বাংলারজমিন
সৈয়দপুরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত তরুণরা
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়ার দৌরাত্ম্য। অল্প সময়ে বিপুল টাকার মালিক হওয়ার নেশায় বুঁদ শত শত তরুণ। আর তাদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন শত শত প্রবাসী, হারাচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
জানা যায়, থাই, কালিয়ান, ক্যাসিনো নামে চলে এসব অনলাইন জুয়ার আসর। শহর ছাপিয়ে এই জুয়ার ব্যবহার চলে গেছে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে কিশোর-তরুণদের অনলাইন জুয়ার এইসব সাইটে বুঁদ থাকতে দেখা যায়। সচেতন মহল ও অভিভাবকরা বলছেন, উঠতি বয়সী ছেলেদের সারাদিন মোবাইল নিয়ে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায়। শুরুর দিকে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হলেও পরে জানা যায় তারা মোবাইলের মাধ্যমে বেটিং (ভার্চ্যুয়াল জুয়া) করছে।
আবার এই জুয়ার টাকা পেয়ে অনেক তরুণ মাদক সেবনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। তবে পুলিশ জানিয়েছে, জুয়ার বিস্তার রোধে তাদের নিয়মিত অভিযান চলমান আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম, খাতামধুপুর, বোতলাগাড়ী, কামারপুকুর, বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নসহ শহরের কাজীপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, হাতিখানা, মুন্সিপাড়াসহ উপজেলার গ্রামীণ জনপদে জুয়ার প্রসার ঘটেছে।
ফেসবুক-ইউটিউবের মাধ্যমে এসব সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচারে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব জুয়ার মাধ্যমে লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা। নগদ টাকার আধিক্য থাকায় অনেক তরুণ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়াল এই জুয়াকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে একাধিক কিশোর গ্যাং।
অনলাইন (থাই) জুয়ায় আসক্ত শহরের হাতিখানার মো. নাসিম (ছদ্মনাম) জানান, যারা এই জুয়া খেলেন তারা বিভিন্ন গ্রাফিক্স দোকানে নানা ধরনের ভুয়া লটারির টিকিট তৈরি করেন। এই টিকিটগুলোতে একটি করে নম্বর থাকে যেটা ভুয়া। এগুলো অনলাইনে প্রচার করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে ইমুর মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা।
পৌর শহরের কাজীরহাট মহল্লার আলিম (ছদ্মনাম), বাবা রিকশা চালালেও তিনি এখন কোটিপতি। অথচ কিছু বছর আগে তিনিও ছিলেন ভবঘুরে। তার কথামতে এগুলো থাইল্যান্ড-ভিত্তিক একটি বৈধ লটারি। স্থানীয় জুয়াড়িরা এই লটারির আদলে নিজেরা কিছু টিকিট তৈরি করে। সেগুলো আবার থাইল্যান্ডের টিকিট দাবি করে বিক্রি করে। তাদের বেশির ভাগ ক্রেতাই প্রবাসী।
সচেতন অভিভাবকের মতে, চোখের সামনে একটি প্রজন্ম জুয়ার ফাঁদে পড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও বেশির ভাগই থাকছে অধরা।
অনলাইন জুয়া সম্পর্কে সৈয়দপুর থানার ওসি ফইম উদ্দিন বলেন, এসব জুয়ার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযানও চালাচ্ছি। বেশ কিছু জুয়াড়িদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, শুধু পুলিশি অভিমানে এ জুয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব না। এ জন্য এলাকাভিত্তিক সামাজিক প্রতিরোধ প্রয়োজন। অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের অনেকেই মাদক কারবারি ও ভিসা প্রতারণার সঙ্গেও জড়িত।