মত-মতান্তর
মিনারের শিল্পী হামিদুর রাহমান
এম হাসান আলী
(২ বছর আগে) ১ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৪:২৪ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক সেই ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি স্তম্ভ আমাদের প্রানের শহীদ মিনার। এই শহীদ মিনারের নকশাকার শিল্পী হামিদুর রাহমান । শিল্পী রাহমানের জন্ম ০১ লা সেপ্টেম্বর ১৯২৮ সালে পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে সংস্কৃতি ঘেঁষা এক পরিবারে। বাবা মীর্জা ফকির মোহাম্মদ গান করতেন আর মা জামিলা খাতুন কবিতা লিখতেন। পরিবারের অন্য ভাই-বোনেরাও নাটক-গান-ছবি আঁকা সহ পুরনো ঢাকার সংস্কৃতি নিয়ে ব্যাস্ত থাকতেন। শিল্পী রাহমানের আশেক লেনের বাসাটি সেই সময়ে ছিল এই অঞ্চলের কবি-সাহিত্যকদের আড্ডার স্হল।
শৈশবে শিল্পী রাহমান শাখারি বাজার-তাঁতি বাজার-ইসলামপুরে ঘুরে ঘুরে পুরনো ঢাকার স্থানীয় শিল্পীদের কাজ দেখতেন। বাড়ির কাছে দিয়ে বয়ে চলা বুড়িগঙ্গা নদীর ঘাটে বাঁধা নৌকাতে বসে আড্ডা দিতেন অন্যান্য কবি-শিল্পীদের সাথে। নদীর তীরেই রচনা করতেন কবিতা , গল্প। শিল্পীর পূর্ব নাম ছিল বশির আহমদ। একই মহল্লায় থাকতেন ঢাকার অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান। একদিন শিল্পী রাহমান কবিকে নিজেদের বাসায় নিমন্ত্রণ করেন ; সেই থেকে দুজনের বন্ধুত্ব। জোড়া ধরে নাম রাখেন হামিদুর রাহমান - শামসুর রাহমান।
সেন্ট গ্রেগরি স্কুল-ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল শেষে শিল্পী রাহমান ঢাকা আর্ট স্কুলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নিকট শিল্পকলার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে ফ্রান্স ও লন্ডন থেকে আর্ট ও ডিজাইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন । শিল্পী ম্যুরাল বা দেয়াল চিত্র বিষয়ে ইতালিতে প্রশিক্ষণ নেন। হামিদুর রাহমানকে আমরা শহীদ মিনারের নকশাকার হিসেবে জানলেও বাংলাদেশে ম্যুরাল কাজে তিনি অদ্বিতীয়।
ভাষা আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৫৬ সালে তৎকালীন সরকার একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানের আশায় সবার কাছ থেকে নকশার আহ্বান করেন। উক্ত প্রতিযোগিতায় শিল্পী হামিদুর রাহমানের নকশা নির্বাচিত হয়। কিছুদিন কাজ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় । ১৯৬২ সালে আবারও শহীদ মিনার নির্মাণে নকশা বাছাইয়ের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি শিল্পী হামিদুর রাহমানের নকশা বেছে নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানিরা শহীদ মিনার গুড়িয়ে দিলে ১৯৭২ সালে সরকার শিল্পী হামিদুর রাহমানের নকশা অবলম্বনে আবারও শহীদ মিনার গড়ে তুলেন।
পরবর্তীতে শিল্পী রাহমান আমেরিকা হয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। শিল্পীর এক মেয়ে দুই ছেলে। ১৯৮৮ সালের ১৯ শে নভেম্বর শিল্পী রাহমান কানাডায় মৃত্যুবরণ করেন। কবি সুফিয়া কামালের পরামর্শে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে ২৫ শে নভেম্বর ভাষা শহীদদের পাশে শিল্পীর লাশ দাফন সম্পন্ন হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশাকার হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮০ শিল্পী হামিদুর রাহমানকে একুশে পদকে ভূষিত করেন এবং ধানমন্ডির ১০ নং সড়কটি শিল্পী হামিদুর রাহমান সড়ক হিসেবে ঘোষণা করেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ঢাকার ছেলে শিল্পী হামিদুর রাহমানের জন্মবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখকঃ এম হাসান আলী, ব্যাংকার ও ঢাকা-কর্মী।