মত-মতান্তর
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক গতিশীলতায় চীন ও ভারতের প্রভাব
ড. মাহফুজ পারভেজ
(৯ মাস আগে) ১৮ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:১৮ অপরাহ্ন

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক গতিশীলতা বহুমাত্রিকভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রলম্বিত বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেই চলতি ২০২২ সালে নতুন মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া। পুরো অঞ্চলেই চলছে অভ্যন্তরীণ পালাবদল ও বহিস্থঃ মেরুকরণ। আঞ্চলিক পরিসরে প্রভাব বাড়াতে যুগপৎ তৎপর চীন ও ভারত। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে পরাশক্তিগুলোর তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ঘটনাপ্রবাহের দিকে।
'ভারত সাগরের মুক্তা' বা 'পার্ল অব ইন্ডিয়ান ওশান' নামে খ্যাত এবং আপাত শান্ত, স্থিতিশীল ও পর্যটনের স্বর্গরাজ্য শ্রীলঙ্কা একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের নিপতিত হলে দক্ষিণ এশিয়া আবার বিশ্বসংবাদের শিরোনাম হয়। এপ্রিল মাসে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয় দেশটিতে। তারপরে জুলাইয়ের শুরুতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। দেশত্যাগী প্রেসিডেন্ট এখনো আশ্রয়ের সন্ধানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ধর্না দিচ্ছেন।
দক্ষিণ এশিয়ার অপর দুই গুরুত্বপূর্ণ দেশ পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ তাদের ক্ষয়প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে স্থিতিশীল করতে ঋণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ- এর কাছে পৌঁছেছে।
সাধারণভাবে শ্রীলঙ্কার পতনশীল রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ, সংঘাত ও অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণ হিসাবে 'সমস্যাযুক্ত চীনা ঋণের প্রতি' ইঙ্গিত দেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কিত থিঙ্কট্যাঙ্ক ও বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণ এশিয়ার দুই শক্তিধর রাষ্ট্র চীন ও ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার উপরও জোর দিতে শুরু করেন গবেষকরা। বিশেষত, পশ্চিমা শক্তিবলয়ের জোট 'ইন্দো-প্যাসিফিক কোঅপারেটিভ ফ্রেমওয়ার্ক'- এর বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক ফোকাসে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকার কারণে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী ও নির্ধারক শক্তি হিসেবে সাম্প্রতিককালে নিজের জায়গা মজবুত করতেও সমর্থ হয়েছে।
পশ্চিমা পণ্ডিত ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণায় একটি কমন প্রশ্নও বারবার উচ্চারিত হচ্ছে: "বর্তমান সংকট কি ভারতের জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় তার উপস্থিতি পুনরুদ্ধার করার ও প্রভাব বিস্তারের একটি নতুন জানালা খুলে দিচ্ছে?"
প্রশ্নটি দৃশ্যত সরল মনে হলেও সম্ভাব্য উত্তর যথেষ্টই জটিল। একাধিক দেশের প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের আবাসস্থল এবং বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির কয়েকটি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অবস্থিত।
যদি দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক সম্ভাবনা কথাই ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে, বৃহত্তর কৌশলগত মেরুকরণের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান, যা নানা শক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'-এর মাধ্যমে চীন ধীরে ধীরে দক্ষিণ এশিয়ায় তার সমুদ্র সংযোগ-সম্পর্ক প্রসারিত করেছে, যা ভারত-চীন সীমান্তে ক্রমাগত উত্তেজনাসহ বেইজিংকে নয়াদিল্লির আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষার সাথে আরো ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত করেছে। চীনের প্রচেষ্টার পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে ভারতও 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতি'তে তৎপর।
২০১৪ সালে ভারত সর্বপ্রথম 'প্রতিবেশী প্রথম নীতি'টি চালু করে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কিছু রূপান্তর ঘটে। তারপরও ভারতের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে এবং স্বাধীন বৈদেশিক ও অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করার আকাঙ্ক্ষায় চালিত হয়েছে অনেক প্রতিবেশী দেশ। ভারতের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে ভুটান ছাড়া অধিকাংশ প্রতিবেশীই কমবেশি দোদুল্যমান। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চীন সবসময় সচেষ্ট থাকছে।
২০১৫ সালে ভারতের দুর্বল অর্থনৈতিক অবরোধ নেপালকে ২০১৬ সালে বিকল্প চিন্তার পথ দেখায়। এর পরে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা, প্রত্যেকেই বৈচিত্রপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সন্ধান করে। অন্যদিকে, তখন চীনের প্রকল্পগুলো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সামনে আকর্ষণীয় প্যাকেজ আকারে উপস্থাপন করা হয়, যা এই অঞ্চলে ঐতিহ্যগত ভারতীয় প্রভাব ঠেকাতে চীনা কৌশল রূপে বিবেচনা করা হয়। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন ও ভারতের প্রতিযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারত এবং চীন অবকাঠামোতে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বড় আকারের তৎপরতায় লিপ্ত। তদুপরি, দক্ষিণ এশিয়ার ছোট রাষ্ট্রগুলোর বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়াতে রেল, সড়ক ও সমুদ্রের মাধ্যমে সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার বিষয়টি ফোকাস করে উভয় দেশই।
দৃষ্টান্তস্বরূপ, নেপালে ভারতীয় অর্থনৈতিক উদ্যোগ, সংযোগ সুবিধা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তখন সম্প্রসারিত হয়। পণ্য ও পরিষেবার সহজ চলাচলে সহায়তা করার জন্য সমন্বিত সীমান্ত চেকপোস্টের উন্নয়নের সাথেও ভারত-নেপাল যুক্ত হয়। আগে থেকেই মুক্ত সীমান্ত পরিচালনার বিষয়টি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অবয়ব লাভ করে, যা সুবিধা ভারত তার নিকট-প্রতিবেশীদের নিয়ে গ্রহণ করে। বাংলাদেশেও ভারতের ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রেডিট বেশ কিছু সংযোগ উদ্যোগের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। বায়ু খামার সহ হাইব্রিড বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ভারতীয় বিনিয়োগের সাহায্যে শ্রীলঙ্কার জন্য আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়। সামুদ্রিক সহযোগিতা এবং উপকূলীয় নিরাপত্তা অবকাঠামোর উন্নয়নে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সাথেও ভারতের সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়, যা ভারত মহাসাগরীয় সামুদ্রিক কৌশলের ক্ষেত্রে ভারতের 'SAGAR' নামের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নীতির আওতাধীন।
দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উদ্যোগও একই ভাবে প্রসারিত হয়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর দক্ষিণ এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে দুই দেশে ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ২০১৫ সাল থেকে নেপাল এবং বাংলাদেশে প্রচেষ্টা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে চীন। ২০১৮ সালে চীন এবং নেপাল রেলপথ, রাস্তা এবং ট্রান্সমিশন লাইনের আন্তঃসীমান্ত সংযোগ বাড়াতে 'ট্রান্স-হিমালয়ান মাল্টি-ডাইমেনশনাল ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক'-এ সম্মত হয়েছে। চীন নেপালকে তার বেশ কয়েকটি স্থল ও সমুদ্র বন্দরে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। বিশেষ করে নেপালের স্থলবেষ্টিত 'স্যান্ডউইচ-সদৃশ্য' অবস্থার কারণে হিমালয়ের দেশটির জন্য চীনা সুবিধাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
চীন বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশে পরিবহন প্রকল্পে আনুমানিক ৯.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। চীন শ্রীলঙ্কারও সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার এবং তার বৃহত্তম ঋণদাতা হিসেবে পরিচিত, যা দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের ১০%। সড়ক, বন্দর ও বিমানবন্দর নির্মাণে চীনা অর্থায়ন ব্যবহৃত হয়েছে সেখানে। শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ চীনের 'মেরিটাইম সিল্ক রোড' প্রকল্প'-এর ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
চীনের মোকাবেলায় নিজেকে আরো নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভারত প্রায়ই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ককে জোর দিয়ে থাকে। ভারত উপমহাদেশের 'সাধারণ ঐতিহ্য' এবং 'ভাগ করা মূল্যবোধ'' বা 'ভাগ করা ইতিহাস'-এর উপর জোর দেয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে। তথাপি প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নানা কারণে সর্বদা উষ্ণ থাকতে পারেনা অনেক অমীমাংসিত দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সুরাহা না হওয়ার কারণে। বলা বাহুল্য, এসব সমস্যা একদিকে যেমন পুরনো, অন্যদিকে সংখ্যার দিক থেকেও অনেক। সমস্যা জিইয়ে থাকার ফলে ভারতের সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলো সম্পর্ক অহরহ উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়।
কোভিড-১৯ মহামারিতে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রচেষ্টাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ভারত। 'ভ্যাকসিন পলিটিক্স' প্রথমে শুরু করলেও অল্পদিনেই ভারতকে নিজের দেশের বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা মিটাতে পিছিয়ে আসতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে এ সুযোগ মোক্ষমভাবে কাজে লাগায় চীন। মহামারির প্রবল আঘাতে চীন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও ভারত ব্যতীত দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা এ অঞ্চলের প্রতি চীনের সদিচ্ছার ইতিবাচক বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
ভারতের প্রতিবেশী নীতির সামনে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উপযুক্ত বাণিজ্য সুবিধার অভাব এবং লজিস্টিক অসুবিধার কারণে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের খরচ অনেক বেশি হয়। ভারতীয় নীতি প্রায়শই চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ দেখাতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মৌলিক নীতিগত প্রক্রিয়াগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্র থেকেও ভারত প্রায়শই বিচ্যুত হয়। উদাহরণ স্বরূপ, ভারত ও তার প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সংগঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় গোষ্ঠী ২০২২ সালের আট মাস পেরিয়ে গেলেও শুধুমাত্র প্রথম ও একমাত্র বৈঠকটিই করতে পেরেছে। নয়াদিল্লির কর্তারা ভারত ও নেপালের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোকেও উপেক্ষা করেছে৷ তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের দৌড়ঝাঁপ অনেক দ্রুত গতিতে ও অধিক হারে দেখতে পাওয়া যায়।
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভারতের আস্থা নির্মাণের ঘাটতিকে আরেকটি বড় বাধা হিসাবে চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে, পাকিস্তানে তো বটেই, এমনকি, নেপাল, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপে ভারত-বিরোধী মনোভাব সুপ্ত বা প্রকাশ্যে বিদ্যমান রয়েছে। ভারতের সীমান্ত অবরোধের স্মৃতি নেপালে তীব্রতরভাবে বিরাজমান। নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এবং অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ সবমসময় ভালো ফলাফল বয়ে আনে নি। এতে বরং প্রতিবেশীদের বিরাগ সৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতে ধর্মীয় মেরুকরণের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি এবং ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা-বিবৃতিতে উগ্র হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী জাতীয়তাবাদী ধারণা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর উদ্বেগকে বাড়িয়ে দিয়েছে৷ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, সহনশীলতা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতীয় অবস্থান প্রতিবেশীদের মনে কখনো-কখনো নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। যদিও এসব ক্ষেত্রে চীনের রেকর্ড খুব একটা উজ্জ্বল নয়, তথাপি ভৌগোলিক নৈকট্য ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে ভারতের নেতিবাচক ঘটনাবলী দক্ষিণ এশিয়াকে খুব দ্রুতই স্পর্শ করেছে আর চীন মোটামুটিভাবে এসব বিষয়ে নিজেকে সাফসুতরা রাখতে পেরেছে।
যে প্রশ্নটি প্রথমেই আলোচিত হয়েছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যমান রাজনৈতিক গতিশীলতায় ভারতের প্রভাব পুনরুদ্ধার ও বিস্তার করার এটাই কি সঠিক সময়? এর উত্তর এখনই পুরোপুরি দেওয়া সম্ভব না হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে চীনের প্রতিযোগিতা যে আরো অনেকদিন চলবে, সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কিছু নীতি ও কাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা এবং সম্পর্ক উন্নততর করা ভারতের জন্য খুব কঠিন হবে না।
ভারতের দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীরা চীনের ব্যাপারে যত না উদার, তারচেয়ে বেশি সতর্ক। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের কাছ থেকে বড় ঋণ গ্রহণের বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে বিবেচিত হয়েছে। এসব বিষয় সব দেশই বিবেচনায় রাখছে। আবার ভারতের বিষয়েও সমানভাবে দোলাচলে প্রতিবেশীরা। ফলস্বরূপ, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে ও পরিস্থিতিতে ভিন্নভিন্ন মাত্রায় ভারতের বিরুদ্ধে 'চায়না কার্ড' খেলছে। এমন একটি প্রবণতা ভারতীয় নানাবিধ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অব্যাহত রয়েছে।
আবার, চীনের বিরুদ্ধে 'ভারতীয় কার্ড' খেলার মতো পরিস্থিতিতে নেই দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো। ভারত তার প্রতিবেশীদের সে সুযোগ কমই দিয়ে থাকে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক গতিশীলতায় প্রভাব বিস্তার করার বিষয়টি খোদ ভারতের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার পাশাপাশি চীনা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের চৌকশ ভূমিকা গ্রহণের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।
ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।