মত-মতান্তর
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষকে আগে সালাম দিলে প্রেস্টিজ হ্যাম্পার হয়ে যাবে!
কাজী রাকিব উদ্দীন আহমেদ
(১ বছর আগে) ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ৩:২৬ অপরাহ্ন

আমি একদিন লিফটে প্রবেশ করার সময় খেয়াল করলাম লিফটের ভেতরে এক ব্যক্তি খুব কাঁচুমাঁচু হয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছেন। একজন শ্রমজীবী মানুষ বলেই আমার মনে হল। আমাদের বিল্ডিং-এ কোন ফ্ল্যাটে রেনোভেশনের কাজ চলছে, সেখানে তিনি কর্মরত ছিলেন বলেই ধরে নিলাম।
যাই হোক, আমি লিফটে প্রবেশ করেই উনাকে "আসসালামুয়ালাইকুম" বললাম। লিফটে তৃতীয় কোন মানুষ ছিলেন না। উনার কাছ থেকে কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না। লিফটের এক পাশে দাঁড়িয়ে একটু জোর গলায় বললাম "আসসালামু আলাইকুম"। উনি কিছুটা কম্পিত কন্ঠে আমাকে উত্তর দিলেন, "অলাইকুম আসসালাম"।
এটি বুঝতে বাকি রইল না যে উনি আমাকে ভয় পেয়ে প্রথমে কোন উত্তর দেননি। কেননা সাধারণত শ্রমজীবী মানুষদের আমরা সালাম দেই না, তাদের কাছ থেকেই আমরা সালাম পেতে অভ্যস্ত।
এরপর প্রায় দুই মাস আমি বিভিন্ন সময়ে বিল্ডিং পরিচ্ছন্ন কর্মী, বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কর্মরত খন্ডকালীন সময়ের গৃহকর্মীগণ, পানির লাইন মিস্ত্রী, কাঠের মিস্ত্রী, ইলেকট্রিক মিস্ত্রী প্রমুখদের কোথাও দেখলেই প্রথমেই "আসসালামুয়ালাইকুম" বলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
মাঝেমধ্যে দুই-একজন আমার দিকে হতভম্বের মতো তাকিয়ে ছিলেন। হয়তো মনে করেছেন "এই ব্যাটা পাগল নাকি? হ্যেয় আমারে সালাম দ্যায় ক্যা ?"
প্রায় মাসখানেক পর আমি তাদের কাছ থেকে প্রায় সাথে সাথেই রেসপন্স পাওয়া শুরু করলাম। এখন অনেকের কাছ থেকে খুব দ্রুতই সালাম
পেয়ে যাই আমি, আমি বলার সুযোগ পাওয়ার আগেই।
আমরা অনেকেই জামাতে নামাজ পড়ি, প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াত করি এবং ইসলামের হুকুমগুলোকে সঠিকভাবে পালন করার কাজে যারপরনাই চেষ্টা করি। কাল থেকেই আমরা রোজা রাখা শুরু করবো ইনশাআল্লাহ। আজ রাতেই তারাবি শুরু হবে।
কিন্তু সেই আমরাই আবার মনের মধ্যে একটি বৈষম্যমূলক আচরণকে সযত্নে লালন-পালন করি যে, শ্রমজীবী মানুষ বা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষকে আগে সালাম দিলে আমার প্রেস্টিজ হ্যাম্পার হয়ে যাবে।
পবিত্র কুরআন বা সুন্নত পালনের কোন রেফারেন্সে কোথাও কি কেউ দেখাতে পারবেন যে বয়সে ছোটদের বড়দেরকে আগে সালাম দিতে হবে বা নিম্নপদস্থ মানুষটি উচ্চপদস্থকে প্রথমে সালাম দিবে অথবা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষটি আগে সালাম দেবে?
না।
আসুন না, আমরা সত্যিকারভাবে আমাদের প্রেস্টিজকে একটু পাংচার করে ইসলামেরই সুন্দর বাণীকে আজ থেকে প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করি।
বিশ্বের সব ঐশী বাণীগুলোর মধ্যেই এই বক্তব্যটি এসেছে, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল-মজলুম মানুষরাই বিচারের দিনে মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য আগে পাবেন। আত্মগরিমা বহনকারী এবং অহংকারীদের লাইন অনেক লম্বা হবে এবং বিশেষ ক্ষমার (special pardon) ব্যবস্থা না হলে তাদের কঠিনতম বিচার থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এই পবিত্র রামাদান হোক আমাদের সঠিক যাত্রার বাহক। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করুন এবং সঠিক পথে থাকার তৌফিক দান করুন।
রামাদান কারিম!
[লেখকঃ সিইও এন্ড ফাউন্ডার, আমেরিকান বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট এক্সিলেন্স (এবিসিডিই)। লেখাটি তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া]