ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

কী হচ্ছে, কী হবে?

৪ অক্টোবর ২০২২, মঙ্গলবার
mzamin

জাতীয় নির্বাচন অনেক দূর। এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। এর আগে যে হতে পারে না, তা কিন্তু নয়। কতো কিছুই তো হয়। কী ধরনের নির্বাচন হবে এ নিয়েই যত আলোচনা। বিরোধীরা চাইছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে একদম অনড়। এবার অবশ্য বিরোধী শিবিরের পাল্লা ভারী। বাংলাদেশে কী অন্য কিসিমের শাসন  আসবে! নাকি সমঝোতা হবে দু’পক্ষের মধ্যে। যদিও রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বলছেন এর সম্ভাবনা খুবই কম।

বিজ্ঞাপন
তাহলে কী হবে? এর বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেছেন আমাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষক শান্তনা রহমান। 

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি মাঠ দখলের চেষ্টায়  মরিয়া। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বিএনপি অনেকটা গোছালো। প্রচুর লোক সমাগম হচ্ছে দলটির  জনসভাগুলোতে। নেতাদের  বক্তৃতার ভাষাও বদলে গেছে। গোড়াতে দলটির ভেতরে আন্দোলন প্রশ্নে দুটি ধারা ছিল। এক দল মনে করতো, এখনই আন্দোলনে গেলে এর গতিধারা ধরে রাখা যাবে না। অন্য দল এই যুক্তি মানতে রাজি নয়। তাদের কথা, এখনই উপযুক্ত সময়। পেছনের ইতিহাস আমাদের জন্য মোটেই ভালো নয়। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। দলের অদৃশ্য নেতৃত্বও এই মতের সঙ্গে একমত। এই অবস্থায় সরকার কিছুটা নার্ভাস। তারা মনে করছে, এর পেছনে নিশ্চয় কোনো শক্তি কাজ করছে। বিদেশি কূটনীতিকদের তারা সন্দেহের চোখেই দেখছে। তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে। পশ্চিমা শক্তি স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে। আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও এখন সুর অনেকটাই কাছাকাছি। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে রাজপথ বেদখল হয়ে যাচ্ছে দেখে সরকারের নীতিনির্ধারকরা চিন্তিত। তারা মনে করছেন, আন্দোলন গড়ে উঠলে সরকারকে হয়তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে হতে পারে। আর যদি তত্ত্বাবধায়কে ফিরে যেতে হয় তাহলে ক্ষমতায় ফিরে আসা কঠিন হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিরোধী দল জয়লাভ করেনি। যেমনটা ২০০৮ সন থেকে এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে বিরোধী দল জেতেনি বা অংশ নেয়নি। ১৯৯১ সনে বিএনপি জয়ী হয়েছিল। ’৯৬-এ আওয়ামী লীগ জয় পায়। একই অবস্থা ছিল ২০০১ সনের নির্বাচনে। বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এ কারণেই সরকারের ভেতরে নির্বাচন নিয়ে টালমাটাল অবস্থা। ভোট ছাড়া নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মজাই আলাদা। শুধু নমিনেশন পেলে বা কোনো কৌশলে আদায় করতে পারলেই কেল্লাফতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার এখন কী করবে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার নিত্যদিনের বক্তৃতায় নরমে-গরমে নানা ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। বলছেন, বিএনপি সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা- সরকার হার্ড লাইনে যাবে। সভা-সমাবেশের অনুমতি দিলেও শর্ত জুড়ে দেবে। কোনোটাই অবশ্য চূড়ান্ত নয়। কারণ, পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে। সম্পূর্ণ প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়েছে সরকার। দল আর সরকারের আলাদা অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রাজনৈতিক কৌশলের কাছে  বরাবরই প্রশাসন হার মেনেছে। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে রাজনীতিকরা বাতিল, প্রশাসনই ক্ষমতায় রাখবে। কিন্তু আখেরে প্রশাসন তার নিজের পথ বেছে নেবে- এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিমধ্যেই কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শেষ দিনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেদিন কী ঘটার কথা ছিল, কিন্তু কেন তা ঘটেনি। এক দুপুরেই সব পাল্টে যায়। অন্যসব সরকারের আমলেও অনেক কিছু ঘটেছে। বিএনপি’র জমানায় প্রকাশ্যেই খেলা শুরু হয়েছিল। বলাবলি আছে, বিএনপি  বুঝে ওঠার আগেই মাঠ চলে যায় অন্যদের হাতে। দুজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা কয়েক মাস আগেই তৎপরতা শুরু করেছিলেন। ২০১৪ সনে যা ঘটেছিল আবারো কী তার পুনরাবৃত্তি হবে? সহিংসতা ফিরে আসবে? তদন্তে যদিও সে সময় ভিন্ন রিপোর্টই পাওয়া যাচ্ছিল। বিএনপি’র এক নেতা বললেন, আমরা ওয়াকিবহাল। আমরা জানি তারা কী করবে। কিন্তু অন্য কোনো কূটকৌশল এবার কাজে আসবে না। বিদেশিরাও নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। সুতরাং আগামীদিনে কী ঘটবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত। জরুরি অবস্থা জারিই কি সমাধান? হাইব্রিড আওয়ামী লীগাররা অবশ্য এটাকেই সমাধান মনে করছেন। আর যারা নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ তারা মনে করছেন- রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করা উচিত। তাদের যুক্তি, রাজনীতিতে পালাবদল ঘটতে বেশি সময় লাগে না। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ দিশাহারা। সঞ্চয় ভেঙে সংসার চলছে। প্রবাসী আয় কমে গেছে।  রপ্তানি নিম্নমুখী। উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা। এসব কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই বিরোধী শিবিরের জনস্রোত দিন দিন লম্বা হচ্ছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status