প্রথম পাতা
সর্বদলীয় বৈঠকের চেষ্টায় জামায়াত
আহমেদ জামাল
২৪ মে ২০২৫, শনিবার
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজনে তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলের রাজনৈতিক নীতি-নির্ধারণী ফেরামের একাধিক নেতা এমনকি খোদ আমীর ডা. শফিকুর রহমান এ আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যে জামায়াত আমীরের সঙ্গে ঐকমত্য ঘোষণা করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম (পীর চরমোনাই)। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অনুষ্ঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী সমমনা ৫ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের জরুরি বৈঠক শেষে দুই নেতা টেলিফোনে কথা বলেন। এদিকে সর্বদলীয় বৈঠকের ব্যাপারে জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমীরে জামায়াত যে আহ্বান জানিয়েছেন আমরা তা নিয়ে কাজ করছি। ইতিমধ্যে আমরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আজ শনিবার জামায়াতের মজলিসে শূরার বৈঠক আছে। সেখানেও বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। আবদুল্লাহ তাহের বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের তরফে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়নি। দেশের মানুষও চায়না তিনি পদত্যাগ করুন। তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন কেন। সবার চাওয়া সংস্কার ও নির্বাচন। আমরা মনে করি নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ অথবা সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করলে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। সর্বদলীয় বৈঠকের লক্ষ্য উদ্দেশ্যও সেটাই। তিনি বলেন, কোনো কোনো মহল পরিকল্পিতভাবে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে সেটা এখন অনেকটা কেটে গেছে। সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় হবে।
প্রসঙ্গত, গত ক’দিনের গুমোট বাধা রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যের উপস্থিততে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়। বৈঠকে জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানান।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর চরমোনাই)’র আহ্বানে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সমমনা পাঁচ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, এনসিপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, মুফতি সৈয়দ এসহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, আহমদ আবদুল কাইয়ুম, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান, এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ প্রমুখ।
বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং যে কোনো মূল্যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। কোনো কুচক্রি মহল যাতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। আগামীতে দেশ গঠনে এবং দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আরও ঘনিষ্ঠভাবে ঐক্যবদ্ধ কৌশল গ্রহণের বিষয়ে বৈঠকে বিষদ আলোচনা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানে নেতৃবৃন্দ একমত পোষণ করেন। এর আগে দেশের উত্তরবঙ্গে সফররত পীর চরমোনাই চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তার সফর বাতিল করে ওই রাতেই ঢাকায় ফিরে আসেন। বৈঠকে পীর চরমোনাই বলেন, আমরা মুখোমুখি রাজনীতির অশুভ সংস্কৃতির শিকার হয়েছি বারংবার। যা আমাদের রাজনীতিকে সহিংস ও অসহিষ্ণু করে তুলেছে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে একই বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একাধিক এবং পরস্পর বিরোধী মতামত ও অবস্থান থাকতে পারে। আলোচনার টেবিলে, আইনের মাধ্যমে বা পরস্পর সমঝোতার মাধ্যমে এর সুরাহা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কোনো আচরণ করা এবং মুখোমুখি কর্মসূচি নেয়া সমীচীন হবে না। বৈঠকের আলোচনার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. মুহাম্মদ শফিকুর রহমান মুঠোফোনে ঐকমত্য প্রকাশ করেন।