শেষের পাতা
স্থানীয় রাজনীতির হালচাল- ৪
ফরিদপুরে বিভেদ আওয়ামী লীগে, ঐক্য নেই বিএনপিতেও
মাহাবুবুল ইসলাম পিকুল, ফরিদপুর থেকে:
২৫ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবারফরিদপুরে আওয়ামী লীগে বিভেদ এখন চরমে। বহিরাগতদের অযাচিত হস্তক্ষেপে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব বড় আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন এ দলের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে ঐক্যের অভাবে ঘাটে ঘাটে মার খাচ্ছে জেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। ফরিদপুরের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কাছে জিম্মি ছিল ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় জেলার তৃণমূল নেতারা এক কাতারে ছিল মোশাররফ পতনের প্রশ্নে। জেলার সাঁড়াশি অভিযানে মোশাররফ যুগের পতন হয়েছে কিন্তু দলের কতোটুকু লাভ হয়েছে সেটা একমাত্র এ এলাকার মানুষই জানে। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে আবার শুরু হয় বিভেদ। চেয়ারের আশায় একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে পড়ে। সামসুল হক ভোলা, ফারুক হোসেন, বিপুল ঘোষ, সুবল সাহা, অমিতাভ বোষ, দিপক মজুমদার, জিয়াউল হাসান মিঠুসহ অনেকেই সভাপতি সাধারণ সম্পদক নিয়ে লড়াই করে বিভক্ত হয়েছেন।
দল সিদ্ধান্ত দিয়েছে সভাপতি শামিম হক আর সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আরিফ। এরপর শামিম হক আরিফকে নিয়ে দল গোছাতে শুরু করেছে।
শামিম হক বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে আমি পদ পাওয়ার পর থেকেই দল গোছাতে মাঠে কাজ করছি। বড় দলে বিভেদ একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি তবে সেটা জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি আমার দলের নেতাদের নিয়ে যেভাবে কাজ করছি তাতে আমার বিশ্বাস ফরিদপুরের ৪টি আসনই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারবো। এদিকে দীর্ঘদিন ঘরমুখো ছিল জেলা বিএনপি। মাঝে মাঝে ঝটিকা কর্মসূচি দেখা গেলেও বড় ধরনের কর্মসূচি অনেকদিন ছিল না দলটির। কর্মী বিমুখ হয়ে পড়েছিল জেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন। নিজস্ব কার্যালয় পর্যন্ত ছিল না তাদের। মামলা-হামলায় জেলায় থাকাই ছিল তাদের দায়। একাধিক মামলায় কারাবাস করতে হয়েছে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসাকে। তার ওপর হামলা করা হয়েছে একাধিকবার। কারাবরণ করেছেন, সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন, যুগ্ম সম্পাদক জুলফিকার হোসেন জুয়েল, আফজাল হোসেন খান পলাশ, জেলা যুবদলের সভাপতি রাজিব হোসেন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ শত শত নেতা হামলা-মামলায় কারাভোগ করেছে। সম্প্রতি জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসাকে আহ্বায়ক ও একে কিবরিয়া স্বপনকে সদস্য সচিব করা হয়। সেই সঙ্গে এএএম কাইউম জঙ্গিকে ফরিদপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক, গোলাম মোস্তাফা মিরাজকে সদস্য সচিব করার পর জেলা বিএনপি আস্তে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ১২ই নভেম্বর ফরিদপুরে আনুষ্ঠিত হয়ে গেল দলটির বিভাগীয় সমাবেশ। সমাবেশে জনসমাগম নেতাদের আশাবাদী করেছে, অন্যদিকে তৃণমূল চাঙ্গা হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা বলেন, এই মুহূর্তে স্বৈরাচার সরকারের পতন দরকার। এজন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি। আশা করছি, আমাদের আন্দোলন সফল হবেই। ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বলেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো দল নির্বাচনে অংশ নেবে না। দেশের জনগণ ভোটের অধিকার হারিয়েছে। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী ১৪ বছর দেশ চালিয়ে এখন বলছেন দুর্ভিক্ষের কথা। হাজার কোটি টাকা পাচার, দুর্নীতি আর লুটপাটের কথা জনগণ জেনেছে। তারা তার জবাব ভোটের মাধ্যমে দেবে। তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের দাবি না মানলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবো।
(হবিগঞ্জের রাজনীতি নিয়ে পড়ুন আগামীকাল)