শরীর ও মন
ফিস্টুলার সহজ চিকিৎসা
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১৯ আগস্ট ২০২২, শুক্রবারফিস্টুলা রোগকে বাংলায় বহুল প্রচলিত ভগন্দর রোগ বলা হয়। মলদ্বারের ভেতরের সঙ্গে বাইরের নালি তৈরি হওয়াকে বলা হয় ফিস্টুলা। সাধারণত মলদ্বারের পাশের গ্রন্থি (Anal gland) বন্ধ ও সংক্রমিত হয়ে ফোঁড়া হয় এবং ফোঁড়া ফেটে গিয়ে নালি তৈরি করে। মলদ্বারে ফোঁড়া হওয়া রোগীদের শতকরা ৫০ ভাগ ফিস্টুলা হয়ে থাকে। এছাড়া মলদ্বারের যক্ষ্মা, বৃহদন্ত্রের প্রদাহ এবং মলদ্বারের ক্যান্সার থেকে ফিস্টুলা হতে পারে। সাধারণত মলদ্বারে ব্যথা, মলদ্বারের পাশে ফোলা এবং নিজে থেকে ফেটে গিয়ে পুঁজ-পানি ঝরা কিংবা ফোঁড়ার কারণে আগের অপারেশনের ইতিহাস নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে আসেন। পুঁজ-পানি পড়লে ব্যথা কমে যায় এবং রোগী আরাম বোধ করেন এবং কিছুদিনের জন্যে রোগী ভালো হয়ে যান। কিন্ত রোগটি দু’তিন মাস সুপ্ত বা নির্জীব থেকে আবার দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি সমূহ: বর্তমানে ফিস্টুলা চিকিৎসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত অপারেশন পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-ফিস্টুলোটোমি, ফিস্টুলেকটোমি, সিটন পদ্ধতি, ফিস্টুলা প্লাগ, ফিব্রিন গ্লু, ফ্ল্যাপ ব্যবহার, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার, স্টেম সেল ব্যবহার, মলদ্বারের মাংসপেশির মাঝখানের নালি বন্ধ করে দেয়া, এন্ডোস্কোপিক ফিস্টুলা সার্জারি।
চিকিৎসা: এই রোগের চিকিৎসা সাধারণত অপারেশন।
প্রচলিত চিকিৎসা: ১.অপারেশন: ইহাই সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি। সারা বিশ্বে এই পদ্ধতিতেই চিকিৎসা করা হয়। ২.লেজারের মাধ্যমে: খুব ছোট ও সহজ ফিস্টুলা হলে এই পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বিশ্বের নামিদামি কোনো কোলেরেক্টাল সার্জন অপারেশন করেন না। এই পদ্ধতির উপর কোনো গবেষণাও নাই। একটু বড় বা জটিল ফিস্টুলা এই পদ্ধতিতে করলে আবার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত কোমরের নিচ থেকে অবশ করে অপারেশন করা হয়। এক দু’দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। ফিস্টুলা অপারেশনের পর ঘা শুকাতে ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে সিটন পদ্ধতিতে দু’তিন ধাপে অপারেশন করা হয়। প্রতিটি ধাপের মাঝে ৭ থেকে ১০ দিন বিরতি দেয়া হয়। এই সময় নিয়মিত ড্রেসিং করা প্রয়োজন। ড্রেসিং অপারেশনের পর পুনরায় ফিস্টুলা হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ফিস্টুলা অপারেশনের পর আবার হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে অপারেশনের পর ফিস্টুলা পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৩ থেকে ৭ ভাগ। জটিল ফিস্টুলার ক্ষেত্রে এটি শতকরা ৪০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। তবে ফিস্টুলা অপারেশনের পর পুনরায় হবে কিনা তা বলা মুশকিল। ফিস্টুলার ধরন, সার্জনের অভিজ্ঞতা এবং সার্জন এমএস ডিগ্রিধারী (মাস্টার্স অব সার্জারি) কিনা তা দেখতে হবে এবং অপারেশনের পরের যত্ন বা পরিচর্যার উপর ফিস্টুলা অপারেশনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। সঠিক চিকিৎসায় ফিস্টুলা ভালো হয়। এই রোগ নিয়ে লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা উত্তম।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ), কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ই-মেইল-ঃ[email protected]/ www.facebook.com/Dr.Mohammed TanvirJalal