শেষের পাতা
বৈধ ভেন্ডারের সুযোগে অবৈধ জাল স্ট্যাম্পের ব্যবসা
স্টাফ রিপোর্টার
২২ মে ২০২২, রবিবারবৈধ ভেন্ডারের সুযোগে জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রেভিনিউ স্ট্যাম্প বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। এতে সরকার যেমন হারিয়েছে কোটি টাকার রাজস্ব তেমনি গত ৩ বছরে কয়েক হাজার মানুষ এসব কিনে ভোগান্তিতে পড়েছেন। র্যাব-৩ ও এনএসআই যৌথভাবে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা ফরমান আলীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্যটি বের হয়েছে।
গতকাল কাওরান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকায় অধিক লাভের আশায় জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ জনগণের কাছে বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার র্যাব-৩ ও এনএসআই’র যৌথ দল রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফরমান আলী সরকার (৬০), সহযোগী তুহিন খান (৩২), আশরাফুল ইসলাম (২৪) ও মো. রাসেল (৪০)কে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৩ হাজার টি, ৩০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০টি, ২৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৫০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৪০০০টি, ১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ২ হাজার ৫০০টি, ৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প ৬ হাজার ৫০০টি, ২ টাকা মূল্যমানের অনুলিপি স্ট্যাম্প ১ হাজার ৫০০টিসহ মোট ২৪ হাজার ৯০০টি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়, যার মূল্য ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জাল জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে বিক্রি করে অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে আসছে চক্রের সদস্যরা। উদ্ধার করা স্ট্যাপের বিষয়ে তারা কোনো ধরনের কাগজপত্র দেখাতে ও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। গ্রেপ্তার হওয়া ফরমান আলী সরকার কুড়িগ্রাম সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাসের পর ১৯৯৩ সাল থেকে স্ট্যাম্প ভেণ্ডারের ব্যবসায় জড়িত হন। একই অপরাধে ২০১৭ সালেও পল্টন থানায় ফরমান আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিআইডি। ওই মামলায় তিনি কারাভোগ করেছেন। জামিনে বেরিয়ে আবারো একই অপরাধে জড়ান।
অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার তুহিন খান শনির আখড়ার একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করতে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিন-চার বছর ধরে তিনি এ প্রতারণা ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার আশরাফুল ইসলাম লালমনিরহাটের পুটিকাটা সিন্দুরমতি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি এর আগে গ্রামীণফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গত দুই বছর ধরে ফরমান আলীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। গ্রেপ্তার রাসেল নেত্রকোনার কোনাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। তিনি অবৈধ জাল স্ট্যাম্প মতিঝিলের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করে আসছিলেন। তিনিও তিন/চার বছর ধরে এ প্রতারণা ও জাল জালিয়াতিতে জড়িত। রাসেলের নামে রাজধানীর পল্টন থানায় ২০১২ সালের একটি অস্ত্র আইন ও একটি অপহরণের মামলা রয়েছে।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, সরকারিভাবে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড গাজীপুর থেকে সব স্ট্যাম্প সংগ্রহ করার বিধান প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু চক্রটি অবৈধভাবে সব ধরনের জাল জুডিশিয়াল ও নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি স্ট্যাম্প তৈরি, মজুত ও বিক্রি করে আসছিল।