ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

মত-মতান্তর

স্ত্রীর প্রেমে মন্ত্রী যখন অন্ধ

শামীমুল হক

(৩ বছর আগে) ৮ মে ২০২২, রবিবার, ১২:২৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১:৫০ অপরাহ্ন

mzamin

মন্ত্রীর দাপট সারাদেশে। আর মন্ত্রীর স্ত্রীর দাপট ঘরে। মন্ত্রীর উপর। স্ত্রী বললেন, তাই এ কাজ করতেই হবে। দুদিন ধরে আলোচনা তাই রেলমন্ত্রীকে ঘিরে। স্ত্রীর ভাগনে রেলে চড়বেন। এতে আবার টিকিট কিসের? পুরো রেলই তো মন্ত্রীর। বোকা টিটিই শফিকুল এটা বুঝলেন না। কত বড় সাহস? জরিমানা তো করেছেনই আবার এসি কোচ থেকে বের করে দিয়েছেন। আর যায় কোথায়? মন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগ্নে প্রান্ত গভীর রাতে মাকে ফোন করে এই অপমানের কথা জানান।

ভাগ্য কাকে বলে, পাশেই ঘুমিয়ে মন্ত্রীর স্ত্রী। তাকে ডেকে ফোন ধরিয়ে দিলেন। সব শুনে তিনি ক্ষিপ্ত। ভীষণ ক্ষীপ্ত। মন্ত্রীকে জানালেন। শুক্রবার সারারাত রেল বিভাগে অস্থিরতা। সকালে টিটিই বরখাস্ত। প্রশান্তি নিয়ে বিছানায় হেলান দিলেন মন্ত্রীর স্ত্রী। শান্তি পেলেন মন্ত্রীও। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মাত্র শুরু। মন্ত্রীকে ধরলেন সাংবাদিকরা। তিনি বললেন, যাত্রীদের আমি চিনি না। আমার আত্মীয়ও নয়। 

কথা হলো টিটিই শফিকুলের বিরুদ্ধে অসম্পূর্ণ একটি অভিযোগ দেন তিন যাত্রীর একজন প্রান্ত। প্রান্ত’র মা হলেন মন্ত্রীর স্ত্রীর ফুফাত বোন। তিনি নিজেই এ তথ্য জানিয়ে মিডিয়াকে বলেছেন, মন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশেই টিটিই’কে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী নিজেও ফোন করে তাকে বলেছেন, আপা আমি যে বলেছি ওরা আমার কেউ নয় এতে মাইন্ড করবেন না। আমাকে এটা লিখতে হয়েছে। এতেই প্রমাণিত মন্ত্রী বিরাগের বশবতী হয়ে এ কাজ করেছেন। আর এর সঙ্গে সঙ্গে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি মন্ত্রী পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

এ মুহূর্তে দুই মাতালের কাহিনীটি খুব মনে পড়ছে। এক রাতে দুই মাতাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলেন একটি পাঁচতলা ভবন। এক মাতাল আরেক মাতালকে বললেন, দেখ কত বড় বিল্ডিং। আমাগো মহল্লায় তো এতো বড় বিল্ডিং নেই। ল্ এইটা লইয়া যাই। ওই মাতালও রাজি হলেন। কি করা? ধাক্কাতে হবে। শুরু হলো ধাক্কানো। ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক সময় তারা থামলো। 

 

ভাগ্য কাকে বলে, পাশেই ঘুমিয়ে মন্ত্রীর স্ত্রী। তাকে ডেকে ফোন ধরিয়ে দিলেন। সব শুনে তিনি ক্ষিপ্ত। ভীষণ ক্ষীপ্ত। মন্ত্রীকে জানালেন। শুক্রবার সারারাত রেল বিভাগে অস্থিরতা। সকালে টিটিই বরখাস্ত। প্রশান্তি নিয়ে বিছানায় হেলান দিলেন মন্ত্রীর স্ত্রী। শান্তি পেলেন মন্ত্রীও। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মাত্র শুরু। মন্ত্রীকে ধরলেন সাংবাদিকরা। তিনি বললেন, যাত্রীদের আমি চিনি না। আমার আত্মীয়ও নয়। 

 

একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে কতটুকু এগিয়েছি আমরা? অন্যজন আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো অনেক দূর। কিভাবে বুঝলি? দেখ আমরা যখন ধাক্কানো শুরু করি তখন চাঁদটা ছিল এখানে আর এখন দেখ ওখানে। অনেক দূর। চল কথা না বাড়িয়ে ধাক্কানো শুরু করি। শুরু হলো ধাক্কা। অনেকক্ষণ পর দুজনে হয়রান হয়ে পড়ল। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। এবার দুজন কাপড় খুলে পেছনে রেখে ধাক্কাতে থাকল। ওরা ধাক্কাতে মগ্ন। এ সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল এক চোর। সে তাদের কাপড় নিয়ে পালাল। অনেকক্ষণ পর দুই মাতাল ফের থামল। একজন বলল, দেখতো কতটুকু এগিয়েছি? অন্যজন বলল, অনেক দূর। কিভাবে বুঝলি? আরে আমরা যে কাপড় রেখেছিলাম দেখ সেটা নেই। তার মানে কাপড়গুলো অনেক পেছনে পড়েছে। আর আমরা এগিয়েছি। চল দেরি না করে ধাক্কা দেই। এবার ধাক্কাতে ধাক্কাতে সকাল হয়ে গেছে। তারা দেখলো বিল্ডিং যেখানে ছিল সেখানেই আছে।

মাঝখানে সারারাত কষ্ট করেছে। আর তাদের কাপড় হারিয়েছে। রেলমন্ত্রীর এ ঘটনা মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা মন মানসিকতায় একটুও এগুইনি। দুই মাতালের মতোই রয়ে গেলাম। না  হয়, যেখানে টিটিই শফিকুলকে বাহবা দেয়ার কথা সেখানে শাস্তি দেয়া হলো। হায় সেলুকাস। সম্রাট শাহজাহান স্ত্রীর প্রেমে তাজমহল বানিয়েছেন। বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও স্ত্রীর প্রেমে দেশে সাড়া জাগানো কাজ করেছেন। এটাও তো একটা তুলনা। কি বলেন?

আসলে এত বেশি প্রেমে মজেছেন যে অন্ধ হয়ে গেছেন মন্ত্রী। যার কারণে সমাজ উপকারের বদলে পায় অপকার। এই অতি প্রেমের পরিণতি হয় ভয়াবহ। এর রেশ গিয়ে পড়ে সমাজ, সংসার, রাষ্ট্র সব কিছুতেই।

মত-মতান্তর থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

মত-মতান্তর সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status