অনলাইন
সিলেটে ফখরুল
নির্বাচন পিছিয়ে গেলে ‘মবোক্রেসি’ বাড়বে, বিনিয়োগ আসবে না
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
(৫ ঘন্টা আগে) ৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ৫:০৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:৩৬ অপরাহ্ন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন- নির্বাচন যত দেরি হবে দেশ ততোই পিছিয়ে যাবে। দেশে বিনিয়োগ আসবে না। মবোক্রেসি বাড়বে। জুডিশিয়ারি ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। আইনশৃঙ্খলাও প্রশ্নের মুখে পড়বে। সেই জন্য দরকার একটা নির্বাচিত সরকার। যেই সরকারের পেছনে রয়েছে জনগণ। সোমবার সিলেটে বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এমএ মালিকের আয়োজনে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সহযোগিতায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফেরাত ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব। বক্তব্যের শুরুতে তিনি মরহুম এম সাইফুর রহমান ও গুমকৃত এম ইলিয়াস আলী এবং জুলাই-আগস্টের শহীদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন- নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। মানুষের কাছে যান। মানুষ যাতে বুঝতে পারে বিএনপি ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন- তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করে ২৬শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন, এই জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন- আমরা যখন সুযোগ পাই সিলেট আসি। কারণ হচ্ছে, শত শত বছর পূর্বে এখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। সত্য, সুন্দর ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) দরগায় আমরা আসি। আমি নয় আমরা নিই সারা দেশ বিদেশ হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন। কারণ তারা এই মহান পুরুষরা যারা অন্ধকারকে আলোকিত করার জন্য মানুষকে আলোকপাত করেছিলেন, সেই মানুষগুলোকে শ্রদ্ধা জানাতে চায়। তিনি বলেন, এটা আমাদের পুণ্যভূমি। সিলেট আমাদের কাছে আরো প্রিয় আরেকটা কারণ আছে তা হচ্ছে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের শ্বশুরবাড়ি। সেই জন্য আমরা এখানে আসতে আনন্দ পাই, শান্তি পাই। তিনি বলেন- এমনি এমনি হঠাৎ করে হাসিনা পালায় নাই, বহু মানুষের সংগ্রাম, রক্ত, ত্যাগ মিলিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলাম। আমরা তো লড়াই করেছি গণতন্ত্রের জন্য। আমরা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে, নারীরা নিরাপত্তা পাবে, তরুণরা কাজের সুযোগ পাবে, মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে এমন একটা দেশ আমরা চাই। সেই দেশ তৈরির জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করেছি। আর আমাদের এই সংগ্রামের নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো অসুস্থ অবস্থায় আমাদের পরমার্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন- হাসিনা গণতন্ত্র, ভোট, পত্রিকা বন্ধ করেছিলো। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল। সেই অবস্থায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র এনে নতুন সযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সেই দল সেই যে দল স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, কর্মস্থান সৃষ্টি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চাই। সেজন্য বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছি। শহীদ জিয়ার রহমান যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই দেশ আমরা গড়তে চাই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেউ যাতে আঙ্গুল তুলে না বলতে পারে আমরা জমি দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি, জায়গা দখল করেছি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ। এ সময় তিনি সিলেটের যেখানে বেগম জিয়া সমাবেশ করেছিলেন সেখানে এবার তারেক রহমানকে নিয়ে দেখা হবে বলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন- হাসিনা চলে গেছে তার দোসররা দেশেই আছে। সচিবালয় থেকে জেলা উপজেলায় তারা আছে। তারা ভোট চায় না। নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, এই সরকারের ভেতরে আওয়ামী লীগের আমলারা যা করেছে, তাতে এই সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। তবে আমরা আমলাদের এই চক্রান্তকে প্রতিহত করবো, প্রতিরোধ করবো। অতঃপর নির্বাচন আদায় করবো। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত হাসিনার পতনের জন্য যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মরণ করি।
তিনি বলেন, আমরা হাসিনা মুক্ত হয়েছি কিন্তু ষড়যন্ত্র মুক্ত হই নাই। বিএনপির বিরুদ্ধ সবাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা দেখতে পারছি, একটি দল যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারা একেক দিন একেক কথা বলছে। কখনো বলছে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, কখনো বলছে ভোটের পরিস্থিতি হয়নি, কখনো বলছে নির্বাচন হলে অসুবিধা নাই, কখন কি বলে ঠিক নেই। তবে এটা বুঝা যায় যে তারা সুষ্ঠ নির্বাচন চায় না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ. জেড. এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে প্রতিরোধ বা থামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা মহান আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। যারা ষড়যন্ত্র করছেন, হুমকি দিচ্ছেন, মনে রাখবেন বিএনপি জনগণের দল। এ দেশে আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি অন্যায়, অনাচারের দল। বাকশাল কায়েম করে তারা দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এমএ মালিক বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ও শাসনের অবসান ঘটাতে প্রবাসে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্ভীকভাবে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন। তারা বিদেশের মাটিতে থেকেও ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনকে জাগিয়ে রেখেছিলেন।
অনুষ্ঠানে আরোও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, হাবিবুর রহমান, তাহসিনা রূশদী লুনা, ডা. এনামুল হক চৌধুরী, মুহিদুর রহমান, ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন, আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন ও মিফতাহ সিদ্দিকী, বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক ব্যরিস্টার এম এ সালাম, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সদস্য নিপুন রায়, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, এডভোকেট হাদীয়া চৌধুরী মুন্নী, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন- মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী। এদিকে- বিকেলে সিলেটের দরগাহ গেইটের একটি হোটেলে জুলাইয়ে আহত ও নিহত পরিবারকে সম্মান জানান মহাসচিব সহ বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এতে সিলেট জেলা ও নগর বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
মির্জা ফখরুল এখন কাদেরের জায়গা দখল করেছে, জনগণ আর বি এন পিকে ভোটই দেবে না, ওরা মাটের অবস্থা মোটেও জানে না।
Mobocracy? Why is Mirza Fakrul copying the RAW narrative? Wasn't it the so called mob that succeeded to get our second independence from the shackles of the RAW agents (Hasian et al) in our country - where BNP had suffered abject failures for over 15 years?
নির্বাচন পিছিয়ে গেলে ‘মবোক্রেসি’ বাড়বে? And if the election is held before the vital reforms then what will increase? Extortion, corruption, use of the police and judiciary to victimise the ordinary people, and a return to India/RAW appeasement - by the BNP?
Mew
Why you are not accomplishing and completing re-election tasks?
দুই মাসও টিকবেন না। লিখে রাখুন। ভারতের দালালি করে চলবেন। দোয়া করি ক্ষমতায় যেন আসেন।
টেনশন নিয়েন না। সবই হবে, ইনশাআল্লাহ। সবার আগে সংস্কার সম্পন্ন হতে সহযোগিতা করুন। এরপর অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন হোক। নির্বাচনের আগে সংস্কার সম্পন্ন না হলে পরে আর হবেনা।