ঢাকা, ৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী

আমাদের অস্ত্র হতে হবে—জাতীয় ঐক্য, এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার

(৫ ঘন্টা আগে) ৭ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ৩:৫২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:১১ অপরাহ্ন

mzamin

ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)-এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেছেন, ‘আমাদের অস্ত্র হতে হবে—জাতীয় ঐক্য। ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।’ রোববার রাজধানীর গুলশান রেনেসাঁ হোটেলে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলেন তিনি।

ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘আমরা এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ মেরুকরণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে নানাভাবে চ্যালেঞ্জ করছে। রাষ্ট্রের শত্রু সবসময় সীমান্তের ওপারে অবস্থান করে না—তা মাঝেমধ্যে সমাজের ভেতরেই বিভাজন, বিভ্রান্তি, গুজব, ঘৃণা আর আত্মঘাতী রাজনীতির মাধ্যমে জন্ম নেয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অস্ত্র হতে হবে—জাতীয় ঐক্য। ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির এ মাসে তাই সকল শহীদ, নিপীড়িত, ছাত্র-জনতা-বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মী ও নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি; যাদের পরিশ্রমের ফলেই আজকে আমরা বাংলাদেশের একটি নতুন  সম্ভাবনাময় পরিবেশ পেয়েছি। পাশাপাশি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যারা  বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আমাদের জাতীয়  পরিচয় ও মর্যাদাকে মহিমান্বিত করে গেছেন তাদের সকলের প্রতি ও গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এই ক্ষেত্রে প্রায় ২ দশক ধরে স্বৈরাচার  ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনে  যারা  সংগ্রামী  ভূমিকা রেখেছেন তাদের  প্রতিও  কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’  

গণতন্ত্রের  পূর্ণাঙ্গযাত্রায় জাতীয়  নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন সাবেক এই সেনাকর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘কারণ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য  বিভিন্ন  বিপদ, ঝুঁকি, ষড়যন্ত্র, বৈরিতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ভূরাজনৈতিক  কৌশলগত বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পটভূমিতে পরিস্থিতির  জটিল মাত্রা ও পর্যায়  সমূহ বাংলাদেশকেও  প্রভাবিত করছে। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল এবং ভারত-পাকিস্তান  যুদ্ধের উদাহরণ একত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’

ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধাবস্থা, অস্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গা  সংকটের অনিশ্চিত গতি, রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির আধিপত্য বিস্তার, বাংলাদেশ সীমান্তে এর প্রভাব, আঞ্চলিক, দ্বিপাক্ষিক ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশকে জটিল করে তুলেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ,ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক শক্তি সমূহের গোপন প্রতিযোগিতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত তৎপরতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এইসব সংকটময় ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কায়েমের চলতি অভিযাত্রায় বিরাট এক বাধা, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বহুমুখী চ্যালেঞ্জ, সংশয়, অনিশ্চয়তা, অজানা এবং গোপন আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিত্ব মনে করেন সাম্প্রতিককালে পতিত একটি  রাজনৈতিক শক্তির অপছায়া যেকোনো সময় দেশের ভেতর গভীর সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি একটি দেশ নানাবিধ অন্যায্য আচরণ পদক্ষেপ, বৈরী মনোভাব এবং তাদের গণমাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণাও বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এর সাথে আছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্রের গোপন ও সন্দেহজনক তৎপরতা।’

তিনি বলেন, ‘তবে এটা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার বর্তমান চলমান প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টার ভেতর আমরা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ বিভিন্ন রকম ঘটনা প্রবাহ উপলব্ধি করতে পারছি। এই বিষয়ে সরকারি দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ  ব্যক্তিবর্গের সুস্পষ্ট সচেতনতা থাকা জরুরি।’

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এইসব বিষয়ে গবেষণাগত, বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ, মতামত ও সুপারিশ যথা স্থানে তুলে ধরবো। এই পটভূমিতে তাই আমরা মনে করি জাতীয় জীবনে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবেলার  লক্ষ্যে উল্লেখিত বিষয়ের  প্রয়োজনীয়  জ্ঞান, সচেতনতা, সক্ষমতা, বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি থাকা দরকার। এটা তখনই সম্ভব হবে যদি বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উন্নতিকরণ ও কার্যকরী ব্যবস্থার সক্ষমতাকে কৌশলগত ভাবে সমৃদ্ধ করা হয়। এক্ষেত্রে দরকার দেশের রাজনৈতিক শক্তিসমূহ, জনগণ এবং সরকারের সদিচ্ছা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ তখনই সম্ভব হবে যদি জনগণ ও দেশের রাজনৈতিক শক্তি ও অন্যান্য শক্তির পক্ষ থেকে সরকারের সাথে মিলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।’

সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্যই আজকের এই আলোচনা ও আপনাদের নিয়ে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যদি কোনো কারণে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি গভীর সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে কীভাবে সকল পক্ষের উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে জাতীয় ঐকমত্য বা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা যায় সেই জন্য আজকে আপনারা খুবই সংক্ষিপ্তভাবে পরামর্শ দেবেন, আলোচনা করবেন। আপনাদের সেই আলোচনার ফলাফলকে কেন্দ্র করে আমরা ভবিষ্যতে গবেষণারত ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনা সভা ও কর্মশালার আয়োজন করব। তার মাধ্যমে সংকটের প্রকৃত পরিধি ও পরিচয়  চিহ্নিত করতে পারব। তাই আমি আপনাদের কাছে আহ্বান জানাই আজকে আপনারা খুবই সংক্ষেপে কেবলমাত্র আপনাদের ধারণা সমূহ ও কিছু পরামর্শ উপস্থাপন করবেন যাতে করে আমরা কিংবা অন্যান্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগণ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছে বিশদ ও বিশ্লেষণমূলক বিস্তারিত আলোচনা আশা করছি না বরং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতার ক্ষেত্রে আপনাদের সমর্থন ও অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ও সমর্থন আশা করছি যা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় ভবিষ্যতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি  জাতির সামনে জনগণের সামনে এমন একটি চিত্র  ফুটে উঠবে যে আমরা সকলেই সবার আগে বাংলাদেশ ভাবনায় জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ এবং দল মত নির্বিশেষে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত এবং অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য এটাই।’

এফ এস ডি এস-এর মূল আদর্শ ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ বা ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই নীতি আদর্শের আলোকে আমাদের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে সবার আগে বাংলাদেশ নীতির মূল লক্ষ্য। তাই সবকিছুর ঊর্ধ্বে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করাই হলো সকলের জন্য রাষ্ট্রের জরুরি কাজ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা রক্ষার ভিত্তি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করাই হচ্ছে জাতীয় কর্তব্য। এই আদর্শকে সামনে রেখেই আমরা আজকে এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করেছি।’  

তিনি বলেন, ‘‘এই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য হলো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা—জাতীয় সংহতি ও অগ্রগতির জন্য সকলের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা। ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের অপরিহার্যতা’—এটি শুধুমাত্র একটি শিরোনাম নয়, বরং একটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, ভবিষ্যৎ এবং স্বাধীনতার জন্য এক চরম বাস্তবতা।’

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status