শেষের পাতা
রাজধানীতে দুই আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুন ২০২৫, সোমবার
‘জুলাই প্রবাসী যোদ্ধা’ স্বীকৃতিসহ চার দফা দাবি নিয়ে গতকাল সকালে যমুনা অভিমুখী বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীরা। একই সময়ে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া সব প্রার্থীকে সনদ দেয়ার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছেন নিবন্ধন পরীক্ষায় বাদপড়া পরীক্ষার্থীরা। এসময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী রাস্তা অবরোধ করে রাখায় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ।
‘জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, জেলফেরত প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা’ ব্যানারে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে রাজধানীর পরীবাগ মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন শতাধিক প্রবাসী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কারণে দেশে ফেরত এসব প্রবাসীরা নিজেদের ‘জুলাই প্রবাসী যোদ্ধা’ দাবি করে তার স্বীকৃতিসহ চার দফা দাবি নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মিছিল নিয়ে রওনা হন। তাদের মিছিল যমুনা’র অদূরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রাজসিক মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এসময় মূল সড়কের ওপরই অবস্থান নেয় এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। এতে মুহূর্তের মধ্যেই শাহবাগ টু বাংলামোটর সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারীরা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আমিরাতের কারাগার থেকে ১৮৯ জন দেড় থেকে চার মাসের মধ্যে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু একই মামলায় এখনো ২৫ জন প্রবাসী দীর্ঘ নয় মাস ধরে আবুধাবির আল সদর জেলে বন্দি। এ ছাড়া আমিরাতের বিভিন্ন সিআইডি অফিসে শতাধিক প্রবাসী বন্দি আছেন। তারা বলেন, আমিরাতসহ অন্যান্য দেশের ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তারা বলেন, ‘জুলাই ২৪ আন্দোলনে’ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের আবার ফেরত পাঠাতে সরকার নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে। কারাবাস শেষে দেশে ফিরে তারা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছেন, পেশা হারিয়েছেন, পরিবার নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। তাই আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের চার দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। প্রধান উপদেষ্টা বা সরকারের কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।
নিবন্ধনধারীদের আন্দোলন: অন্যদিকে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া সব প্রার্থীকে সনদ দেয়ার দাবিতে গতকাল সকাল ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন বাদ পড়া পরীক্ষার্থীরা। প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী রাস্তা অবরোধ করে রাখায় তারা পুরো এলাকায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে তিনজনের সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে পুলিশ। এরপরও রাস্তা না ছেড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপরও রাস্তা না ছাড়ায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ- ডিএমপি’র রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জিসানুল হক বলেন, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন মৌখিক পরীক্ষায় ৮৩ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ২০ হাজার পরীক্ষার্থী ফেল করেছেন। এখন ওই সব পরীক্ষার্থীরা দাবি করছেন-তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তাদেরকে সনদ দিতে হবে। তারা ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় রাস্তা বন্ধ করে রেখেছিলেন। এতে অফিসগামী মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। জনদুর্ভোগ কমাতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়েছে।