ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

যেভাবে তারা বিশ্বের শীর্ষ ধনী

মানবজমিন ডিজিটাল
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার
mzamin

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স হলো বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের মোট সম্পদের ভিত্তিতে করা একটি র‌্যাঙ্কিং, যা প্রতিদিন ট্রেডিং শেষে আপডেট করা হয়। ইনডেক্স  অনুসারে জেনে নিন বিশ্বের শীর্ষ সাত ধনী ব্যক্তি এবং তাদের সম্পদের তথ্য।
ইলন মাস্ক- সম্পদ ২৬২ বিলিয়ন
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক সর্বদা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তবে তার সম্পদের জন্য নয়, তার খামখেয়ালিপনার জন্য। মাস্ক-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল তরঢ় ২ দিয়ে। ১৫,০০০ ডলারে মাস্ক এবং তার ভাই ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সফটওয়্যার ফার্মটি ৩৪১ মিলিয়ন ডলারে কমপ্যাকের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর তিনি ঢ.পড়স শুরু করেন, একটি ফিনটেক উদ্যোগ, যা পরে Confinity-এর সঙ্গে একত্রিত হয়ে PayPal  নামে পরিচিত হয়। পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মে ১১.৭ শতাংশ শেয়ারের জন্য মাস্ক এখন তার ফ্ল্যাগশিপ ব্র্যান্ড- SpaceX, Tesla Ges SolarCity-তে  বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০২০ সালে টেসলার স্টক ভ্যালুতে ৭৪০ শতাংশ বৃদ্ধির পর মাস্ক ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি মাস্ক টুইটার ইনকর্পোরেটেডের সঙ্গে একটি বিতর্কিত টেকওভার বিডের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। যেখানে তিনি ৪৩ বিলিয়ন ডলারে মাইক্রো-মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম কেনার প্রস্তাব করেছিলেন।
জুন মাসে মাস্ক ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি এই চুক্তি থেকে সরে আসছেন-এই উদ্ধৃতি দিয়ে যে, টুইটার স্প্যামবট অ্যাকাউন্টের ডেটা ভাগ করতে অস্বীকার করেছে।

বিজ্ঞাপন
টুইটার মাস্ককে চুক্তিটি অনুসরণ করতে বাধ্য করার অভিপ্রায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অক্টোবরে মামলাটির বিচার হবে।

গৌতম আদানি- সম্পদ ১৪৪ বিলিয়ন ডলার
পৃথিবীর শীর্ষ দশটি ধনী মানুষের মধ্যে তালিকায় নন-টেক উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন গৌতম আদানি। কয়েক মাসের মধ্যে, শক্তির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আদানির ভাগ্য প্রসন্ন হয় এবং বিনিয়োগকারীরা তার ব্যবসায় ভিড় জমাতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারিতে তিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হন। আদানি, যিনি ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্সে ১৪ নম্বর হিসেবে বছর শুরু করেছিলেন, তার মোট সম্পদের মূল্য এখন দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি দুই বিলিয়ন ব্যবধানে বেজোসকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছেছেন। আদানির সাম্রাজ্য প্রথম ১৯৮০-এর দশকে প্লাস্টিক আমদানির ব্যবসা থেকে বেড়ে ওঠে এবং বন্দর কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিশ্ব বাণিজ্যে প্রসারিত হয়। বিমানবন্দর পরিচালনা, কয়লা খনি থেকে শুরু করে সিটি গ্যাস নেটওয়ার্ক এর সঙ্গেও জুড়ে গেছে তার ব্যবসা। সেপ্টেম্বরে আদানি গ্রুপের সম্মিলিত বাজার মূলধন ২৬২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ছিল।

জেফ বেজোস-  সম্পদ ১৪২ বিলিয়ন ডলার
২০২০ সালে টেসলার শ্বাসরুদ্ধকর স্টক পরিচালনা করার পর মাস্ক বেজোস  রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বেজোস আমাজনের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত, যার কাজগুলি ই-কমার্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, স্ট্রিমিং এবং আরও অনেক কিছুতে বিস্তৃত। এছাড়াও তিনি মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক। তার প্রথম উদ্যোগ- একটি নিউজ-বাই-ফ্যাক্স পরিষেবা- ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি ওয়াল স্ট্রিটে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে ইন্টারনেট বুম দ্বারা উৎসাহিত হয়ে তিনি অসধুড়হ.পড়স-এ কাজ শুরু করেন। একটি গ্যারেজ থেকে অসধুড়হ তখন শুধুমাত্র বই বিক্রি করতো। বেজোস তার স্ত্রী, সন্তান এবং দুইজন প্রোগ্রামারের সাহায্যে এটিকে চালু করতে ১০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এখন Amayon Inc. এর বাজার মূলধন ১.২৭ ট্রিলিয়ন। ২০২০ সালে, প্রাক্তন স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কটের সঙ্গে হাই-প্রোফাইল বিবাহ বিচ্ছেদের পরে বেজোস তার মোট সম্পদে বড় ধাক্কা খান। স্কট বিবাহ বিচ্ছেদের মীমাংসার অংশ হিসাবে বেজোসের অ্যামাজন স্টকের ২৫ শতাংশ পেয়েছে বলে জানা গেছে, যা তাকে বিশ্বের অন্যতম ধনী  নারী করে তুলেছে।

বার্নার্ড আর্নল্ট- সম্পদ ১৩৭  বিলিয়ন
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে খঠগঐ-এর প্রধান বার্নার্ড আর্নল্টের মোট সম্পদ ১৩৮ বিলিয়নে নেমে এসেছে। খঠগঐ হলো ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, লুই ভিটন, ডম পেরিগনন, মোয়েট এট চ্যান্ডন, হেনেসি, সেফোরা এবং ঞঅএ হিউয়ারসহ শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলির মালিক। খঠগঐ এ আর্নল্ট পরিবারের ৪৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর্নল্ট পরিবারের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, কিন্তু তার দর্শন সবসময় সেট ছিল, একটি উচ্চ ফ্যাশন জগৎ। ১৯৮৪ সালে আর্নল্ট বিখ্যাত  Boussac দখল করে নেয়, একটি দেউলিয়া ফরাসি দল যা তখন দ্য হাউস অফ ডিওরের মালিক ছিল। আর্নল্ট-এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলি তাকে কুখ্যাত করে তুলেছিল। আর্নল্ট ১৯৮৭ সালে মোয়েট হেনেসি এবং লুই ভিটনকে একত্র করে খঠগঐ-এ বিনিয়োগ করেছিলেন। এরপর তিনি খঠগঐ-এ নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারিত্ব দখল করেন এবং সিইওদের ক্ষমতাচ্যুত করেন। সেইসঙ্গে কোম্পানির সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার, চেয়ারপারসন এবং সিইও হন।

বিল গেটস - সম্পদ ১১০ বিলিয়ন
একসময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস সম্প্রতি আবারো বলেছেন যে, তিনি নাকি বিশ্বের ধনী তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছেন। কারণ তার সম্পদের একটি বড় অংশ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হার্ভার্ড ছাড়ার পর গেটস ১৯৭৫ সালে তার শৈশবের বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট চালু করেন। কোম্পানিটি ১৯৮৬ সালে সর্বজনীন হয়ে যায়, আজ পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার সংস্থাগুলোর মধ্যে মাইক্রোসফট একটি এবং এখন এর মার্কেটমূল্য ২ ট্রিলিয়নেরও বেশি। গেটস মাইক্রোসফটে মাত্র এক শতাংশ শেয়ারের মালিক, যার মূল্য ২৬ বিলিয়নেরও বেশি। গেটস এবং তার প্রাক্তন স্ত্রী মেলিন্ডা- বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ব্যক্তিগত ফাউন্ডেশন। এটি ভ্যাকসিনসহ বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর কাজ করার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। গেটস মাইক্রোসফটে তার সিইও পদ ছেড়ে দেয়ার পরে ২০০০ সাল থেকে এটি তার বর্তমান আকার লাভ করেছে।

ওয়ারেন বাফেট- সম্পদ ৯৪.৬ বিলিয়ন
ওয়ারেন বাফেট ১৪ বছর বয়সে তার প্রথম ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি ‘ওমাহার ওরাকল’ নামে পরিচিত এবং সম্পদ তৈরির জন্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাকে GOAT (Greatest Of All Time) হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাফেট তার পোর্টফোলিও তৈরি করতে অবমূল্যায়িত কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগের দিকে মনোনিবেশ করেন। তার ফ্ল্যাগশিপ ফার্ম বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ছিল একটি টেক্সটাইল কোম্পানি, যেখানে বাফেট প্রথম ১৯৬২ সালে শেয়ার কিনেছিলেন। ১৯৬৫ সালের মধ্যে, তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার ছিলেন এবং ১৯৬৭ সালের মধ্যে, বাফেট কোম্পানির স্বার্থকে বীমা এবং অন্যান্য খাতে পরিচালিত করেন। এখন, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের একটি শেয়ার ২০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪ লাখ ২১ হাজার  ডলারে ব্যবসা করেছে এবং কোম্পানিটির মূল্য ৭০৫ বিলিয়নেরও বেশি। বাফেট ফার্মের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। গেটসের মতো বাফেটও তার সম্পদের একটি বড় অংশ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাফেট ২০১০ সালে বিল গেটসের সঙ্গে গিভিং প্লেজ চালু করেন এবং দম্পতির ফাউন্ডেশনে ৪০ বিলিয়ন দান করেন।
 

ল্যারি পেজ- সম্পদ  ৯১.৮ বিলিয়ন
ধনীর তালিকায় আরেকজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ল্যারি পেজের গল্প শুরু হয়েছিল একটি কলেজের ছাত্রাবাস থেকে। পেজ এবং তার বন্ধু সের্গেই ব্রিন ১৯৯৮  সালে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। এই জুটি অনন্য অ্যালগরিদম তৈরি করেছে যা গুগলের অনুসন্ধান প্রযুক্তিকে চালিত করে। প্ল্যাটফর্মটির চাহিদা বিশ্বের সমস্ত সার্চ ট্রাফিকের ৯৭ শতাংশের বেশি। পেজ ২০০১ সাল পর্যন্ত ফার্মের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তারপর ২০১১ থেকে ১৯ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর  সুন্দর পিচাই দায়িত্ব নেন। অ্যালফাবেটে পেজের ৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ার রয়েছে, যার মূল্য ৮৪.৪ বিলিয়ন। গুগল ২০০৫ সালে অ্যান্ড্রয়েড এবং ২০০৬ সালে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব কিনেছিল। এটি ২০১৫ সালে অ্যালফাবেটের অধীনে পুনর্গঠিত হয়েছিল। গুগল-এর রোবোটিক্স, জীবন বিজ্ঞান, স্বাস্থ্যসেবা এবং অ্যান্টি-এজিং-এ সেক্টরেও বিনিয়োগ রয়েছে।

সূত্র: gulfnews.com

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status