শরীর ও মন
কোলন ক্যান্সার না আইবিএস
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
(২ বছর আগে) ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার, ১২:২৭ অপরাহ্ন
উপসর্গ ও কিছু মিল থাকার কারণে কোলন ক্যান্সার ও আইবিএস নিয়ে রোগীরা দ্বিধায় থাকেন। তবে রোগ দু’টো নিয়ে একটু বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন। পার্থক্যগত দিক দিয়ে রোগ দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা। সাধারণ আইবিএস মনে করে হেলাফেলায় মারাত্মক জটিলতা হতে পারে। কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হলো পায়খানার সঙ্গে রক্ত কিংবা পেটে ব্যথা। সাধারণত অধিকাংশ রোগী প্রথম এই ধরনের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন অর্থাৎ কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য সঙ্গে দেখা দিতে পারে রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ।
অন্যদিকে আইবিএসের (ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম) রোগীরা দীর্ঘমেয়াদি পেটের সমস্যায় ভোগে অর্থাৎ বদহজম, আমাশা তাদের চিরজীবনের সঙ্গী হয়ে যায়। পেটে হঠাৎ করে মোচড় বা কামড় দেবে এবং সঙ্গে সঙ্গে পায়খানায় যেতে হবে। এমনও ব্যক্তি আছে যার দিনে চার-পাঁচবার বাথরুমে যাওয়া লাগে।
কোলন ক্যান্সারের সতর্কতা: ‘কলোরেক্টাল’ ক্যান্সারের শুরুটা হয় অন্ত্র কিংবা পায়ুপথে। সূত্রপাতের স্থানভেদে একে ‘কোলন ক্যান্সার’ অথবা ‘রেকটাম ক্যান্সার’ বলা হয়। ‘লার্জ ইন্টেসটাইন’, ‘লার্জ বাওয়েল’ দুটোই হলো বৃহদান্ত্রের আরেক নাম, যাকে আবার ‘কোলন’ নামেই চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে বৃহদান্ত্রের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পায়ুপথে গিয়ে শেষ হওয়া ‘চেম্বার’টি হলো ‘রেকটাম’। কোলন আর রেকটাম ক্যান্সারের উপসর্গগুলো একই রকম হওয়ার কারণে এদেরকে একত্রে ‘কলোরেক্টাল’ ক্যান্সার বলা হয়।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন কিংবা রেকটাম’য়ের ভেতরের দেয়ালে মাংসের দলা তৈরি হয় যাকে বলা হয় ‘পলিপস’। সময়ের পরিক্রমায় এবং চিকিৎসার অভাবে এই ‘পলিপস’ পরিণত হয় ক্যান্সার কোষে। বংশগত কারণ, খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, ধূমপান, ‘ইনফ্লামাটরি বাওয়েল ডিজিস (আইবিএস)’ ইত্যাদি এই রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। নারী-পুরুষ উভয়েরই কোলন ক্যান্সার হওয়া সম্ভব হলেও, পুরুষদের রেকটাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
উপসর্গ: ১. অন্ত্রের কার্যক্রমের গুরুতর পরিবর্তন। বেশির ভাগ সময় ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা। সাধারণ সময়ের চাইতে মলের আকার পরিবর্তন বা খুবই চিকন মলত্যাগ।
২. পায়ুপথে রক্ত, রক্ত মিশ্রিত মলত্যাগ।
৩. সবসময় পেটে বা অন্ত্রে অস্বস্তি। যেমন- খিঁচুনি, গ্যাস ও ব্যথা।
৪. মলত্যাগের পরেও সব সময় অনুভূত হওয়া যে ভালো মতো পেট খালি হয়নি।
৫. দুর্বলতা ও কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমা।
চিকিৎসা: ক্যান্সার কোনো ‘স্টেজ’য়ের আছে তার ওপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘টিউমার’ অপসারণ, ‘রেডিয়েশন থেরাপি’, ‘কেমোথেরাপি’ ইত্যাদি চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার হলো প্রথম চিকিৎসা। ক্যান্সার কোষে অন্ত্রের ভেতরে ছড়িয়ে পড়লে অন্ত্রের কিছু অংশ কেটে ফেলা সম্ভব, যাকে বলা হয় ‘পার্শিয়াল কলেকটমি’।
আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো ‘ওস্টোমি’। যেখানে অন্ত্রের সুস্থ অংশ থেকে পেটের বাইরে ‘ওপেনিং’ তৈরি করা হয় এবং সেখানে একটি ব্যাগ বসানো হয়। মল এই ব্যাগে এসে জমা হয়। এ ছাড়াও আছে রেডিয়েশন থেরাপি যেখানে ‘এক্স-রে’ ও ‘প্রোটন’য়ের সাহায্যে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।
প্রতিরোধ: কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। শাক-সবজি, শস্যজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ, ভোজ্য আঁশ এবং ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ থাকে এমন খাদ্যাভ্যাস বেছে নিতে হবে। এই উপাদানগুলো অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বা ভালো অবস্থা বজায় রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। শারীরিক ওজন একটা স্বাস্থ্যকর মাত্রায় থাকতে হবে।
বংশে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী থাকলে পরিবারের সকল সদস্যের উচিত বয়স ৪৫ পেরোলে কিংবা তার আগে থেকেই নিয়মিত ‘কোলন ক্যান্সার’য়ের পরীক্ষা করানো। তবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রাচুর্য, অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবনযাত্রা ইত্যাদির কারণে এই রোগ আজ ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি ৪০ বছরের কম বয়সীদের মাঝেও আজকাল এই রোগ দেখা দিচ্ছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ.কে.কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা।
ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯