ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

ব্যাংক ডাকাতি- যুক্তরাজ্য বনাম বাংলাদেশি স্টাইল!

যুক্তরাজ্য থেকে ডাঃ আলী জাহান

(২ বছর আগে) ২০ এপ্রিল ২০২২, বুধবার, ১২:৫৬ অপরাহ্ন

mzamin

১. অনলাইনে কিছু টাকা টান্সফার করার চেষ্টা করছিলাম। খুবই সহজ নিয়ম। নাম, অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং ৬ সংখ্যা বিশিষ্ট sort code নাম্বার হলেই খুব সহজে টাকা টান্সফার হয়ে যাবার কথা। কিন্তু আমার টাকাটি ট্রানস্ফার হচ্ছিল না। ব্যাংকের অনলাইন স্ক্রিনে মেসেজ আসছিল 'something is wrong. Please try again or contact the customer service'.
 

২. কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলাম তখন ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করলাম। খুব বিরক্ত হয়ে পুরো ঘটনা খুলে বললাম। ব্যাপারটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ব্যাংক জানালো টেকনিক্যাল সমস্যাটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে হয়েছে। কাস্টমার সার্ভিস টেলিফোনে থাকা অবস্থায় অনলাইনে ট্রানস্ফার সম্পন্ন করলাম।

 

ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমাকে ১০০ পাউন্ড বা বাংলাদেশি টাকায় ১০২০০ ক্ষতিপূরণ হিসেবে কয়েক মিনিটের ভেতর আমার ব্যাংকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাথে আনুষ্ঠানিক দুঃখ প্রকাশ। ব্যাংকের নাম Halifax. যুক্তরাজ্যের একটি অন্যতম ব্যাংক।

 


 

৩. ৫০০০ পাউন্ড বা বাংলাদেশি ৬ লক্ষ টাকা অন্য ব্যাংকে (UK)  পাঠানোর জন্য ব্যাংক আমাকে কোনো চার্জ করেনি।

বিজ্ঞাপন
এখানে অন্য অ্যাকাউন্টে ব্যাংক ট্রান্সফার করার জন্য কোনো ব্যাংকে গ্রাহককে চার্জ করে না বা করতে পারে না। এখানে প্রাপকের নাম, অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং Sort Code থাকলেই ৫ মিনিটের ভেতর অনলাইনে আপনি টাকা টান্সফার করতে পারেন। করার সাথে সাথেই প্রাপকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে। কিছু কিছু ব্যাংক অতিরিক্ত সর্তকতা হিসেবে আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি মেসেজ পাঠিয়ে টাকা টান্সফার সঠিক কিনা তা জানতে চাইতে পারে।

৪. উপরের ঘটনাটি হচ্ছে যুক্তরাজ্যের। এবার বিভিন্ন সময়ে দাবি করা কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং তুরস্কের চাইতে ধনী বাংলাদেশে আমার ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

৫. বাংলাদেশের বেসরকারি একটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ-টাকা পূবালী ব্যাংকে অনলাইনে ট্রান্সফার করা হয়েছে। ২ লক্ষ টাকার সাথে যোগ হয়েছে ৫৭.৫০ টাকা। একটু খটকা লাগলো। ব্যাংকের ব্রাঞ্চে না গিয়ে অনলাইনে টাকা টান্সফার করেছি, সেজন্য আমাকে বাড়তি ফি দিতে হবে কেন? সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ফোন করলাম। ব্যাখ্যা চাইলাম। উনাদের জবাব, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের ওপর এই চার্জ চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের করার কিছু নেই। Ibanking এর মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করলে প্রতি হাজারে ২৫ পয়সা, সর্বনিম্ন চার্জ ৫ টাকা এবং সর্বোচ্চ চার্জ ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ তো দেখছি দিনে দুপুরে ডাকাতি। এই ফি নির্ধারণ করে ডাকাতি শেষ হয়নি। ফি বা অতিরিক্ত চার্জের উপর আরো ১৫% ভ্যাট যোগ হয়েছে। এই জটিল হিসেবের সহজ সমাধান হলো ২ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার করার জন্য ৫৭.৫০ টাকা অতিরিক্ত চার্জ। এই টাকা যাচ্ছে কোথায়? সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিচ্ছে? নাকি সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে? ব্যাংকগুলো কি  ইচ্ছে করেই স্বাধীনভাবে যা ইচ্ছে তা চার্জ করে যাচ্ছে? গ্রাহকদের পকেট কেটে কি বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে?


 

৬. ব্যাপারটিকে চুরি না বলে ডাকাতি বললাম এই কারণে যে,  আমি দেখতে পাচ্ছি ব্যাংকটি আমাদের টাকা কেটে নিচ্ছে কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। অনলাইনে টাকা টান্সফার করতে গেলে এই অতিরিক্ত টাকা আমাকে দিতেই হবে। এই অতিরিক্ত টাকার যৌক্তিকতা কোথায়? কেন আমাকে এই অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে? 

৭. ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ভীড় না বাড়িয়ে, শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতিরিক্ত কাজ না দিয়ে আমি অনলাইনে টাকা টান্সফার করে কি মারাত্মক ভুল করেছি? তাহলে কেন আমাকে এই অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে? আবার সেই চার্জের উপর ১৫% ভ্যাট দিতে হবে? অনলাইন ট্রানস্ফার করে কি আমি পাপ করেছি? এভাবেই আমাকে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে? 

৮. সন্দেহ হওয়ার কারণে গত কয়েক বছরের স্টেটমেন্ট পরীক্ষা করলাম। পুকুর চুরি কাকে বলে? বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক আমার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছে। সেই মেসেজ পাঠানোর কারণে আমাকে চার্জ করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকে টাকা রাখার অপরাধে আমার সঞ্চয় থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা কেটে নেওয়াও নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম। পুরোটা বছর ধরে নামে-বেনামে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ডাকাতি হয়েছে। এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে তা সরকারের নির্দেশে হয়েছে। 

৯. আসলেই কি বাংলাদেশ ব্যাংক এই ডাকাতি করার অনুমতি দিয়েছে? বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই অনুমতি না দেয়, তাহলে এই ব্যাংক ডাকাতির কোনো তদন্ত হবে? সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- এই অতিরিক্ত চার্জ বা ডাকাতির টাকার উপর আবার ১৫% ভ্যাট? চুরি ডাকাতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের উপর ভ্যাট আরোপ করার নিয়ম সম্ভবত বাংলাদেশেই প্রথম। নব্য  সিঙ্গাপুর এবং কানাডার অর্থনীতির সমান বাংলাদেশের মানুষকে নির্যাতনের কি কোনো শেষ নেই?


 

ডা: আলী জাহান

যুক্তরাজ্য প্রবাসী চিকিৎসক

সাবেক পুলিশ সার্জন, যুক্তরাজ্য

[email protected]

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবদলই সরকার সমর্থিত / ভোটের মাঠে নেই সরকারি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বিরোধীদল

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status