শেষের পাতা
মেয়েদের সঙ্গে বাসায় ফিরলেন রহিমা বেগম নানা গুঞ্জন
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমকে মেয়ে আদুরী বেগমের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত। রোববার সন্ধ্যায় খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর বিচারক সারওয়ার আহমেদ মামলার বাদী ও মেয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ছেড়ে দেন। এর আগে রহিমা বেগম খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২ এর বিচারক মো. আলামিনের খাস কামরায় ২২ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। উদ্ধারের একদিন পর রহিমা বেগমকে রোববার বিকালে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে শুনানির পর তাকে নিজ মুচলেকায় মামলার বাদী মেয়ে আদুরির জিম্মায় মুক্তি দিয়েছেন। পরে তাকে বয়রা এলাকায় ছোট মেয়ে আদুরীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আফরুজ্জামান টুটুল বলেন, ভিকটিম আদালতকে তার অপহরণের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, জমিজমা নিয়ে যাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল মূলত তারাই তাকে অপহরণ করে চট্টগ্রামে নিয়ে যান। সেখানে থেকে তিনি ফরিদপুরে আসেন। মামলায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে ৪-৫ জন অপহরণের সঙ্গে জড়িত। জবানবন্দি শেষে রহিমা বেগমকে চিফ মেট্রোপলিটন আদালত-৪ এর বিচারক সারোয়ার আহমেদ মামলার বাদী ও তার মেয়ে আদুরী খাতুনের জিম্মায় হস্তান্তর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, ২৫শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক আল আমিনের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন রহিমা বেগম। জবানবন্দি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৪ এর বিচারক সারওয়ার আহমেদের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। এরপর তারই মুচলেকায় মেয়ের জিম্মায় মুক্তি দেয়া হয়।
রহিমার পরিবারের দাবি, গত ২৭শে আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন তিনি। এক ঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে তার ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেয়ার পর মাকে পান না তারা। এরপর সন্তানরা সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র্যাব ১২ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ। এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৪ই সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ই সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এই মামলা তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২শে সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩শে সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একইসঙ্গে সেখানে ১০ই সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। পরে ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন।
অপরদিকে গত ২২শে সেপ্টেম্বর জন্ম নিবন্ধন সনদের জন্য বোয়ালমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন রহিমা বেগম। বোয়ালমারী সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোশারফ হোসেন বলেন, গত ২২শে সেপ্টেম্বর রহিমা বেগম ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন জন্ম নিবন্ধন করানোর জন্য। তাকে না চিনতে পেরে চেয়ারম্যান আমার কাছে পাঠায়। কিন্তু তিনি আমার কাছে আসেননি। তিনি আরও বলেন, খুলনা মহানগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম আমার পূর্বপরিচিত। রহিমা বেগমকে না জানিয়ে আমরা কাউন্সিলর সাইফুলকে সবকিছু খুলে বললে তারা খুব দ্রুত রহিমা বেগমকে নিয়ে যাবেন বলে জানান। রহিমা বেগম যাতে পালিয়ে না যান সে বিষয়ে আমাদেরকে নজর রাখতে বলেন কাউন্সিলর। তারপর শনিবার রাতে খুলনা ও বোয়ালমারী থানা পুলিশের উপস্থিতিতে রহিমা বেগমকে খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কুদ্দুস বিশ্বাসের বাড়ির ৩ জন সদস্যকে খুলনা পুলিশ জবানবন্দি নেয়ার জন্য নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।