শেষের পাতা
সুনামগঞ্জের রাজনীতি
নিজেকে নিয়ে বাজিতে মুকুট
ওয়েছ খছরু ও একেএম মহিম, সিলেট থেকে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, মঙ্গলবারসুনামগঞ্জের রাজনীতিতে সব সময়ই ‘ফ্যাক্টর’ নুরুল হুদা মুকুট। রাজনীতির বাজিতেও তিনি সেরা। লড়াইয়ের ময়দানে এবারো তিনি নিজেকে নিয়ে নামলেন বাজিতে। হারেননি মুকুট। জয়ের পাল্লা সব সময়ই তার দিকে হেলে পড়ে। এবারো সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে তাকে নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। আওয়ামী রাজনীতিতে এরইমধ্যে নানা ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। তাকে নিয়েই এখন সবখানে জল্পনা। গতকাল সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগ মুকুটকে রাজনৈতিক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
তবে ভোটের মাঠ থেকে সরে যাননি। এবার তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন সাবেক পিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল কবির রুমেন। এর আগের বার তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন। এদিকে- মাঠে নির্বাচনী বল গড়াতে না গড়াতেই সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন খেলা। আর এ খেলায় শুরুতেই দলীয় পদ হারালেন নুরুল হুদা মুকুট। তাকে সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগ সুনামগঞ্জ জেলার পক্ষ থেকে দেয়া এক চিঠিতে এই আদেশ দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়- চলমান জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬১ জেলার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেন। কিন্তু নুরুল হুদা মুকুট দলের নির্দেশ অমান্য করে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ অতিক্রম হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অনুমতিক্রমে নুরুল হুদা মুকুটকে তার সকল ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। উল্লেখ্য-সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন সাবেক পিপি মো. খায়রুল কবির রুমেন। এদিকে- পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন নুরুল হুদা মুকুট। তিনি নিজেকে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দাবি করেন।
বিবৃতিতে নুরুল হুদা মুকুট জানিয়েছেন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি এবং আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন যে- ২৬শে সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতির পদসহ দলীয় সকল পদবি থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছেন। এ রকম একটি সংবাদে আমি বিস্মিত। এবং এ রকম অসাংগঠনিক কার্যক্রমের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তাদের এ রকম বক্তব্য ও কার্যক্রম সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, অগঠনতান্ত্রিক ও এখতিয়ার বহির্ভূত। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে তারা এরকম প্রপাগান্ডা প্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ব্যতিরেকে জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জেলা কমিটির কোনো সদস্যকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করার কোনো এখতিয়ার নেই। জেলা কমিটির সদস্য দূরের কথা, সংগঠনের নিম্নতম কোনো শাখার কোনো সদস্যকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি প্রদানের এখতিয়ারও জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেই। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির হাতে আছে। বিবৃতিতে নুরুল হুদা মুকুট দাবি করেন- দলের চরম দুঃসময়েও আমি সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে নিরলসভাবে কাজ করেছি। আমি কোনো দিন কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার বিরোধিতা করিনি।
কিন্তু বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন অতীতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে সক্রিয়ভাবে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। সুনামগঞ্জ পৌরসভা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনে এনামুল কবির ইমন প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করেছে। তাছাড়া; গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে তিনি সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন। উল্লেখ্য যে- জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে মতিউর রহমান আমার পক্ষে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবং প্রকাশ্যে তিনি বিবৃতি প্রদান করে বলেছিলেন যে; কিসের কেন্দ্র, কেন্দ্র-টেন্দ্র আমি মানি না। এ সংক্রান্ত তার অনেক বক্তৃতা-বিবৃতি তখনকার পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আমি অচিরেই আহ্বান করবো। জেলা কমিটির সদস্যদের মতামত নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ প্রেরণ করবো।