ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

টিভি’র সেই রমরমা ব্যবসা নেই, জার্সি পতাকার চাহিদাও কম

নাজমুল হুদা
২২ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনার শেষ নেই। গত রোববার কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা উঠেছে। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই ফুটবল জ্বরে কাঁপছে দেশ। এবার সেই উন্মাদনার রেশ নেই টিভির বাজারে। জার্সি কিংবা পতাকার বাজারেও চাহিদা কমেছে। এতে আগের বিশ্বকাপের চেয়ে এবার মন্দা সময় পার করছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষ চিন্তিত। মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা নেই। তাই টিভির মতো বিলাসবহুল পণ্য কেনার আগ্রহ হারিয়েছে মানুষ। এতে এবারের বিশ্বকাপে টিভি বিক্রির হার আগের চেয়ে নিম্নমুখী। গত বিশ্বকাপের চেয়ে বেচা-বিক্রি নেমেছে ৫০ শতাংশের নিচে। এ ছাড়া জার্সি কিংবা পতাকার দোকানে মানুষের আনাগোনা থাকলেও তা আগের চেয়ে কম। তাই বিশ্বকাপে মন্দা সময় পার করছেন তারাও। গতকাল রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, বসুন্ধরাসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুম ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেল। এ বছর বিশ্বকাপে ব্যবসায় মন্দা যাওয়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কথা জানান। তারা বলছেন, মানুষ এখন ব্যয় কমিয়ে চলার চেষ্টা করছে। যাদের ঘরে পুরনো টিভি আছে তারা নতুন করে খরচ বাড়িয়ে টিভি কিনতে চাইছেন না। এমনকি আগের বিশ্বকাপে কারও ঘরে ছোট টিভি থাকলেও বড় টিভি কেনার জন্য শো-রুমে আসতেন। এ বছর তেমন ক্রেতার সংখ্যাও কম। গুলিস্তান ইলেক্ট্রো মার্টের শো-রুম ম্যানেজার মামুন মিয়া বলেন, সামনে কি হবে তা নিয়ে মানুষ এখন চিন্তায় আছে। যাদের টাকা আছে তারাও এখন বড় ব্যয় করতে চাচ্ছে না। এতে আমাদের বিক্রি কমেছে। এ ছাড়া আমাদের দেশের বাইরে থেকে টিভি আনতে হয়। ডলার খরচ বেশি হওয়ায় এখন টিভির দামও বেশি। তাই মানুষ এখন টিভি কেনায় আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। আমাদের ক্রেতা কম আসছে। একই মার্কেটের অন্য একটি কোম্পানির শো-রুম ম্যানেজার স্বপন বলেন, আগের বিশ্বকাপে আমাদের দোকানে উৎসবমুখর ছিল। অনেক বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এবার সেই উৎসবমুখর পরিবেশ নেই। মানুষের আনাগোনাও কম। আমাদের এবার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি। 

বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাজধানীতে সনি, এলজি, সিঙ্গার, ওয়ালটন, মিনিস্টার, ট্রান্সটেক, স্যামসং, ভিসতাসহ নানা ব্র্যান্ডের টেলিভিশনে মূল্যছাড় দেয়া হচ্ছে। তারপরও ক্রেতাদের আনাগোনা নেই বলে জানান বিক্রেতারা। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের র‌্যাংগস ইলেক্ট্রনিকসের সনি শো-রুমের ইনচার্জ বলেন, বিশ্বকাপে আমরা বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছি। কেউ চাইলে আমাদের কাছে পুরাতন টিভি দিয়ে নতুন টিভি রিপ্লেস করে নিতে পারবে। কিন্তু তারপরও মানুষের টিভি কেনার তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। গত বিশ্বকাপের সঙ্গে এবারের তুলনা করে মেহেদী হাসান বলেন, আগে দেখা যেত বিশ্বকাপ আসলে একটু বড় স্ক্রিনের টিভি কেনার জন্য আসতো মানুষ। কিন্তু এখন বাসায় যে টিভি আছে সবাই সেটাই ব্যবহার করছে। মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। আগের বিশ্বকাপে একদিনে ২০ লাখ টাকার মতো বিক্রি হতো। কিন্তু এবার তার অর্ধেকও হচ্ছে না। গত শনিবার ১০ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিন তাও হয় না। মানুষ এখন অতিরিক্ত খরচ করতে চায় না।

এদিকে জার্সি আর পতাকা বিক্রির দোকানগুলোর বিক্রেতারাও আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। প্রতি বছর বিশ্বকাপ শুরুর আগে স্টেডিয়াম মার্কেট ও বিভিন্ন বিপনিবিতানে উপচে পড়া ভিড় থাকে। তবে এবার মানুষের চাপ তুলনামূলক কম বলে জানান বিক্রেতারা। তবে বিশ্বকাপ শুরুর সঙ্গে মানুষের চাপ আরও বাড়বে বলে আশা তাদের। দোকানিরা জানান, বিশ্বকাপ শুরুর অন্তত এক মাস আগে থেকেই জার্সি বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তবে এ বছর জার্সির দামও কিছুটা বেশি। তাই অনেকেই জার্সি কিনতে এসে বাজেটে না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে আবার মার্কেটের বাইরে ফুটপাথ থেকে কম দামে কিনে নিচ্ছেন। 

গুলিস্তানের জার্সি বিক্রেতা রাহেল মিয়া বলেন, জার্সির বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু গত বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করলে কম। তখন জার্সির দাম কম ছিল। মানুষের কাছে টাকা ছিল। বেশি কিনছে। কিন্তু এখন জার্সির দাম বেশি। মানুষ বেশি দাম দিয়ে কিনতে চাচ্ছে না। যারা একটু যুবক বয়সের তারাই বেশি কিনছে। নিউ মার্কেটের মৌসুমি জার্সি বিক্রেতারা জানান, ফুটবল ও ক্রিকেট বিশ্বকাপ এলেই কেবল তারা জার্সি বিক্রি করেন। তবে বিশ্বকাপে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলের জার্সি বেশি বিক্রি হয়। যদিও এ বছর তাদের আশানুরূপ বিক্রি হয়নি বলেও জানান। খেলা জমতে শুরু করলে জার্সি বিক্রিও বাড়বে বলে আশা করে নিউ মার্কেটের মৌসুমি জার্সি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, গতকাল থেকে বিক্রি একটু বেড়েছে। এর আগে তেমন বিক্রি হয়নি। সামনে কয়েকদিন ভালো বিক্রি হবে। এরপর আবারো বিক্রি কমে যাবে। ফুটবল বিশ্বকাপে দেশে সবচেয়ে বেশি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জার্সি বিক্রি হয় উল্লেখ করে রবিন মিয়া বলেন, আমাদের এই দুই দেশের জার্সিই বেশি চলে। জার্মান, ফ্রান্স আর ইতালির জার্সিও আছে। কিন্তু সেগুলোর ক্রেতা খুব কম।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status