমন্ত্রীর নাম ও ছবি দিয়ে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সরজমিন রাজশাহীতে এমনই এক ব্যানার চোখে পড়লো। 

বিপদে পুলিশকে পাশে পেয়ে মানুষ যেন স্বস্তি বোধ করে তা নিশ্চিত করুন: প্রধানমন্ত্রী
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি দোরগোড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দিতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনগণ যেন বিপদে পুলিশকে তাদের পাশে পেয়ে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক সময়ে নাগরিক সেবার ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে পুলিশি সেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। পুলিশ বাহিনী যেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা বা সন্ত্রাস দমন বা যেকোনো কাজ করতে গেলে জনগণের সহায়তা একান্তভাবে দরকার। গতকাল রাজশাহীতে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা’র প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারদা পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ (অ্যাড.আইজিপি) আবু হাসান মুহাম্মদ তারেক তাকে অভ্যর্থনা জানান। চৌকস পুলিশ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী  খোলা জিপে চড়ে পাসিং আউট প্যারেড পরিদর্শন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ এবং সেরা প্রবেশনারি এএসপিদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। এএসপি ইয়াকুব হোসেন প্যারেড কমান্ডার বা প্যারেড অ্যাডজুট্যান্ট এবং সহকারী প্যারেড কমান্ডার হিসেবে প্রবেশনারি এএসপি শুভ্র দেব কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন। ১২ জন মহিলাসহ ৯৭ জনের শিক্ষানবিশ এএসপি এক বছরের দীর্ঘ প্রশিক্ষণে অংশ নেন। পরীক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশ সায়েন্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সনদও পেয়েছেন। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে এএসপি মো. জাহাঙ্গীর কবির ‘সেরা একাডেমিক’ পুরস্কার, এএসপি মো. সাজ্জাদুর রহমান ‘বেস্ট হর্সম্যানশিপ’, এএসপি শুভ্র দেব ‘বেস্ট ইন ফিল্ড প্রবেশনার’ এবং এএসপি মো. রাসেল রানা ‘সেরা শুটার’ এবং সাকিবুল আলম ভূঁইয়া ‘বেস্ট প্রবেশনার’ পুরস্কার পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এএসপি’র ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের পাসিং আউট প্যারেড উপলক্ষে একটি কেক কাটেন এবং একাডেমিতে একটি জয়তুন গাছের চারা রোপণ, ভিজিটর বইয়ে স্বাক্ষর এবং প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যেকোনো বিপদে পড়লে পুলিশকে পাশে পেলে তারা যেন অন্তত আশ্বস্ত হয়। সেইদিকে লক্ষ্য রেখেই পুলিশ তার পেশাদারিত্ব এবং সহমর্মিতা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ই জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যথার্থই বলেছিলেন, আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ না, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজের দিনে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের আমি অনুরোধ করবো জাতির পিতা যে স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়তে চেয়েছিলেন তা গড়ার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশকে আমরা চাই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে, বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুলিশ বাহিনীকেও স্মার্ট পুলিশ বাহিনী হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। নবীন পুলিশ সদস্যদের শেখ হাসিনা বলেন, এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনারাও আমাদের সাথী। এজন্য আপনাদেরকে যুগোপযোগী কর্মকৌশল গ্রহণ এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status