শেষের পাতা
সিলেট অঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৫ মে ২০২২, রবিবার
সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। সেই সঙ্গে গত দুইদিন ধরে সিলেটেও হচ্ছে বৃষ্টি। এতে করে নদ-নদীর পানি অনেক এলাকায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে সিলেটে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মাঝারি ধরনের বন্যা হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। এ ছাড়া, সকালের দিকে জকিগঞ্জের অমলসীদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জৈন্তাপুরের সারি, গোয়াইনঘাটের পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সিলেটে গত দু’দিন ধরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ১৯শে মে পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। সিলেটের উজানে ভারতের শিলংয়ের পাহাড়ি এলাকায়ও একই ভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম দিকে ফ্লাশ ফ্লাডে পড়েছিল সিলেট। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল সিলেট ও সুনামগঞ্জের বোরো ফসল। পরে অবশ্য ঢল থেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গত তিন দিন ধরে সিলেটে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকেই পানি বাড়তে থাকে গোয়াইনঘাটের সীমান্তবর্তী এলাকায়। বৃহত্তর জাফলং এলাকা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায়। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তবে শনিবার সকালের দিকে পানি নেমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে জৈন্তাপুরে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিখোঁজ হয়। সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের কারণে উজান থেকে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে সিলেটে। এতে করে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ এলাকার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সারি- গোয়াইনঘাট সড়ক ডুবে যাওয়ায় গতকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
নগরে জলাবদ্ধতা: টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও পানি উপচে ঢুকে পড়ছে বাসা-বাড়িতে। এতে করে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। তবে- সিলেট সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন; যেখানেই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে, সেখানে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে পানি অপসারণের কাজ শুরু করেছেন। নগরীর পাঠানটুলা সিলেট-সুনামগঞ্জ রুট। নিচু এলাকা। প্রতি বৃষ্টির মৌসুমে জলজট দেখা দেয় ওই এলাকায়। শনিবার দুপুরে পাঠানটুলা এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সড়কে পানি জমে হাঁটু পরিমাণ হয়ে যায়। এতে করে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে সিএনজি, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস সহ হালকা যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। আজাদ মিয়া নামে এক সিএনজি অটোরিকশাচালক জানিয়েছেন, বেলা ১১টার পর থেকে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। রাস্তার পানি উপচে আশপাশের এলাকায়ও ঢুকে পড়ে। এতে পার্শ্ববর্তী দোকানগুলোতেও পানি ঢুকে যায়। কয়েকটি বাসার নিচ তলায়ও পানি জমে। সিএনজি অটোরিকশা সহ হালকা যানবাহন ওই এলাকা দিয়ে পাড়ি না দিয়ে মদিনা মার্কেট হয়ে চলাচল করে। গত দু’দিন ধরে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা লেগেই আছে বলে জানান আজাদ মিয়া। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, খবর পেয়ে দুপুরের দিকে তিনি সহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা যান। পাঠানটুলা ও লাভলী রোডে পানি জমেছিল। ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, নগরের উত্তর এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা নেই। দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যাচ্ছে। তবে দক্ষিণ সুরমায় বাবুল নামে এক ব্যক্তি বাঁধ দিয়ে পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ কারণে দক্ষিণ সুরমায়ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পরে শ্রমিক দিয়ে সেই বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। সিলেট শহরে জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রায় ৩শ’ শ্রমিক কাজ করছে বলে জানান নুর আজিজুর রহমান। এদিকে সিলেট নগরীর নাইওরপুল, শিবগঞ্জ, হাওয়াপাড়া সহ কয়েকটি এলাকায়ও দুপুরের দিকে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সিটি করপোরেশনের শ্রমিকরা পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছেন। তবে নগরের দক্ষিণ অংশের কয়েকটি এলাকায় ড্রেনেজ কাজ চলার কারণে জলাবদ্ধতা প্রকট হয়েছে। এতে করে বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ।
৫ উপজেলায় ৭৯ টন চাল বরাদ্দ: প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ৫ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৭৯ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলাগুলো হলো- সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। টিলা ধসে নিহত ১: সিলেটের গোলাপগঞ্জের চক্রবর্তী পাড়ায় টিলা ধসে নিহত হয়েছে এনজিও কর্মী অপুরুদ্ধ পাল। এ সময় তার ভাই পাপ্পু পাল আহত হন। নিহত অপু পালের পরিবারের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা সহায়তা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান এই তথ্য জানিয়েছেন।