ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মত-মতান্তর

ফেসবুকে বাতাবি লেবুর চাষ, তেল এবং বিএনপি

সাজেদুল হক
১৪ মে ২০২২, শনিবার
mzamin

শুরুতেই পাঠকদের কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি। বাতাবি লেবু চাষ কিংবা যেকোনো ফসল উৎপাদনই মহান কাজ। আমার প্রয়াত পিতা কৃষক ছিলেন। জীবনের শুরুতে কৃষিকাজে হাত লাগিয়েছি নিজেও। তাই কৃষি কাজকে ছোট করার কোনো অভিপ্রায়ই আমার নেই। কিন্তু আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকের বাসিন্দা হয়ে থাকেন তাহলে এটা খেয়াল করে থাকবেন। উন্নয়ন সাংবাদিকতাকে অনেক সময়ই তাচ্ছিল্য করে ‘বাতাবি লেবু’ সাংবাদিকতা বলা হয়। ‘বিখ্যাত’ ১/১১ এর দিন ঢাকায় একটি পত্রিকায় (ইতিমধ্যে বিলুপ্ত) রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছিলাম। রাতের বেলায় খেয়াল করলাম পত্রিকাটির সম্পাদকীয় পাল্টে যাচ্ছে। একজন যুগ্ম সম্পাদক পরিবেশ বাঁচানোর ওপর জোর দিয়ে নতুন সম্পাদকীয় লিখছেন।

বিজ্ঞাপন
আবারো বলি, কৃষি বা পরিবেশের মতো বিষয়গুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাংবাদিকতাকে এসবের পাশাপাশি দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়েও অনুসন্ধান করতে হয়। অনেক সময় নানা কারণে তা পারা যায় না কিংবা করা হয় না। এর জেরে মিডিয়ার স্বাধীনতার সূচকে হতাশাজনক অবনতি আমরা দেখি।  

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোর তুলনায় ফেসবুকের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। মূল ধারার সাংবাদিকতা যখন বিপর্যস্ত তখন ফেসবুকে সাংবাদিকতা, গুজব, মতামত, ব্যক্তিগত আক্রমণ, গিবতের চর্চা হচ্ছে নিয়মিত। এর ভালো-মন্দ সব দিকই রয়েছে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রীর ফোনে একজন টিটিই বরখাস্তের কথাই ধরা যাক না কেন! খবরটি অবশ্য প্রথম মূলধারার মিডিয়াতেই আসে। কিন্তু এ নিয়ে রীতিমতো ঝড় ওঠে ফেসবুকে। একপর্যায়ে টিটিই তার চাকরি ফিরে পান। অনেকটা সুর নরম করে বিব্রতবোধের কথা জানান মন্ত্রী। শ্বশুরবাড়ির কুটুম্বদেরও চিনতে পারেন তিনি। ফেসবুক ঝড় নিয়ে বিস্তারিত আলাপের আগে আরও কিছু কথা সেরে নেই।

দীর্ঘদিন হলো বাংলাদেশের রাজনীতি স্থবির। একটা সময় বলা হতো এদেশের মানুষ রাজনীতি খায়, পান করে! কিন্তু সেদিন আর নেই। গ্রামে চায়ের দোকানে বসলে আর আগের মতো রাজনৈতিক বাতচিৎ শোনা যায় না। তাই বলে ইস্যুর অভাব নেই। গত ক’দিনে যখন ‘কাওরান বাজারের চিঠি’ শীর্ষক কলামটি নিয়মিত লিখবো ভাবছি তখন একের পর এক ইস্যু আসছে। হঠাৎই বাজার থেকে উধাও হয়ে গেল সয়াবিন তেল। এ নিয়ে যখন নানা আলোচনা তখন রীতিমতো বড় লাফ দেয় আলোচিত এ তেল। বোতলজাত লিটারে দাম বাড়ে ৩৮ টাকা। এ খবরের মধ্যেই রেলমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির স্বজন কাণ্ড! এ আলোচনা মিইয়ে যাওয়ার আগেই আসরে হাজির হয় রাজনীতি। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয় আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে। বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখান সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনশ’ আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণের ইঙ্গিতও মেলে।  

 

 

গত এক দশকে বাংলাদেশে আলোচিত তিনটি ঘটনা- শাহবাগ, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ফেসবুক বড় ভূমিকা রেখেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব আন্দোলনের প্রথম ডাক আসে ফেসবুকে। আন্দোলনকারীরা নিজেদের মধ্যে সংযোগও গড়ে তোলে সামাজিক এই মাধ্যম ব্যবহার করে। আগেই বলেছি, ফেসবুকে প্রতিদিন জন্ম হচ্ছে হাজারও সংবাদ-অসংবাদের। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে অনেককে বিপাকেও পড়তে হচ্ছে। আবার এটাও সত্য, ব্যক্তিগত হয়রানির শিকার মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার পথও উন্মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কীভাবে ভিন্নমত দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই যখন অবস্থা তখন সামাজিক মাধ্যমে মত প্রকাশকারীদের জন্য আরও খারাপ খবর পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকা খবর দিয়েছে, “ধরুন, বাজারে আগুন। খেপে গিয়ে আপনি ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম মেসেঞ্জারে দুই ছত্র লিখে পাঠালেন বন্ধুকে। বন্ধুটিও আপনার মতো ভুক্তভোগী। হতাশ হয়ে তিনি আপনার বক্তব্যসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করলেন একটি ব্যঙ্গাত্মক মিম।’ তাতে সরকারের কারও ছবি যুক্ত করে লেখা, ‘অনাহারে নাহি খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ।’ মানুষের জমে থাকা এসব ক্ষোভ নিয়ে কাহিনীকার লিখলেন চিত্রনাট্য। সেটি প্রচারিত হলো অনলাইনভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম ওটিটিতে। আপনি, আপনার বন্ধু, চিত্রনাট্যকার এবং ওটিটি প্ল্যাটফরম- সবাই ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। কারণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তো আছেই, এর সঙ্গে আরও তিনটি আইন, প্রবিধান ও নীতিমালা যুক্ত হতে যাচ্ছে। কোনো না কোনো আইন অথবা প্রবিধানে আপনি মামলার মুখে পড়তে পারেন। খসড়া এসব আইন ও প্রবিধানে এমন সব বিধান যুক্ত করে দেয়া হয়েছে, যাতে বন্ধুর সঙ্গে অনলাইনে আপনার গোপন আলাপ প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি বিদেশ থেকে কেউ যদি আপনাকে আইন-প্রবিধানে নিষিদ্ধ কোনো বার্তা পাঠায়, তাহলে আপনাকে শনাক্ত করে দিতে বাধ্য থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রস্তাবিত এই আইন, প্রবিধান ও নীতিমালা তিনটি হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তৈরি উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২২ (ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট); বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তৈরি ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস’ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান ও পরিচালনা নীতিমালা, ২০২১।” (সূত্র: প্রথম আলো, ৯ই মে, ২০২২)

 

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোর তুলনায় ফেসবুকের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। মূল ধারার সাংবাদিকতা যখন বিপর্যস্ত তখন ফেসবুকে সাংবাদিকতা, গুজব, মতামত, ব্যক্তিগত আক্রমণ, গিবতের চর্চা হচ্ছে নিয়মিত।

 

এই পরিস্থিতিতে ফেসবুকে বাতাবি লেবুর ভালো ফলন ছাড়া আর কি নিয়েইবা আলোচনা করা যায়? কিন্তু আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনা দাবি রাখে। সামাজিক মাধ্যমে সব সময় কি সঠিক বা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়? দ্বিতীয়ত, সামাজিক মাধ্যম কি গণআন্দোলনগুলোর জন্য আখেরে খারাপ ফল বয়ে আনছে? বড় পরিসরে আন্দোলনকে দুর্বল করে দিচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট জেইনেপ তুফেকি। তার লেখা ‘টুইটার অ্যান্ড টিয়ার গ্যাস’ বইটি ব্যাপক আলোচিত। এতে তিনি সরাসরি অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন আন্দোলন পর্যবেক্ষণ ও তার ধারালো বিশ্লেষণের সমন্বয় করেছেন। বইতে তিনি আরব বসন্ত থেকে শুরু করে মেক্সিকো ও তুরস্কের আন্দোলনকে বিশ্লেষণ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে আধুনিক আন্দোলনের গতিধারা বদলে দিচ্ছে তার ব্যাখ্যা করেছেন তুফেকি। পাশাপাশি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বর্তমানের সঙ্গে তার তুলনা করেছেন। ডিজিটাল আন্দোলন দমনে এখনকার সরকারগুলো কীভাবে তাদের নিজস্ব পদ্ধতি প্রয়োগ করছে সে কথাও আছে এই বইতে। তুফেকি নিজেই ২০১৩ সালের গাজি পার্ক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে ডিজিটাল আন্দোলনকে বুঝতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে তার পড়াশোনার জ্ঞানকেও কাজে লাগিয়েছেন তিনি। মিশর, তুরস্ক, কাতার, তিউনিশিয়া, লেবাননের অধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকদের অসংখ্য সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তুফেকি। বিভিন্ন দশকে সামাজিক আন্দোলনগুলো যেভাবে গড়ে উঠেছিল সেগুলোও বইতে তুলে এনেছেন তিনি। বইতে তিনি ডিজিটাল আন্দোলনের নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে এনেছেন। নেতাবিহীন এই আন্দোলন জনপ্রিয় হলেও কেন অকার্যকর তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

সামাজিক এ মাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা থেকেও দূরে নিয়ে যাচ্ছে তরুণদের। টুইটারে একটি পোস্ট করা এবং রাজপথে টিয়ারশেলের মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা তো আসলে এক নয়। প্রথম প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক মাধ্যমে যা গুরুত্ব পাওয়ার কথা তা কি পায়? যেমন গত সপ্তাহেই তুমুল আলোচনা হলো লিটারে তেলের দাম ৩৮ টাকা বাড়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি মন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির তিন স্বজনের বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণের ঘটনা পরম্পরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য ব্যবসায়ীরা মানুষকে জিম্মি করে তেলের দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী, সাবেক ব্যবসায়ী নেতা টিপু মুনশিও তা অনেকটা কবুল করেছেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম এটাই আমাদের ব্যর্থতা। বিশ্বাস করা ভুল হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখেছি মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়। মিল মালিকরা কথা রাখলেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে।’ আর মজুত করা তেল তো প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে। যেন আমরা চাইলে তেল রপ্তানিও করতে পারি!

মন্ত্রী সাহেব সম্ভবত বলার বেশি খুব বেশি কিছু করবেন না! যদিও মজুত তেল উদ্ধারে অভিযান চলছে। কিছু জরিমানা, মামলা, আটকের ঘটনাও ঘটেছে। উল্টো আবদার করছে ব্যবসায়ী সংগঠন। কিন্তু জনগণের তো কোনো সমিতি নেই! তাদের পক্ষে বলবে কে? এই অবস্থায় আপাতত মানুষ সয়াবিন তেলের পরিবর্তে কী ব্যবহার করা যায় তা নিয়েই ভাবছে। পানির কথাও বলছেন কেউ কেউ। এটা তো ঠিকই বিশুদ্ধ পানিই সবচেয়ে উপকারী। যদিও ঢাকায় ওয়াসার পানির মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। 
 

বিএনপি ভোটে যাবে, যাবে না

রাজনীতির চাকা ফের ঘুরতে শুরু করেছে। এর কতটা আসল, কতটা মেকি তা এখনই বলা কঠিন। প্রশ্ন উঠেছে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাবে কিনা? গেল তিনটি সংসদ নির্বাচনের আগেও এ প্রশ্ন উঠেছিল। ২০০৮ এ অবশ্য প্রকাশ্যে ওতোটা নয়। সে সময় প্রায় সব আলোচনাই হয় পর্দার আড়ালে। তিনটির মধ্যে দুটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বড় হার দেখে বিএনপি। এরমধ্যে গত নির্বাচনের ফলতো দলটির জন্য অবিশ্বাস্যই। বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি কি করবে?

 

বিএনপি’র এই অবস্থান কত দিন থাকে, এটি কতটা কথার কথা সে প্রশ্নও রয়ে গেছে। কিন্তু রাজনীতির যেকোনো ছাত্রই এটা বুঝতে পারেন, বিএনপি’র জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া সত্যিই কঠিন। ফখরুদ্দিন জমানায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিতে অনাগ্রহ ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং দল ও জোট নেতাদের আগ্রহে তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নেন।

 

গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকের পরই আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জোরদার হয়। ওই বৈঠক নিয়ে সমকালের রিপোর্টে বলা হয়, বিএনপিসহ সব দলকে আগামী নির্বাচনে আনতে সব ধরনের চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। আর ওই নির্বাচনে তিনশ’ আসনেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হবে। গত শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিএনপি’র সঙ্গে নির্বাচন করেই আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বিএনপিসহ সব দলকেই আগামী নির্বাচনে আনা যায় কিনা, সে বিষয়ে কৌশল গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ কেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যাবে? এ সময় মাহবুব-উল আলম হানিফকে তিরস্কার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না এলেই বুঝি তোমার সুবিধা হয়! তোমার এলাকায় ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরেছে। তুমি নির্বাচন করলে তো তারাই হারিয়ে দেবে।’ 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘নির্দলীয় সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত একটি কথাও হবে না।’ বিএনপি’র এই অবস্থান কত দিন থাকে, এটি কতটা কথার কথা সে প্রশ্নও রয়ে গেছে। কিন্তু রাজনীতির যেকোনো ছাত্রই এটা বুঝতে পারেন, বিএনপি’র জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া সত্যিই কঠিন। ফখরুদ্দিন জমানায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিতে অনাগ্রহ ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং দল ও জোট নেতাদের আগ্রহে তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নেন। যুদ্ধাপরাধ মামলায় ইতিমধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপি ও জামায়াতের দুই নেতা সে সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে বলা হয়। ওই নির্বাচন দৃশ্যত অবাধ ও নিরপেক্ষ ছিল। তবে বিএনপি সংসদে সম্মানজনক আসনও পায়নি। এরপর আওয়ামী জমানায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে যায়। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিতে অনড় থাকে। রাজপথে সহিংস আন্দোলনের পরও সরকার ক্ষমতায় থেকে যায়। কারাদণ্ড, কারাভোগের কারণে খালেদা জিয়া দলটির নেতৃত্ব দিতে পারছেন না তাও সবার জানা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃটেনে। এই অবস্থায় গত সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি বিএনপি।

গেল তিনটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র সিদ্ধান্ত ভুল না সঠিক ছিল তা নিয়ে রাজনীতিতে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। এ আলোচনা চলবে আরও দীর্ঘদিন। কী করলে কী হতো তা হলফ করে বলা কঠিন। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো এরইমধ্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেনসহ পশ্চিমা দুনিয়ার প্রকাশ্য অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট। যদিও তাদের ভূমিকা নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা দুরূহ। প্রতিবেশী ভারত এবং চীন নির্বাচন নিয়ে খোলাসা করে এখনো কিছু বলেনি। কে না জানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের ভূমিকাই অন্যতম প্রধান।

বিএনপি’র এক নেতা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘বিএনপি বার বার ভুল করলে জনগণ তা গ্রহণ করবে না। বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে।’ এখন কথা হলো, তাহলে বিএনপি কি করবে? নির্বাচনে অংশ নেবে? নির্বাচন বর্জন করবে? সরকার হটানোর আন্দোলন করবে? আগেই বলেছি, এর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়াই বিএনপি’র জন্য সহজ নয়। কারণ ঘর এবং বাইরের মাঠ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপি আরও অনেক সময় নেবে।    

লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, মানবজমিন।
ই-মেইল: [email protected]

 

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

   

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবদলই সরকার সমর্থিত / ভোটের মাঠে নেই সরকারি দলের প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো বিরোধীদল

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status