বাংলারজমিন
করেরহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুরের মানবেতর জীবন
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন মিরসরাই করেরহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুর রহমান মানবেতর জীবনযাপন করছে। বনখেকোদের ডাম্পার ট্রাকের ধাক্কায় গত ৬ মাস হাসপাতালের বারান্দায় ও বিছানায় কেটেছে সময়। এ সময় তার চিকিৎসায় প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রয়োজন আরও ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে জমানো টাকা, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ও ঋণ করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। অথচ যে বিভাগের জন্য অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় সে বিভাগ থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা পায়নি। অসুস্থ মা, দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ভাড়া বাসায় থাকছেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। বনখেকো, পাহাড়খেকোদের জন্য আতঙ্ক ছিল এই কর্মকর্তা। তার সততা ও পেশাদারিত্বই কাল হলো। জানা যায়, অবৈধভাবে সরকারি সংরক্ষিত বন ভূমিতে অবৈধ প্রবেশ করে বালু উত্তোলন ও পাচারকালে গত ১৫ই জানুয়ারি রাত ৯টায় করেরহাট রেঞ্জাধীন করেরহাট বিট কাম চেক স্টেশনের রামগড়-সীতাকুণ্ড রিজার্ভ ফরেস্ট মৌজায় সংরক্ষিত বন ভূমির ঝিলতলী এলাকা অবৈধ বনখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযানে যায় একটি টিম। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারী বন সংরক্ষক মো. মাহদী হাসান (রেঞ্জে প্রশিক্ষণরত), রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুর রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্সসহ এই অভিযানে অংশ নেয়। টিলা কেটে বালুভর্তি করে ডাম্পার ট্রাকে করে বালু পাচারকালে ওই গাড়িকে সিগন্যাল দেয় এই রেঞ্জ কর্মকর্তা। সিগন্যাল না মেনে হত্যার উদ্দেশ্যে তার উপর গাড়ি তুলে দেয় ড্রাইভার। এতে পায়ের উপর গাড়ি তুলে দেয়ায় বাম পায়ের পিউমার হাড় মারাত্মকভাবে ভেঙে যায়। এ ঘটনায় স্টেশন কর্মকর্তা মোতায়েন হোসেন বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা গ্রামের মো. মোস্তফার ছেলে নুরুদ্দিন (৪৮), একই ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাই গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুল (৩৩)। এদের মধ্যে নুরুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হলেও অপর আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা তারিকুর রহমান জানান, গত ১৮ই জুন ভাঙা পা নিয়ে পুনরায় কর্মস্থলে যোগদান করি। কর্মচারী কল্যাণ ফান্ড থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সহযোগিতা করা হয়। সহযোগিতা চেয়ে আবেদনও করেছি তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার সহযোগিতা পাইনি। পরবর্তীতে চিকিৎসা ব্যয় কীভাবে জোগাড় করবো তা নিয়ে চিন্তিত আমি। চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক হারুনুর রশিদ জানান, বনবিভাগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন রেঞ্জ কর্মকর্তার এভাবে আহত হওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।