দেশ নির্বাচনী টানেলে ঢুকেছে

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশ নির্বাচনী টানেলে ঢুকেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দাবি করেছেন, নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কিংবা সংশয় নেই। যুগপৎ আন্দোলনের সমমনাদের নিয়েই বিএনপি ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নানা ইস্যুতে কথা বলেন বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য। বলেন, আমাদের দেশের যে সংস্কৃতি, একটা সরকার চলে যাওয়ার পরে তাদেরকে একেবারে শত্রুভাবাপন্ন ভাবা হয়। আর যারা ক্ষমতায় আসে তারা রাজা-মহারাজা হয়ে যায়। এই কালচার তো চলতে পারে না। রাষ্ট্রটা হচ্ছে জনগণের স্বার্থে, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। যে ভালো কাজগুলো হবে সেগুলোকে আমাদের চলমান রাখতে হবে। সামনের দিকে ভালো কাজ করতে গেলে যদি বর্তমান সরকারের কেউ, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের যদিও সহযোগিতা লাগে- সেটা চাওয়াটাই তো স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক কিছু না। এই সংস্কৃতি তো দেশে আনতে হবে। যার যেখানে যোগ্যতা তাকে যদি কাজে লাগানোর জন্য সরকার মনে করে, সেটা তো দেশের স্বার্থে করতে হবে। আমাদের সবার উপরে মনে করতে হবে আমরা বাংলাদেশ ও জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করছি। সেই স্বার্থ পূরণে যে কারও সার্ভিসের যদি প্রয়োজন হয় তাদেরকে আমরা ডাকলে অসুবিধাটা কোথায়? উনারা চলে যাওয়া মানে এই নয়, উনাদের চিরতরে আমরা বিদায় করে দিলাম। বাকিরা চিরতরে দেশ শাসন করবে। এই মন-মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশ নির্বাচনী টানেলে ঢুকেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বৈঠকের পর সরকার ও বিএনপি’র যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াত। যৌথ এই বিবৃতি বাংলাদেশে নাকি লন্ডনের বৈঠকের পর তৈরি হয়েছে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যৌথ বিবৃতি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া হয়েছে। লন্ডনেই এই বিবৃতি তৈরি হয়েছে। সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। 

তিনি বলেন, দেশের জনগণের স্বার্থে যখন যেটা প্রয়োজন এবং সেটা আমাদেরকে করতে হবে। আন্দোলন করতে হলে আন্দোলন করতে হবে। আবার দেশের স্বার্থে যদি কোনো কিছু ত্যাগ করতে হয় এবং কোনো কিছু যদি মেনে নিতে হয়- সেটা জনগণ, গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে আমাদেরকে করতে হবে।

লন্ডন বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জানানো হয় বলে জানিয়েছেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, আমি ওই বৈঠকে প্রথমার্ধে ছিলাম। এরপরে ওয়ান টু ওয়ান (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) কথা হয়েছে। এ ছাড়া পেছন থেকে কারা কাজ করেছেন, সেটা আমার জানা নেই। তবে আমার জানা আছে যে, প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিবকে জানানো হয়েছে। তার ফলে এই মিটিং হয়েছে। 

আগামী বছরে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আপত্তি রয়েছে। এ কারণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে কোনো সংকট দেখছেন না বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, যেখানে যৌথ বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধের নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। সেখানে সংকটের কোনো কিছু তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমি তো মনে করি, দেশ নির্বাচনী টানেলের মধ্যে ঢুকেছে। ইতিমধ্যে সবার পক্ষ থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রায় সব দলই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। হয়তো কয়েকটা দল হতে পারে যারা এর বিরোধিতা করেছে। সংস্কার ও জুলাই সনদের ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত নাই। সবাই বলেছে যে, এটা ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। সেটা সংস্কার বলেন আর জুলাই সনদ বলেন। সেখানে তো কারও কোনো সমস্যা নাই। আমার মনে হয় সংস্কারের বিষয়ে, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বেরিয়ে আসবে যে কোথায় কোথায় ঐকমত্য হয়েছে। ঐকমত্যের বাইরে তো আর কিছু করা সম্ভব না। 

নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও দলের নির্বাচনী ইশতেহার বিষয়ে বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ চলছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হলে সেটা আরও সামনে চলে আসবে। এখন কাজ চলছে। 
বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার সমমনাদের নিয়েই বাস্তবায়ন করতে চায় উল্লেখ করে খসরু বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব বলেছেন যে, আমরা যাদেরকে নিয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে এতদিন যুগপৎ আন্দোলন করেছি। আমরা সবাই মিলে আগামী নির্বাচন এবং পরবর্তীতে জাতীয় সরকার গঠনের কথা তারেক রহমান সাহেব পরিষ্কারভাবে বলেছেন। যাদেরকে নিয়ে আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে দিয়েছি, আমরা তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দু’দিকের প্রস্তুতি চলছে। উনার (তারেক রহমান) পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি চলছে এবং দেশে উনি আসারও প্রস্তুতি চলছে। তবে দিনক্ষণ তো উনি নির্ধারণ করবেন। সেটা বলা যাচ্ছে না। আমার মনে হয় না, খুব বেশি দেরি হবে। জাতি এবং বিএনপি’র নেতাকর্মী এবং সমর্থকসহ সারা দেশ উনার অপেক্ষায় আছে।