শেষের পাতা
তিন শর্ত প্যারালাল সরকারের সামরিক সহায়তা চায় এনইউজি
মানবজমিন ডেস্ক
২ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবারসামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে তিন শর্ত দিয়েছে মিয়ানমারের বেসামরিক প্যারালাল সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ডুয়া লাশি লা। শর্তগুলো হলো- বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে সেনাবাহিনীকে। রাজনীতি থেকে সরে যেতে হবে তাদের। যে সংবিধানে তাদের অধিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে। এটা মানলেই তবে আলোচনায় বসতে পারেন তারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। জানান, গত বছর ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর সামরিক জান্তা কমপক্ষে ২০০০ গণতন্ত্রপন্থিকে হত্যা করেছে। দেশটিতে প্যারালাল সরকার বলে পরিচিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)-এর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ডুয়া লাশি লা। সাক্ষাৎকারে তিনি মিত্রদের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছেন। তার এ সরকারে আছেন ক্ষমতাচ্যুত অং সান সুচির প্রশাসনের কর্মকর্তা ও অন্যরা।
ওদিকে তাকে ও তার সহযোগী, সহকর্মীদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করেছে সরকার। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে জনগণের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্যারালাল এই বেসামরিক সরকার ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছে। সারা দেশের মিত্র সশস্ত্র গ্রুপগুলো একত্রিত হয়ে পরিচিতি লাভ করেছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে। নিজের সেনাদের সঙ্গে ডুয়া লাশি লা’র ছবি তোলা হয়েছে। তার সেনাদের মধ্যে আছেন সাবেক শিক্ষার্থী, পেশাজীবীরা। তারা সামরিক দমনপীড়নের ভয়ে জঙ্গলের ভেতর আশ্রয় নিয়েছেন। গায়ে আছে ফ্লেক জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট।
ডুয়া লাশি লা বলেন, জানি না কখন আমার জীবনের ইতি ঘটবে। বাঁচা-মরা তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। দেশের জন্য যেকোনো কিছু উৎসর্গ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমি। উল্লেখ্য, গত বছর ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচির কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। তারপর থেকেই মিয়ানমার টালমাটাল। দেশটি গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী গলা টিপে সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।
মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স-এর মতে, যুদ্ধে মারা গেছেন ২০০০ মানুষ। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসামরিক কমপক্ষে ২৫০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই মারা গেছেন প্রতিবাদ বিক্ষোভে দমনপীড়নে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ভেতরেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩ লাখ মানুষ। জাতিসংঘ বলেছে, সামরিক হামলা যুদ্ধাপরাধ হয়ে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে সামরিক জান্তার বক্তব্য চাইলে তারা তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর আগে তারা বলেছে, বিমান হামলায় তারা কোনো বেসামরিক স্থাপনা বা বেসামরিক জনগণকে টার্গেট করে না। তাদের অপারেশন হলো সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। ডুয়া লাশি লা বলেন, সরকারবিরোধী যোদ্ধারা এ সময়ে প্রায় ২০ হাজার সেনাসদস্যকে হত্যা করেছে। তবে এই সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। তিনি বলেন, আমাদের হাতে যদি বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র থাকতো, তাহলে ৬ মাসের মধ্যে বিজয়ী হতাম। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ থেকে যে সহায়তা পাচ্ছে ইউক্রেন, আমরা যদি একই সমর্থন পেতাম তাহলে জনগণের কষ্ট আকস্মিকভাবে শেষ হয়ে যেতো।
পশ্চিমা দেশগুলো যখন এনইউজি’কে সমর্থন দিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক কমান্ডার ও কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তখন কিন্তু তারা বিরোধীদের জন্য সামরিক সহায়তা দেয়নি। তারা বলেছে, আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ানই এই সমস্যা সমাধানে উত্তম জায়গা। গত মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সরকারপ্রধানরা মিয়ানমারকে সতর্ক করেছে এই বলে যে, শান্তি পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে না পারলে তাদেরকে আসিয়ান থেকে বের করে দেয়া হতে পারে। এ অবস্থায় বিরোধীদের এবং নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোর সঙ্গে কথা বলা প্রত্যাখ্যান করেছে সেনাবাহিনী। ডুয়া লাশি লা বলেন, সমঝোতার দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি।