ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

সাত দিন ধরে নিখোঁজ আইনজীবী, ছবিতে দেখা গেল থানায়, পুলিশ বলছে জানি না

মরিয়ম চম্পা
২৯ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

ছবি: সংগৃহীত

সাত দিন ধরে নিখোঁজ আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী আবুল হোসাইন রাজন। ২২শে জানুয়ারি পুরান ঢাকার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন অফিসের উদ্দেশ্যে। মগবাজার আদ-দ্বীন হাসপাতালের সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়    বলে জানিয়েছে পরিবার। এরপর থেকে আর তার খোঁজ মিলছে না। এই আইনজীবীর খোঁজে বিভিন্ন স্থানে হন্যে হয়ে ঘুরছেন তার স্বজনরা। মানবজমিনের হাতে আসা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে রাজন হাতিরঝিল থানা হাজতে রয়েছেন। কিন্তু থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা এ নামের কোনো আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করেনি। তিনি থানায় নেই। হাতিরঝিল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মেজবাহউদ্দিন বলেন, আবুল হোসাইন রাজন নামে কোনো ব্যক্তি, আইনজীবী কিংবা কোনো আসামিকে আমরা গ্রেপ্তার করিনি। এমন কেউ আমাদের থানা হেফাজতে নেই।

বিজ্ঞাপন
মানবজমিনের হাতে আসা হাতিরঝিল থানা হেফাজতে থাকা রাজনের ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না না। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। পুলিশ অস্বীকার করলেও রাজনের পরিবারের দাবি তিনি পুলিশ হেফাজতেই আছেন। রাজনের বাবা মো. ইসমাইল হোসেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। 

তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। গত কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ আইনজীবী রাজনের খোঁজে বাবা ইসমাইল হোসেন এবং স্ত্রী শামীমা সুলতানা ৮ বছর বয়সী একমাত্র সন্তানকে নিয়ে হাতিরঝিল থানায় বেশ কয়েকবার যান। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় তিনি সেখানে নেই।  রাজন আইন পেশার পাশাপাশি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রক্তদান প্ল্যাটফরমের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন বলে দাবি পরিবারের।  পারিবারিক সূত্র জানায়, ওইদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ফোনে মায়ের সঙ্গে শেষবার রাজনের কথা হয়। মাকে ঠিকভাবে খাওয়া- দাওয়া করতে এবং শরীরের যত্ন নিতে বলেন। এরপর তিনি তার কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হন। এ সময় তিনি মগবাজার হয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বিকাল আনুমানিক ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে কোনো এক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলেও রাজন বাসায় না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তার পরিবার। পরবর্তীতে আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিতজনদের বাসায় খোঁজ করা হয়। এ সময় তার মুঠোফোনে ফোন দিলে রিং হলেও কেউ রিসিভ করেনি। রাজধানীর রমনা, পল্টন, মতিঝিল থানাসহ বিভিন্ন থানায় তার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার কিংবা হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি গত কয়েক দিন তারা হাতিরঝিল থানায় গেছেন রাজনের সন্ধানে। সেখানে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা রাজনের কণ্ঠ শুনতে পেয়েছেন। 

 রাজনের বাবা ইসমাইল হোসেন ছেলের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পুলিশে চাকরি করেছি। দেশের সেবা করেছি। ছেলে মেয়েদের সঠিক শিক্ষায় মানুষ করার চেষ্টা করেছি। অথচ শেষ বয়সে এসে এই প্রতিদান পেলাম। তিনি বলেন, নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে থানায় থানায় ঘুরেছি। পরে যখন জানতে পারি তাকে হাতিরঝিল থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে তখন ছুটে যাই। থানায় গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে ছেলের সন্ধান চাই। এ সময় থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছেলে তাদের হেফাজতে আছে এটা স্বীকার করেননি।  রাজনের ছোট ভাই মহিউদ্দিন খান বলেন, ৫ ভাইবোনের মধ্যে রাজন দ্বিতীয়। তিনি আইন বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করছেন। ভাইয়া কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি পরিবার এবং কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। গত ৭ দিন ধরে ভাইয়া নিখোঁজ। তার চিন্তায় পরিবারের সদস্যরা পাগলপ্রায়। বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, আমার ভাই যদি কোনো অন্যায় করে থাকে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত ধারায় গ্রেপ্তার কিংবা আদালতে হাজির করা হোক। তিনি অন্যায় করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার দেখাবে।  রাজনের স্ত্রী শামীমা সুলতানা বলেন, হাতিরঝিল থানায় গেলে আমাকেও আটকের হুমকি দেয় পুলিশ। শামীমা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজন লেখালেখি করতেন। এটাই কি তার অপরাধ কিনা জানি না।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status