বাংলারজমিন
কালাইয়ে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে গ্রামবাসীর রাস্তা পারাপার
কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের সাঁতার পূর্বপাড়া গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের প্রধান রাস্তাটি সরকারি একটি খাস পুকুরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শতাধিক পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। ফলে তারা বাধ্য হয়ে এখন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি একটি অস্থায়ী রাস্তার উপর দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।
জানা গেছে, ‘মাগুড়া গাড়ি’ নামের সরকারি পুকুরটির আয়তন প্রায় দুই বিঘা। এটি সরকারি খাস জমি হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং ইজারার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এ চাষাবাদে পুকুরটি ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়ে পূর্বপাড়া গ্রামের একমাত্র পুরনো চলাচলের রাস্তাটি গিলে ফেলেছে। রাস্তাটি বিলীন হওয়ায় গ্রামবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই সংকট কাটাতে প্রায় আট মাস আগে গ্রামবাসী নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয়ভাবে চাঁদা সংগ্রহ করে প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বাঁশ ও কাঠের রাস্তা নির্মাণ করেন। টানা তিনদিন ধরে নির্মিত এই রাস্তাই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয় বরং প্রতিদিনই নতুন করে বাড়ছে ঝুঁকি ও আতঙ্ক।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এই রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে শিশু, বৃদ্ধ, নারী ও রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে রাস্তাটি আরও বেশি পিচ্ছিল ও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুস আলী বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা পার হতে গিয়ে বুক কাঁপে। কিন্তু করার কিছু নেই। সরকার যদি আমাদের রাস্তাটি নির্মাণ করে দিতো তাহলে আমরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারতাম। স্থানীয় বাসিন্দা ইউছুফ আলীর ৬ বছরের কন্যা সারাবান তাহুড়া এই বাঁশের রাস্তা পার হতে গিয়ে ইতিমধ্যেই তিনবার পুকুরে পড়ে গেছে। ভাগ্যক্রমে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সে প্রাণে বেঁচে গেছে। ইউছুফ বলেন, সকালে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দেই ঠিকই কিন্তু সারাদিন বুক ধড়ফড় করে! ৭৫ বছর বয়সী একাব্বর হোসেন জানান, জরুরি কাজ ছাড়া এখন আর বাড়ির বাইরে যাই না। এই বয়সে বাঁশের রাস্তা পার হতে ভীষণ ভয় লাগে।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান বলেন, আমার কাছে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি। তবে স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরপরই আমি গুরুত্বের সঙ্গে এটি বিবেচনায় নিয়েছি। আমি ঘটনাস্থল দ্রুত পরিদর্শন করে পুকুরটির অবস্থান, ইজারার শর্ত এবং গ্রামীণ রাস্তার গুরুত্ব সবকিছু যাচাই করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি টেকসই সমাধানের চেষ্টা করবো।