শেষের পাতা
দাবি আদায়ে ঢামেক শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জুন ২০২৫, সোমবার
নিরাপদ আবাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলেজের হল পরিদর্শনে আসার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। বলেছেন, দাবি বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ না নিলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন এবং কলেজ প্রশাসনের একতরফা হলত্যাগের নির্দেশনা মানবেন না। গতকাল কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাউকে রাখতে চাই না। তবে কিছু শিক্ষার্থীর মনোভাব ও অসহযোগিতাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈঠকের পর মিলন চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষার্থীরা জানান, দিনের পর দিন তারা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে জীবন বিপন্ন করে থাকছেন, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর সমাধানের পরিবর্তে কেবল তাদের হল ছেড়ে দিতে বলছে। ঢামেকের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ডা. ফজলে রাব্বী হলের আবাসিক ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, অনেকদিন ধরে নিরাপদ আবাসনের জন্য আন্দোলন করছি। হলের ভগ্নদশা দেশবাসী দেখেছে। কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম, কিন্তু সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস পাইনি। বরং আমাদের বারবার বলা হয়েছে হল ছেড়ে দিতে। তিনি বলেন, আমরা এখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বলছি ২৩শে জুন দুপুর ১২টার মধ্যে তিনি যেন তার প্রতিনিধিদলসহ ঢামেকে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন এবং সমস্যার বাস্তব সমাধান দেন। অন্যথায় আমরা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবো। এক প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে হল ছাড়তে হবে, কিন্তু সেখানে কোথাও লেখা নেই যে, ভবনের সংস্কারের জন্য এটি করা হচ্ছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আমাদের আন্দোলন দমন করতেই এই নির্দেশনা। আমরা এটা মানছি না। যেহেতু সংস্কার হচ্ছে না, আমরাও হল ছাড়ছি না। তিনি বলেন, এই হলে থাকতে গেলে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। যেকোনো সময় ভবন ভেঙে পড়তে পারে। এর দায়ভার তখন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকেই নিতে হবে। কারণ এখনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে সেটা দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনার বিপরীতে শিক্ষার্থীরা আগেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা হল ত্যাগ করবেন না। গতকাল ঘোষণায় সেই সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, যেহেতু ভবনের সংস্কার বা বিকল্প আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, সেহেতু আমরা আমাদের হল ছাড়ছি না। আন্দোলন থামছে না।
প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহ ধরে ঢামেক শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের মূল দাবিগুলো হলো-দ্রুত বাজেট পাস করে নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, নতুন ভবন চালু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা, নতুন একাডেমিক ভবনের বাজেট অনুমোদন, পৃথক বাজেট ও বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ এবং প্রকল্পের অগ্রগতি দেখভাল করতে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি। কলেজ কর্তৃপক্ষ গতকাল এক আদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে এবং আজ ২২শে জুন দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ে এবং তারা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে অধ্যক্ষের দপ্তরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাউকে রাখতে চাই না। তবে কিছু শিক্ষার্থীর মনোভাব ও অসহযোগিতাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধ্যাপক কামরুল আলম বলেন, ঢাকা মেডিকেলের পরিত্যক্ত ভবনে কোনো শিক্ষার্থীর থাকার কথা নয়। সেই ভবন গত সাত মাস আগে গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে, তারও আগে থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে আসছি, যেন তারা ভবনটি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে আসে। অধ্যক্ষ ডা. কামরুল আলম বলেন, পরিত্যক্ত ভবন বাদ দিয়েও আরও কয়েকটি হল আছে, সেগুলো পরিত্যক্ত নয়। সেখানে ছাত্ররা থাকে। সিট রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, কে কার সঙ্গে রুম শেয়ার করবে, এগুলো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এক রুমে সর্বোচ্চ দুই-তিনজনের বেশি থাকতে রাজি নন। অথচ মিলেমিশে থাকতে চাইলে পরিত্যক্ত ভবন এবং গণরুম ছাড়াই সব শিক্ষার্থীরাই সুন্দর করে থাকতে পারেন। সবাই যদি একে অন্যকে একটু সহানুভূতির চোখে দেখতো, তাহলে কোনো সংকট থাকতো না। কারণ, আমরা হিসাব করে দেখেছি, নতুন ব্যাচসহ ছয়টি ব্যাচে আমাদের ছাত্রসংখ্যা ৭৫৫ জন, আর পরিত্যক্ত ভবন ও গণরুম বাদ দিলেও বাংলাদেশি মান অনুযায়ী আমরা ৭৬৬ জনকে সিট দিতে পারি। সুতরাং সিটের ঘাটতি নেই। হ্যাঁ, আমরা এখন বিদেশি স্ট্যান্ডার্ডে যেতে পারবো না- যেখানে একজন ছাত্র একটি রুম পায়। বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু ন্যূনতম নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে আমরা আন্তরিক।
পাঠকের মতামত
অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি রাতারাতি জ্বালানো বানান যাবে না। তবে সংস্কারের কাজ শুরু হয় সে ব্যবস্থাটা লিখিত হবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন ছিল আলোচনা সাপেক্ষে। অযথা জটিলতা না করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমস্ত কাজই দেখা যাচ্ছে খুব হয় অবহেলিত নয় অত্যন্ত জটিল জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট সপ্তাহের পর সপ্তাহ বন্ধ ছিল সেবা পায়নি। কাজেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের প্রয়োজনে পরিবর্তন সাপেক্ষে দায়িত্বশীল লোকদের মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে।