ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

স্কুলে ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনা

ব্যাপক প্রতিক্রিয়া বিকল্প চিন্তা

পিয়াস সরকার
১৯ মে ২০২৪, রবিবার

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি বিজ্ঞপ্তিতে তোলপাড় চলছে শিক্ষা খাতে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে সব মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া ভর্তি ফি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনাসহ তথ্য চাওয়া হয়। জেলা শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে ৪ কার্যদিবসের মধ্যে টাকা জমা দেয়ার তথ্য ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বলা হয়। হঠাৎ এমন নির্দেশনায় বিপাকে পড়েছে বেসরকারি স্কুলগুলো। বেসরকারি স্কুল এই ভর্তির টাকা দিয়েই সারা বছর স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। শিক্ষা বর্ষের প্রায় ৫ মাস পার হওয়ায় ভর্তির টাকার অর্ধেকই খরচ হয়ে গেছে এসব প্রতিষ্ঠানে। এমন অবস্থায় সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেয়ার নির্দেশনা পেয়ে স্কুল সংশ্লিষ্টরা হতবাক হয়েছেন। তারা বলছেন, এই চিঠি নজিরবিহীন। অতীতে কখনো এমন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কথা বলা হলেও তার স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। এমন পরিস্থিতিতে চিঠি পাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে চান আসলে নির্দেশনা বাস্তবায়নে করণীয় কী। 

ওদিকে সমালোচনার মুখে মাউশিও চিঠির বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চিঠিটি প্রত্যাহার এবং নতুন নির্দেশনা দেয়ার চিন্তা করছে মাউশি। আজ এ সংক্রান্ত নতুন চিঠি পাঠানো হতে পারে মাউশি সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কি কারণে ওই চিঠিটি দেয়া হয় তা কেউই স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। কেউ কেউ বলছেন, চলমান আর্থিক সংকটের সঙ্গে এই নির্দেশনার যোগসূত্র থাকতে পারে। গত বুধবার মাউশি’র বিজ্ঞপ্তিটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সহকারী পরিচালক এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের গৃহীত ভর্তি ফি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি কোষাগারে জমাদান সংক্রান্ত চালানের কপি গ্রহণপূর্বক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা আগামী ৪ কর্মদিবসের মধ্যে অধিদপ্তরে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

আমিনুল ইসলাম নামে একজন শিক্ষক বলেন, হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। আমরা একটা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পার হওয়ার পর এই নির্দেশনা মানা কষ্টকর। আমরা যদি পূর্বে থেকে এই নির্দেশনার বিষয়টি জানতাম সেভাবে প্রস্তুতি নিতাম। কোনো আলোচনা, পরামর্শ ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।

রাজধানীর স্বনামধন্য একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক খরচের তো শেষ নেই। এমপিও শিক্ষকদের বেতনের পাশাপাশি একটা অর্থ দিতে হয়। নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন আবার বোনাস দিতে হয়। এর  থেকে বড় খরচ আমাদের বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন। এসব পালনের পর বছরের ৫ মাস চলে যাবার পর এই অর্থ প্রদান করা অসম্ভব। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় দিবসগুলো পালন করতেই হয়। এই দিবস পালনের জন্য আমাদের যে অর্থ প্রয়োজন হয় এটার বড় জোগান আসে ভর্তি ফি থেকে।

হঠাৎ এই নির্দেশনায় কিছুটা বিস্মিত হলেও চিন্তা কম সরকারি বিদ্যালয়গুলোর। ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের সকল তথ্য হালনাগাদ আছে। এগুলো এখন একত্র করে আমরা জমা দেয়ার পরিকল্পনা করছি। এদিকে একই কথা বলেন, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা পারভিন। 

বরিশালের হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফকরুজ্জমান জানান, দুই মাস আগেই সরকার অবসর ও কল্যাণ তহবিলের কথা বলে নতুন ছাত্রদের ভর্তির টাকা থেকে ১০০ টাকা করে নিয়েছে। এখন হঠাৎ করে ভর্তি ফি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার এ সিদ্ধান্ত বজ্রপাতের শামিল। ৬ মাস আগে প্রাপ্ত ভর্তি ফি থেকে শিক্ষকদের বেতন, বোনাস, জাতীয় কর্মদিবস পালন, শিক্ষাসামগ্রীতেই ব্যয় হয়ে গেছে। কোনো প্রকার পূর্ব নোটিশ ছাড়াই, শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে পাস কাটিয়ে এমন পরিপত্রে বিস্মিত হয়েছেন তিনি।

শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মো. রেজাউল হক জানান, শিক্ষা বছরের ৫ মাস পর কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়া ভর্তি ফি সরকারি কোষাগারে জমাদানের পরিপত্রটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এ মুহূর্তে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষেই এ অর্থ জমা দান প্রায় অসম্ভব।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি সুনীল বরণ হালদার বলেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষক নেতাদের পাস কাটিয়ে এতবড় একটি সিদ্ধান্ত নেয়ায় এর বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। অচিরেই এ বিষয়টি সংগঠনের সভায় আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি’র দু’জন কর্মকর্তা জানান, এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে একটা অস্বস্তি বিরাজ করছে। এই চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে তারই প্রতিফলন করা হয়েছে চিঠিতে। তারা আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে নানা অসন্তোষের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। এই বিষয়ে আজ আলোচনা হতে পারে। 
বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষরকারী মাউশির সহকারী পরিচালক এসএম জিয়াউল হায়দার হেনরী মানবজমিনকে বলেন, এটা মন্ত্রণালয় থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে না। প্রতিষ্ঠানগুলোকে ম্যাসেজ দিয়ে জানানো হবে। অর্থের পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো আগে কখনো তথ্য নেই নাই। তাই তথ্যগুলো না আসলে এটি বলা যাবে না। সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাউশি এই চিঠিটি দিয়েছে। আমরা চিঠিটি হুবহু প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রেরণ করেছি। 
 

পাঠকের মতামত

uddogh valo

nasrin
২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবার, ১:১০ অপরাহ্ন

এর পর বাসার জমানো টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে বলবে অপেক্ষা ............

belal
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ১২:১৬ অপরাহ্ন

সরকারের হাতে টাকা নাই। কী করা? করের হার বাড়ানো যাচ্ছে না। এখন ‘যেখানে দেখিবে ছাই’ নীতি অবলম্বন করা ছাড়া গত্যন্তর কী?

রবিন
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

একদম সঠিক পথে আছে মাউশি।ভর্তির সময় উন্নয়ন ফি নামে অভিভাবকদের গলা কাট এখন বলো সব খরচ হয়ে গেছে।উন্নয়ন ফি,আইটি ফি,কারেন্ট, মিলাদ,খেলা ধুলা,হেলথ,স্কাউট,ল্যাব ফি,পিন্টিং ফি এবং আদারস নামে টাকা নেয়।

আসমা
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে যে গুলো গলাকাটা ফিস আদায় করে। অনেক দুর্নীতি হয়ে থাকে এসব ফিস আদায়ে। ফিস দিতে না পেরে অনেক ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা বন্ধ হয়।অনেক আজগুবি নাম উল্লেখ করে ফিস আদায় করে। সরকারের সুন্দর একটা উদ্যোগ এসবের হিসাব নেওয়া।

হারুন
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

এটা ও হিম্দী সিরিয়ালের বুদ্ধি । এসব নাট্যকাররা বাংলাদেশ নিয়ে সার্কাস খেলছে ।

Monir
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

ব্যাংকের ভল্ট খালি করা শেষ, দ্রব্য মূল্যের সিন্ডিকেট করে জনগণের পকেট খালি, এখন স্কুল, কলেজের কোষাগার খালি করার পালা।

নি:স্ব মামুন
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

সহমত

মো সুলেমান হোসেন
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৮:৪০ পূর্বাহ্ন

অভাবে স্বভাব নষ্ট

আইয়ুব
১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৭:১৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status