মত-মতান্তর
কোনও কোনও ক্ষেত্রে মূল ধারার মাধ্যমগুলো ফেক নিউজ প্রচার করে
আলী রীয়াজ
(২ বছর আগে) ২০ এপ্রিল ২০২২, বুধবার, ১:৩৯ অপরাহ্ন
সারা পৃথিবী জুড়ে সাংবাদিকতা এবং রাজনীতির জন্যে এখন একটা বড় সমস্যা হছে ‘ফেক নিউজ’ বা ভুয়া খবর। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে, কখনো কখনো একেবারে বানানো বিষয়কে খবর হিসেবে প্রচার করা, অথবা সামান্য সত্যের সঙ্গে অনেক অনেক মিথ্যা জড়িয়ে তৈরি করা খবরকেই আমি ‘ভুয়া খবর’ বলে চিহ্নিত করি। এই বিষয়ে গত কয়েক বছরে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, এই আলোচনা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে উগ্র দক্ষিণপন্থিদের উত্থানের কারণে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থান ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভূমিকার কারণে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে, ট্রাম্প একাই এটা করেননি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে ব্রেক্সিট। ফেক নিউজ প্রচারে সামাজিক মাধ্যম একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে।
ফেক নিউজের বিষয়ে আমাদের এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্যর দিকে নজর রাখা দরকার, এগুলো অত্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সেনশেনাল, আবেগে ভরপুর, বিভ্রান্তিকর অথবা একেবারে তৈরি করা তথ্য। এগুলো প্রচার করা হয় এমনভাবে যেন এগুলো প্রচলিত মূলধারার মিডিয়ায় আসতে পারতো, কিন্তু আসেনি তার কারণ রাজনৈতিক।
মূলধারার মিডিয়ার দুর্বলতা এবং রাজনীতিতে বিরাজমান মেরুকরণ/বিভক্তি ফেক নিউজকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। তদুপরি কোনও কোনও ক্ষেত্রে মূল ধারার মাধ্যমগুলো এই ধরনের ফেক নিউজ প্রচার করে। এই অবস্থায় অনেকেই জেনে অথবা না জেনে ফেক নিউজ প্রচারে শামিল হন, তার ভিত্তিতে মন্তব্য করেন। তবে এই প্রবণতা কেবল অজ্ঞতাপ্রসূত বিষয় নয়, এর পেছেন আছে উদ্দেশ্য।
এইসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে। কিন্তু এই কথাগুলো বলার কারণ এই বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করা নয়। কারণ হচ্ছে আমার দেয়ালে এই ধরণের ফেক নিউজ শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে সকলকে অনুরোধ করা। মন্তব্য হিসেবেই হোক কিংবা ট্যাগ করা হিসেবেই হোল। আমার পোস্টে করা সব ধরনের মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাই না, কিন্তু সব পাঠ করার জন্যে চেষ্টা করি। যে সব ক্ষেত্রে আমি ‘ফেক নিউজ’ শনাক্ত করতে পারি, সেক্ষেত্রে আমি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তা মুছে ফেলার অনুরোধ করি। কিন্তু আগামীতে আমি নিজেই তা মুছে ফেলতে বাধ্য হবো। এগুলো সেন্সরশিপ নয়, এগুলো হচ্ছে ফেক নিউজের প্রচারে অংশগ্রহণ না করার চেষ্টা। সকলের প্রতি অনুরোধ যে কোনও খবর একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করুন, ডকুমেন্ট হলে সেই ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেখুন, অন্যরা এই বিষয়ে মন্তব্য করেছে মানেই তা সত্যি নয়।
আমরা যে সময়ে বাস করছি সেখানে আমাদের সকলের আরও সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট।
(লেখাটি লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)