বাংলারজমিন
সরাইলে পিডিবি’র সংযোগ আয় ৯ লাখ, কর্মকর্তা সিবিএ’র ঘুষ ২০ লাখ
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
২৮ জুন ২০২৫, শনিবারআবারো জমে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল পিডিবি’র গ্রাহক সংযোগ বাণিজ্য। হিসাব বড়ই চমৎকার। সংযোগ নিতে বছরে অফিসের কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতাদের ঘুষ দিতে হয় ২০ লক্ষাধিক টাকা। আর পিডিবি ব্যাংক জমার মাধ্যমে বছরে পায় ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ সরকারের ৯ লাখ টাকা আয় করতে সংশ্লিষ্টরা ঘুষ নেন ২০ লাখ। অফিসেই কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী মিটার বিক্রির হাটও বসিয়েছেন। ফাঁকে দরিদ্র অসহায় গ্রাহকরা হচ্ছেন শোষণের শিকার। বিষয়টি জেনেও রহস্যজনক কারণে মুখ বন্ধ করে আছেন অনেকেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরাইল পিডিবি’র বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। এক সময় নতুন সংযোগ দিতে অফিসের কর্মকর্তা ও সিবিএ’র ফান্ডের কথা বলে ভালো পরিমাণ টাকা নিতো। এখানে বরাবরই ব্যাংক জমার চেয়ে ঘুষের পরিমাণ বেশি। অফিসে বসে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী দেদারছে করছেন মিটার বিক্রির ব্যবসা। মাঝখানে কিছুদিন সিবিএ’র টাকা নেয়া বন্ধ ছিল। ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের পর গ্রাহকরা ভেবেছিলেন আর মনে হয় অতিরিক্ত (ঘুষ) টাকা গুনতে হবে না। এখন চিত্র অন্যরকম। সম্প্রতি আবারো জমে উঠেছে সরাইল পিডিবি’র নতুন সংযোগে ঘুষ বাণিজ্য। নতুন সংযোগ নিতে গ্রাহকদের দিতে হয় ২৩০০-২৫০০ টাকা। অথচ আবেদন ফি ১৪০ টাকা আর প্রাক্কলন বাবদ ৬৩০ টাকা ব্যাংক জমাসহ মোট ৭৭০ টাকা খরচ হওয়ার কথা। অফিসের কর্মকর্তাদের খাতে ১০০০ টাকা আর সিবিএ’র খাতে ঘুষ নিচ্ছেন ৫০০ টাকা। প্রত্যেক গ্রাহককে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ১৫০০ টাকা। প্রতি মাসে শতাধিক নতুন সংযোগের কাজ হচ্ছে। শুধু সংযোগেই মাসে ঘুষ নিচ্ছেন দেড় লক্ষাধিক টাকা। এই হিসেবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসাবে বছরে জমা হচ্ছে ৯ লাখেরও অধিক টাকা। আর কর্মকর্তা ও সিবিএ’র নামে গ্রাহকদের শোষণ করে বছরে নেয়া হচ্ছে ২০ লক্ষাধিক টাকা
একাধিক গ্রাহক বলেন, নতুন সংযোগের জন্য আসলে প্রথমে উনারা কথাই বলতে চান না। যা লাগে দিবো বললে কাজটি করার আগ্রহ দেখান। পরে ব্যাংক আর অফিস খরচ সহ মোট ২২-২৩শ’ টাকা লাগবে। আর মিটার নিলে সব মিলিয়ে ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। মিটার কোনো দোকান থেকে আনেন না। মিটারের দোকান অফিসেই সাজিয়ে বসে আছেন। উনাদের কৌশলের কারণে কোনোভাবেই মিটার বাহির থেকে ক্রয় করা যায় না। সবশেষে শুধু ৭৭০ টাকা ব্যাংক জমার কাগজ পাওয়া যায়। বাকি টাকা গ্রহণের কোনো রশিদ বা ডকুমেন্ট দেন না। অভিযোগ রয়েছে, অফিসে কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী মিটার বাণিজ্যও করছেন দেদারছে। পায়ের কাছে বা আশপাশে সাজিয়ে রেখেছেন ইস্টার্ন, ক্যাপিটাল, সেল মিটার ও নর্দান কোম্পানির মিটার। ২/১ জন লাইনম্যান মিটারের ব্যবসা করছেন। গ্রাহকদের বুঝিয়ে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন একটি মিটার। মিটারে লাভের সঙ্গে তারা কোম্পানির কাছ থেকে পাচ্ছেন কমিশন। এমন প্রক্রিয়ায় সরাইল পিডিবি কর্তৃক গ্রাহক শোষণের এই বিষয়টি অফিসে অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কর্তৃপক্ষের ভৌতিক বিলের চাপ অথবা কোনো ঝামেলায় ফেলে দেয়ার শঙ্কায় শোষিত গ্রাহকরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে বিষয়গুলো বলতে নারাজ। এ বিষয়ে সরাইল পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) মো. শামীম আহমেদ বলেন, আসলে বিষয়টি আমার জানা নেই। অফিসে গিয়ে কর্মকর্তা ও সিবিএ’র সঙ্গে কথা বলে আপনাকে জানাবো।