শেষের পাতা
ইন্দোনেশিয়াজুড়ে শোকের ছায়া
মানবজমিন ডেস্ক
৪ অক্টোবর ২০২২, মঙ্গলবারইন্দোনেশিয়াজুড়ে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। একটি ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা পরিস্থিতিতে সেখানে কমপক্ষে ১২৫ জন মারা যাওয়ার পর শোকে স্তব্ধ দেশ। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন আরিমা এফসি ৩ক্লাবের কোচ জাভিয়ের রোকা। তার হাতের উপরই মারা গেছে মানুষ। শনিবার ইন্দোনেশিয়ার কানজুরুহান স্টেডিয়ামে ফুটবল লীগ ম্যাচে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১২৫। রোববার নিহতের সংখ্যা ১৭৪ বলা হলেও পরে তা সংশোধন করে বলা হয়, নিহতের সংখ্যা ১২৫। ওইদিন সংঘর্ষের পর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে পদপিষ্ট হয়ে বহু মানুষ মারা যান। খেলোয়াড়দের হাতের উপর অনেক ভক্ত মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে আছে শিশুরাও।
বিজ্ঞাপন
কর্তৃপক্ষ বলেছে, শনিবারের ওই ট্র্যাজেডিতে যারা মারা গেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী মাত্র তিন বছর বয়সী একটি শিশু। পুলিশ বলেছে, খেলার পর আহত হন কমপক্ষে ৩২০ জন। পদপিষ্ট হয়ে, কাঁদানে গ্যাসের কারণে শ্বাসরোধ হয়ে মানুষ নিহত ও আহত হন। ইন্দোনেশিয়ার শিশু ও নারী কল্যাণ বিষয়ক ডেপুটি মন্ত্রী বলেছেন, নিহতদের মধ্যে আছে তিন থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরও। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ অসংখ্যবার অব্যাহতভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। জাভা দ্বীপে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে জাভা দ্বীপের আরিমা এফসি ক্লাব তার প্রতিদ্বন্দ্বী পারসিবায়া সুরাবাইয়া ক্লাবের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলে হেরে যায়। এর ফলে আরিমা এফসি সমর্থকরা তীব্রবেগে মাঠের ভেতর ছুটে যায়। সংঘর্ষ শুরু হয় প্রতিপক্ষের ভক্তদের সঙ্গে। এ সময় স্টেডিয়ামের বাইরে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি উল্টে দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত ভক্তরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্টেডিয়ামের ভেতরে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে লোকজন বেষ্টনী বেয়ে উঠছে পালানোর জন্য। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে পড়ে আছে প্রাণহীন অনেক দেহ।
চন্দ্রা নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডে কাঁদানে গ্যাসের এক সমুদ্র সৃষ্টি হয়। এতে দর্শকদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্ক দেখা দেয়। ফলে ছোট ছোট বাচ্চারা কান্নাকাটি শুরু করে। নারীরা চেতনা হারাতে থাকেন। চারদিকে আর্তনাদের শব্দ শোনা যায়। সবাই ছুটছিল। ইকো নামে আরেকজন ভক্ত বলেন, বিপুল পরিমাণ মানুষ পালানোর চেষ্টা করছিল। ফলে তিনি বহির্গমন গেট খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তার ভাষায়, বন্ধুদের নিয়ে আমি স্ট্যান্ডের একেবারে শীর্ষদেশে পেছন দিকে অবস্থান নিলাম। তারপর স্কার্ফ ব্যবহার করে ধোঁয়া দূরে তাড়ানোর চেষ্টা করি। এরপরই আমি মাঠের ভেতর লাফিয়ে পড়ি এবং সাইড দরজার মাধ্যমে বেরিয়ে যাই। এস্টার আন্দয়ানেঙ্গতিয়াস বলেছেন, তার ১৭ বছর বয়সী মেয়ে ডেবোরা মারাত্মক আহত হয়েছে। তার ঘাড় ভেঙে গেছে। মাথা ফুলে গেছে। আমি তাকে এদিন খেলা দেখতে যেতে মানা করেছিলাম। সে বাসায় ফেরেনি। আমরা তাকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজি। কিন্তু কোথাও পাই না। হাসপাতাল থেকে আমাদেরকে মরচুয়ারিতে খোঁজ নিতে বলা হলো। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো। কারণ আমার মেয়ের সঙ্গে এ সময় কোনো পরিচয়পত্র ছিল না।
বিশৃঙ্খলার পর অভিভাবকরা হন্যে হয়ে তাদের সন্তানদের খুঁজছেন। এক ব্যক্তি বলেছেন, সন্তানদের সুরক্ষা দিতে গিয়ে পিতা-মাতা মারা গেছেন। একজন মা তার শিশু সন্তানকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। তিনি চেতনা হারিয়েছেন। তার পাশে চেতনা হারান এক বালক। কিছু লোক ওই মাকে ও ওই বালককে উদ্ধার করে মাঠের বাইরে দিয়ে আসেন। মাঠে উপস্থিত ছিলেন ২১ বছর বয়সী মুহাম্মদ দিপো মাওলানা। তিনি বলেছেন, খেলা শেষ হতেই কেন হেরে গেছে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আরিমা ক্লাবের খেলোয়াড়দের কাছে উত্তর চাইতে দলটির ভক্তরা স্রোতের মতো মাঠের ভেতর প্রবেশ করে। এর পরপরই সেখানে পুলিশ অভিযান চালায়। ফলে আরও দর্শক মাঠের ভেতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ ব্যবহার করে তার প্রশিক্ষিত কুকুর, শিল্ড এবং সেনাদের। তিনি বলেছেন, স্টেডিয়ামের ভেতরে দর্শকদের দিকে কমপক্ষে ২০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার শব্দ শুনেছেন।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন
শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত
৪
প্রকাশ্যে বস্ত্রহরণ/ মদ্যপ নারীদের লাইসেন্স ছিল না, ডিবি অফিসেও হট্টগোল
৫