শেষের পাতা
সাকিবে স্বস্তি প্রস্তুত বাংলাদেশ
ইশতিয়াক পারভেজ, চট্টগ্রাম থেকে
১৫ মে ২০২২, রবিবার
চট্টগ্রামের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। গেল এক সপ্তাহ ধরে চোখ রাঙাচ্ছে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। তবে শেষ পর্যন্ত লুকোচুরিই করে গেছে আকাশের মেঘ। অন্যদিকে একই পরিস্থিতি ছিল টাইগার শিবিরেও। সাকিব আল হাসান খেলবেন নাকি খেলবেন না তা নিয়ে জমে উঠেছিল চরম নাটকীয়তা। অবশেষে গতকাল বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ জানালেন তিনি আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের একাদশে থাকছেন। শুধু তাই নয়, সাকিব টেস্ট খেলবেন কিনা এ নিয়ে দেশের ক্রিকেটে নাটক কম নয়। সবশেষ ১১ ম্যাচের মাত্র তিনটিতেই তার খেলার সুযোগ হয়েছে। কখনো ব্যক্তিগত ও ইনজুরির কারণে, আবার পারিবাকি সমস্যায় টেস্ট দলে তার আসা যাওয়া লেগেই ছিল। সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকায় তার খেলা নিশ্চিত থাকলেও পারিবাকি কারণে খেলা হয়নি। এবার করোনার দল থেকে ছিটকে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ফিরেছেন । শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ম্যাচে তাকে বাদ দিয়ে পরিকল্পনা হলে এবার তাকে নিয়ে তা করতে হচ্ছে। তাকে নিয়ে এমন অনিশ্চিতায় দল বা একদশ নিয়ে পরিকল্পনা করা যে ভীষণ কঠিন। তবে কেটেগেছে অনিশ্চয়তার মেঘ। তার ফেরার স্বস্তি নিয়েই প্রস্তুত বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক এমনটাই জানলেন গতকাল ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে। তিনি বলেন, ‘এগুলো (সাকিবের হুট করে আসা) পুরোপুরি চিন্তার ওপর (নির্ভর করছে), আপনি কীভাবে চিন্তা করবেন। যদি এসব পরিবর্তনে সমস্যা মনে করি তাহলেই সমস্যা হবে। আমি যদি চিন্তা করি সমস্যা হবে না, আসলেই হয় না। দক্ষিণ আফ্রিকায় তো উনি খেলতেন। পারিবারিক সমস্যা থাকায় খেলতে পারেননি। এখানেও তো খেলার কথা ছিল, ইনশাআল্লাহ্? কালও খেলবেন। করোনার কারণে আটকে গিয়েছিলেন। অপশন মাঝে-মধ্যে খোলা রাখতে হয়। অন্য খেলোয়াড়ের জন্য এটা নিজেকে প্রমাণের সুযোগ, সময় থাকে।’
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরে-বাইরে বাংলাদেশের অর্জন সুখকর নয়। একটি মাত্র জয় পেয়েছে ২২ টেস্টে। তাও ২০১৭-তে তাদের মাটিতে। অন্যদিকে চারটি ড্রর দু’টি শ্রীলঙ্কায় আর দু’টি ঘরের মাঠে চট্টগ্রামে। শুধু শ্রীলঙ্কাই নয়, বাংলাদেশ টেস্টে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেই পারেনি। বিশেষ করে পাঁচদিনের ম্যাচে চারদিন লড়াই করলেও শেষ দিনে যেন এলোমেলো হয়ে যায়। টানা দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার শক্ত মানসিকতা নেই। তবে এই থেকে বের হওয়ার উপায়টা বের করেছেন অধিনায়ক মুমিনুল। তার মতে টেস্টে পাঁচদিনের কথা না ভেবে খেলতে হবে প্রতিটি দিন প্রত্যেক সেশনে সেশনে লড়াইয়ের কথা মাথায় রেখে। তিনি বলেন, ‘একেবারে ৫ দিনের চিন্তা না করে একদিন একদিন করে চিন্তা করতে হবে।’ এছাড়াও সবশেষ তিন টেস্টে হেরেছে দল। তাই লঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে জয়ে ফেরাও দারুণ চ্যালেঞ্জ। অধিনায়ক জানিয়ে দিলেন মাঠে নামরবেন শুধু জয়ের কথা ভেবেই। তিনি বলেন, ‘যখন খেলি জেতার জন্য খেলি। এখানেও এই পরিকল্পনা নিয়েই খেলব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। আগে কী হল না হল এগুলো নিয়ে কখনও চিন্তা করতে পারবেন না। যারা ৫দিন চাপ সামলাতে পারবে তারাই ম্যাচ জিতবে। অতীতে কী হয়েছে এসব ভূমিকা রাখে না।’
৭ ব্যাটসম্যানের সুযোগ, উইকেট দেখে বোলিংয়ের পরিকল্পনা
সাকিব দল থেকে ছিটকে পড়ায় একাদশ সাজানো কঠিন হলেও বিকল্প ভেবে রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তিনি ফিরে আসায় বদলে গেছে পরিস্থিতি। গতকাল দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনে কোনো পেসার অংশ নেননি। আসেনি দলের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল, এছাড়াও ব্যাটার লিটন দাস ও ইয়াসিরও বিশ্রাম নিয়ে হোটেলে দিন কাটিয়েছে। দলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে তামিম ইকবাল শতভাগ ফিট আছেন। এরপরও তাকে দেয়া হয়েছে বিশ্রাম। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু জানান ঐচ্ছিক অনুশীলনের কারণে সবাইকে মাঠে আনা হয়নি। দলের সবাই ফিট আছেন। তাই ধরে নেয়া যায় আজ একাদশে ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়। সবশেষ দক্ষিণ অফ্রিকায় দুই টেস্টে দল ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও তার ব্যাট থেকে আসে দারুণ সেঞ্চুরি। এই দু’জনের পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল। এরপর পাঁচে মুশফিকুর রহীম, ছ’য়ে সাকিব। ইয়াসির আলী সব শেষ টেস্টে ভালো করলেও সাকিব ফেরায় তার জায়গা হচ্ছে না। তাই ৭ নম্বরে দেখা যাবে লিটন দাসকে।
জানা গেছে, ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে বাড়তি পাওয়া সাকিবের বোলিং। তবে তিনি ফিট হলেও বাঁহাতি স্পেসালিস্ট স্পিনার তাইজুল ইসলাম থাকছেন একাদশে। রাখা হতে পারে অফ স্পিনার নাঈম হাসানকেও। প্রায় এক বছর পর তার একাদশে ফেরার সুযোগ। তবে সাকিব ফিরে আসায় তাকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টের। এছাড়াও উইকেট দেখেও তার খেলা না খেলা নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন অধিনায়ক। মুমিনুল বলেন, ‘ও (নাঈম) খেলবে কি না কাল বোঝা যাবে। যদি খেলেও ওর ভূমিকা রাখতে পারবে ইনশাআল্লাহ্?। আমরা কাল (আজ) আরও একবার উইকেট দেখেই সিদ্ধান্ত নেবো।’ এছাড়াও চট্টগ্রাম টেস্টের শুরু থেকেই তিন পেসার খেলানোর গুঞ্জন। যদি তা হয় তাহলে নাঈমের খেলার সম্ভাবনা ক্ষিণ। সেই ক্ষেত্রে শরিফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন চৌধুরী ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ খেলবেন। আর যদি দুই পেসার খেলেন তাহলে শরিফুলের খেলার সম্ভাবনা কমে আসতে পারে। তিনি ইনজুরি আক্রান্ত না হলেও ফিট নন। যদিও অনুশীলনে টানা দারুণ ঘাম ঝড়িয়েছেন এই তরুণ পেসার। তবে বোলিং আক্রমণ কেমন হবে তাও ঠিক হবে আজ উইকেট দেখেই। অধিনায়ক মুমিনুল বলেন, ‘আজ আমরা উইকেট দেখবো এরপর সিদ্ধান্ত নেবো তিন পেসার খেলানো যায় কিনা। হতেও পারে, আবার দুইজন নিয়ে খেলা হতে পারে।’