প্রথম পাতা
বাংলাদেশ ব্যাংককে আল্টিমেটাম সাংবাদিকদের
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৬ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবারব্যাংকিং খাতের লুটপাট, নৈরাজ্য ও অনিয়ম ধামাচাপা দিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সাংবাদিকদের আগের মতো নির্বিঘ্নে প্রবেশাধিকার দেয়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বুধবার ইআরএফ কার্যালয়ে ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে নেতৃবৃন্দকে অবহিতকরণ’ শীর্ষক সভায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাসহ ইআরএফ’র সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ। সাংবাদিকদের নেতাদের এই অবস্থানে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ, নোয়াব ও বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃত্ব।
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে’র একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাজ্জাদ আলম খান তপু, অপর অংশের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ প্রমুখ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ব্যাংক খাত থেকে একজন পি কে হালদার কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাবেন, অথচ কিছু বলা যাবে না- এটা তো হতে পারে না। একজন ব্যক্তি ৭ থেকে আটটি ব্যাংকের মালিক কীভাবে হন, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সাংবাদিকরা। সামনে বাজেট আসছে। এমন এক সময়ে কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে? হলমার্ক কেলেঙ্কারিসহ সব বড় বড় আর্থিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করে সরকারকে সহযোগিতা করেছে গণমাধ্যম।
তিনি বলেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত আমাদের বলেছেন যে, তিনি সাংবাদিক প্রবেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সমাধানে কাজ করছেন। তবে আমাদেরও এ বিষয়টি শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে যে নৈরাজ্য চলছে তারই অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে।
শ্যামল দত্ত আরও বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে আর বসে থাকার সময় নেই। এই আন্দোলনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে আপনাদের সঙ্গে আমার পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিআরইউসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সাংবাদিকদের রিপোর্টগুলো সরকারকে সাহায্য করে। তাই এই আন্দোলন আরও জোরেশোরে চালাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের দাবি আদায় করেই ছাড়বো।
বিএফইউজে’র একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, ব্যাংক রিপোর্টাররা আজ সমস্যায় পড়েছেন, এটা আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দলমতের বাইরে এসে পেশাদারিত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সকল সংগঠনকে সংঘবদ্ধ হয়ে আগাতে হবে। অতীতেও আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করেছি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে এমন একজন গভর্নরকে বসানো হয়েছে, তিনি ওই পদের যোগ্য নন। তার যে দুর্বলতা আছে, সেটি ঢাকার জন্যই তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। বর্তমান গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সূচকেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে দিলেন কীসের ভিত্তিতে? তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটে অবস্থান নিবো। গভর্নরকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে দিবো না। আমাদের অধিকার আদায় করেই আমরা ছাড়বো।
বিএফইউজে’র একাংশের মহাসচিব আব্দুল কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে এখন আড়তদার তৈরি হয়েছে, একজনই অনেক ব্যাংকের মালিক। এ ছাড়া রিজার্ভ চুরি, ভল্টের সোনা চুরির মতো ঘটনার খবর যেন জনগণের সামনে না আসে, তাই চোরদের পাহারা দেয়ার জন্যই এমন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় আমরা বিস্মিত হয়েছি, এর মাধ্যমে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের মতো প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন, আর এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে স্বাধীনতাকে কলুষিত করছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ বলেন, সাংবাদিক যদি বাংলাদেশে থাকে, তথ্য তাকে দিতেই হবে। যখনই তথ্য দিবে না, তখনই লুকোচুরির বিষয় থাকবে বলেই আমরা ধরে নেবো। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে। সাংবাদিকরা কোনো ব্যক্তির জন্য কাজ করে না, তারা পুরো দেশের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক উন্মুক্ত করা না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গেট বন্ধ করে সাংবাদিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ করলে তাদের সমস্যা হওয়ার কারণেই প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
সমস্যার মূল উৎপাটন করা না গেলে ব্যাংকিং খাতের এই অনিয়ম বন্ধ করা সম্বব নয়।
ধরি, এই আল্টিমেটাম বাংলাদেশ ব্যাংক পাত্তা দিল না( অবশ্য পাত্তা দেওয়ার প্রশ্নও উঠে না) তখন কি হবে? সাংবাদিক সমাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন অংশ নয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তারায় ঘুষ চুরি দুর্নীতিতে নিম্নজিত। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে মনে হয় দেখার কেউ নেই। এইসব অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিকের বিষয়েও প্রচুর অভিযোগ শোনা যায়! অসত্য, মনগড়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদের ছড়াছড়ি চারিদিকে !! তাই সবকিছুতেই শুদ্ধি অভিযান নিয়মিত কাম্য। কারো প্রতি যেন আক্রোশ বশত কোন পদক্ষেপ না নেয়া হয়।
শ্যামল দত্ত সমস্যার মূলে যেতে চান না। বাংলাদেশ ব্যাংককে দোষ দিয়ে লাভ কি?