ঢাকা, ২০ মে ২০২৪, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বিদ্যুৎ উৎপাদন

জোড়াতালি দিয়ে জ্বালানি জোগানোর চেষ্টা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
৮ মে ২০২৪, বুধবার

গ্যাসনির্ভর সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প স্থাপনের ফলে জ্বালানি চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চাহিদা  মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অর্থ এবং জ্বালানির স্বল্পতার কারণে গ্রামাঞ্চলের অনেক জায়গায় লোডশেডিং হয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। ডলার সংকটের কারণে এই খাতের ভোগান্তি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চাহিদা নিশ্চিত করতে নতুন নতুন অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খনন, পরিত্যক্ত কূপ ওয়ার্কওভার ইত্যাদি কার্যক্রমও চলছে। 

দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের কম। বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকছে। সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম উৎপাদন করছে অনেকগুলো কেন্দ্র। দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানির চাহিদা মেটাতে না পারায় এবং জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ও মার্কিন ডলারের জোগান না থাকায় তেল-গ্যাস-কয়লা আমদানিতে ভাটা পড়েছে। গরম বৃদ্ধির সঙ্গে লোডশেডিং বেড়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি গ্রামাঞ্চলের কোথাও কোথাও ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে সরকারের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেনাও দিনে দিনে বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন
সরবরাহ করা বিদ্যুতের দাম নিয়মিত পরিশোধ না করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকারি বেসরকারি এমন প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের দেনা ৪১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এমন অবস্থায় চলতি মওসুমের সামনের সময়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে ডলার সংস্থানের নিশ্চয়তা চাইছেন বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি টাকা পাওনা ছিল। বন্ডসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়ায় এই দেনা এখনও ১১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। তাপপ্রবাহ থাকায় এখন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে কেন্দ্রগুলো। নিয়মিত বিল পরিশোধ না হলে সামনে এই দেনা আরও বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।  

জ্বালানি-বিদ্যুতের সার্বিক বিষয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম মানবজমিনকে বলেন, বিদ্যুতের সক্ষমতা এখন অভিশাপ। দেনা বাড়িয়েছে। জোড়াতালি দিতে গিয়ে মানুষ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। লুণ্ঠনের শিকার হচ্ছে জনগণ। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুতের সক্ষমতা থাকলেও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রামের মানুষ। শহরের মানুষকে একটু খুশি, গ্রামাঞ্চলে ভোগান্তি। এখানেও সমতা নেই।  তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণ তথা জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন আর সরকারের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই ভোক্তারা চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় এলএনজি, কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুত বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রণে রেখে আমদানি ব্যয় কমাতে হবে। সরকার ব্যক্তিখাতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হবে না। সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না। আইন দ্বারা তা নিশ্চিত হতে হবে। দ্বিতীয় তেল-শোধনাগার  কোনো ব্যক্তি মালিকানার সঙ্গে নয়, সরকারের একক মালিকানায় হতে হবে।

চলতি বছরে এপ্রিলে লোডশেডিং বাড়ার কারণ কী জানতে জাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, গ্যাস সরবরাহের কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যেখানে গ্যাসে ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়েছিল, সেখানে ১৫০০ মেগাওয়া কম উৎপাদন হয়েছে। 

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে সক্ষমতার অর্ধেকও উৎপাদন হচ্ছে না। বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮৭-৮৮ কোটি ঘনফুট। গ্রীষ্মে পিডিবি অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট সরবরাহের দাবি জানিয়েছে পেট্রোবাংলাকে। 

কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতা সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট। সেখান থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনসক্ষমতা প্রায় ৭ হাজার মেগাওয়াট হলেও এগুলো থেকে দিনে ১ হাজার মেগাওয়াটের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তেল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছে না। পিডিবি’র কাছে বড় অঙ্কের বকেয়া পড়েছে তাদের। ফলে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতেও খুব বেশি উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না।

গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর:  গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। লোডশেডিং নিয়ে সারা দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে  প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশে কিছু কিছু অঞ্চলে আমাদের কিছুটা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে অনেক জায়গায়। এটি আমরা গত এক মাস ধরে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের বেশকিছু পাওয়ার প্লান্ট, বিশেষত ওয়েল বেইজড পাওয়ার প্লান্টগুলো বন্ধ আছে। সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে চালু করছি। তেলের স্বল্পতা ছিল, অর্থ স্বল্পতা ছিল-এ বিষয়গুলোকে নজরদারি করে আমরা এখন একটি ভালো পরিস্থিতিতে আছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যেন গ্রামাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ যত দ্রুত পারা যায় ব্যবস্থা করতে। আমরা সেটাই ব্যবস্থা করে এখন একটা ভালো অবস্থায় আছি। এর ফলে কি শহরে লোডশেডিং বাড়বে-জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয় না কোথাও লোডশেডিং করে অন্য জায়গায় দেয়ার ব্যবস্থাটা করতে হবে।

পাঠকের মতামত

বিদ্যুতের জ্বালানির যোগান চালু রাখার জন্য দরকার হলে দু একটি মেগা প্রকল্প আপাতত স্থগিত রাখা হউক। বিদ্যুতে উৎপাদন এর চাবি কাটি।

Kazi
৮ মে ২০২৪, বুধবার, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন

মমতাজ আপারে দায়িত্ব দেওয়া হোক।

কবীর
৮ মে ২০২৪, বুধবার, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status