ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শরীর ও মন

ক্যান্সার নিরাময়ে ‘আধুনিক হোমিওপ্যাথি’-এর ভূমিকা

ডা. মাহমুদুল হাসান সরদার
২৩ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার

‘ক্যান্সার সম্পূর্ণ নির্মূল হয় না’ এই ধারণা আজ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও ভেঙে দিচ্ছে। সঠিক হোমিও ডোজ যে কতটুকু কার্যকরী তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ হলো খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। কিছুদিন আগেও থেরাপি, সার্জারি ইত্যাদি ক্যান্সার নিরাময়ের প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু ওষুধ প্রয়োগে ক্যান্সার রোগীরা আজ ভালো হওয়াতে অনেক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা এখন থেকে আশার আলো দেখছেন। অনেকদিন ধরেই ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আসছেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রে এমনই একটি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীকে প্রায় ছয় মাস ধরে ডোসটারলিমাব নামের একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। ওষুধটির জেরে পরীক্ষায় অংশ নেয়া রোগীদের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়েছেন। বিশ্বে এবারই প্রথম কোনো ওষুধে ক্যান্সার রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেল। 
ডোসটারলিমাব এমন একটি ওষুধ, যেটিতে গবেষণাগারে তৈরি মলিকিউলস রয়েছে। এই মলিকিউলস মানুষের শরীরে বিকল্প অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে। গবেষকরা মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ১৮ জন ক্যান্সার রোগীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। সবাই কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ছয় মাস ধরে প্রতি তিন সপ্তাহ পরপর ওষুধটি প্রয়োগের পর তাদের শারীরিক পরীক্ষায় দেখা যায় সবাই ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন। কারও শরীরে টিউমারের অস্তিত্ব ছিল না ওষুধটি প্রয়োগের পর।
এই গবেষণার নিবন্ধ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে। সেøায়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক চিকিৎসক আন্দ্রেয়া সেরেক বলেন, ট্রায়ালে অংশ নেয়া রোগীরা যখন তাদের ক্যান্সার মুক্তির খবর জানতে পারলেন, সেটার চেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আর ছিল না। অনেকে খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলেন।ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়। রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা যদি তিন বছর থাকে কেমোথেরাপি দিয়ে সেই সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব এই ধারণা ঠিক। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ‘এক্সপেনশন অফ লাইফ’ বাড়ানোর পাশাপাশি ক্যান্সার সারিয়ে তুলেছে এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। অনেকেই সুস্থ হয়ে ১০-১২ বছর পর্যন্ত ভালো আছেন। ক্যান্সারের খুব জটিল অবস্থায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু করলেও রোগীকে অনেকটাই সুস্থ করে দেয়া যায়। অন্য পদ্ধতিতে চিকিৎসায় যেখানে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম সেখানে এই হোমিওপ্যাথিতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
যেসব ক্যান্সারে হোমিওপ্যাথি সবচেয়ে ভালো কাজ দেয়
যেকোনো ক্যান্সার কতটা নির্মূল হবে তা নির্ভর করে রোগী কোন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত ও কোন স্টেজে চিকিৎসা করছেন তার ওপর। প্রস্টেট ক্যান্সার, ইউরিনারি ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেন টিউমার, অস্ট্রিওসারকোমা, স্কিন ক্যান্সার, সার্ভিক্স ক্যান্সারের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা সবচেয়ে বেশি কাজ দেয়। তবে যে রোগীর ক্যান্সার হচ্ছে তার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে রোগ কতটা সারবে। যেমন রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কমে যায়। সেক্ষেত্রে ক্যান্সার হলে রোগ সারানো জটিল হয়। তবু এসব ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা যথেষ্ট ভালো কাজ দিচ্ছে।
যে পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়লে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণ চাইলে সঠিক শনাক্তকরণ হওয়া খুবই দরকার। অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার অনুমান করলেও তা ক্যান্সার নাও হতে পারে। আবার কখনো ক্যান্সারের লক্ষণ নেই কিন্তু হতেই পারে ক্যান্সার। কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সার নিজে থেকে ভালো হয়ে যেতে পারে। হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা ক্যান্সারের প্রথম স্টেজে শুরু করলে উপকার অবশ্যই পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা জটিলতর হলে চিকিৎসা শুরু হয়। এক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথি কাজ দেয়। প্রি-ক্যান্সারাস স্টেজে কেউ যদি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন সেক্ষেত্রে ক্যান্সার অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।

ট্র্যাডিশনাল হোমিওপ্যাথি ও  হোমিওপ্যাথি ক্যান্সার চিকিৎসা দুটি ভিন্ন পথ
শুরুতে ক্যান্সারের সঠিক ডায়াগনস্টিক করা প্রয়োজন। এই ডায়াগনস্টিক হোমিওপ্যাথি কিংবা অ্যালোপ্যাথি সবক্ষেত্রেই এক। প্রথম অবস্থায় হোমিওপ্যাথি অনেক ক্ষেত্রে সফল না হলে  প্রয়োজন পড়ে রোগীকে গভীরভাবে দেখার ও কিছু পরীক্ষা করে যে ক্যান্সার হয়েছে সেই সম্পর্কিত কী কী লক্ষণ তা বিবেচনা করে চিকিৎসা করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট ছকে বাধা চিকিৎসায় এই চিকিৎসা পদ্ধতি আবদ্ধ নয়। রোগী ও রোগীর ক্যান্সার সম্পর্কিত লক্ষণ বিবেচনা করে তার মতো চিকিৎসা করা হয়। তাই একই কারণে দু’জনের ক্যান্সারের লক্ষণ আলাদা হলে চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন হবে। ক্যান্সারের পেছনে মানসিক কারণ, পারিবারিক কারণ, শারীরিক কারণ বিবেচনা করে চিকিৎসা করা হয়। কী ধরনের ক্যান্সার, কীভাবে ছড়াচ্ছে, ব্যথা-যন্ত্রণার মাত্রা, লক্ষণ সমস্ত বিবেচনা করে তবেই চিকিৎসা হয়।

আধুনিক হোমিওপ্যাথিতে কি কেমোথেরাপির প্রয়োজন আছে ?
ক্যান্সার রোগীকে কেমোথেরাপি কিংবা রেডিয়েশন দেয়া হলে তা ক্যান্সারকে আরও বাড়িয়ে দেয়। হাড়ে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে তা সারিয়ে তোলা খুবই কঠিন। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক মানের হোমিও ওষুধ প্রয়োগে ও আধুনিক চিকিৎসায় কোনো রেডিয়েশনের ব্যবহার নেই। আমাদের কাছে এমন রোগীর সংখ্যাই বেশি যারা কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন দিয়েছে, ক্যান্সার ছড়িয়ে গিয়েছে তারপর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাতে এসেছেন।

যে কারণে কেমোথেরাপি ক্ষতিকর হতে পারে?
ক্যান্সার টিস্যুর পাশাপাশি তার সঙ্গে যুক্ত অন্য টিসুকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে কেমোথেরাপি। মূলত কেমোথেরাপি করে অ্যাবনরমাল কোষকে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেই অস্বাভাবিক কোষকে নষ্ট করতে গিয়ে সুস্থ কোষগুলোকেও নষ্ট করে দিচ্ছে। চুল পড়ে যাওয়া আবার চুল গজানো, রোজ নতুন রক্ত উৎপন্ন হওয়া, এই যে নর্মাল ফাংশন এটাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কেমোথেরাপি। সেক্ষেত্রে আধুনিক হোমিওপ্যাথি রোগ সারানোর পাশাপাশি শারীরিক অন্য কাজকর্মকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে আরও হেলদি করছে। শুধুমাত্র যে সেলটি ক্ষতিগ্রস্ত বা ক্যান্সার আক্রান্ত সেটাকেই সুস্থ করার চেষ্টা করছে। এই চিকিৎসায় ক্যান্সার রোগীর ‘কোয়ালিটি অফ লাইফ’ অনেক ভালো হয়।
একটা কথা মনে রাখতে হবে ক্যান্সার আক্রান্ত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগী নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসবেন তত তাড়াতাড়ি রোগী সুস্থ হবেন৷ নানারকম চিকিৎসা করার পর হোমিওপ্যাথি শুরু করতে এলে তা সারানো অনেক জটিল। প্রথম অবস্থায় ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়।

লেখক: হোমিও ক্যান্সার চিকিৎসক ও গবেষক,  সরদার হোমিও হল
৬১/সি, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সেল: ০১৭৩৭-৩৭৯৫৩৪

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status