বাংলারজমিন
জুলাই আন্দোলন
ছররা গুলির যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মাছুম
লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি
২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট। তখন সরকারের পতনের একদফা দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। ছাত্র-জনতার সেই আন্দোলনে যোগ দেন মো. মাছুম বিল্লাহ নামে ২৮ বছর বয়সী এক যুবক। লক্ষ্য যেকোনো মূল্যে সরকারের পতন। তবে আন্দোলনে যোগ দেয়ার ৩০ মিনিটের মাথায় পুলিশের ছোড়া প্রায় চারশত ছররা গুলি তার শরীরের বাম পাশের পা থেকে কাঁধ পর্যন্ত বিদ্ধ হয়। এরপর জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানে নিলেও এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পাননি মাছুম। পরে বাধ্য হয়ে একটি ইনজেকশন নিয়েই ফিরতে হয় তাকে। শরীরের ভেতর থাকা সেসব গুলির তীব্র যন্ত্রণায় এখন কাতরাচ্ছেন তিনি। মাছুম ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জনতাবাজার এলাকার মহির উদ্দিন হাওলাদার বাড়ির মো. মাকসুদুর রহমান সেন্টুর ছেলে। মাছুম বিল্লাহ জানান, তিন বছর আগে ঢাকায় গিয়ে যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় অনার্সে ভর্তি হই। সে সুবাধে কামারাঙ্গির চরে অল্পকিছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি হাফেজি মাদ্রাসা দেই। নিজের পড়ালেখা আর ওই মাদ্রাসা নিয়ে কোনোভাবে কাটছিল দিন। তবে এরমধ্যে ঢাকায় আন্দোলন শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন গড়ায় সরকার পতনের আন্দোলনে। ওই আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং পুলিশ নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করতে থাকে। এতে প্রাণ হারায় বহু মানুষ। তাই নিজেকে আর সামলাতে পারিনি। ৫ই আগস্ট সকাল ৮টায় আমি ঢাকার আজিমপুর এলাকা থেকে ওই আন্দোলনে যোগ দেই। তবে এর ৩০ মিনিটের মাথায় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি আমার শরীর ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। এরপর জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।
তিনি জানান, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে দেশের পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা পাইনি। পরদিন আমার আত্মীয়-স্বজনরা ফের ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেন। সেখানে আমার শরীরে বিদ্ধ হওয়া কেবল ৪-৫টি গুলিই বের করা সম্ভব হয়। এরপর ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে গেলে সেখানেও কয়েকটি গুলি বের করা হয়। সেখান থেকে সবশেষ যাই সিএমএইচ-এ। সব হাসপাতাল ঘুরে ৫০টির মতো গুলি বের করা সম্ভব হয়। এখনো আমার শরীরের বাম পাশের পা থেকে কাঁধ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে তিনশত ছররা গুলি রয়ে গেছে। মাছুম আরো জানান, স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষে একটি চাকরি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুন্দরভাবে চলবো। তা আর হলো কই, এখন আমার বেঁচে থাকা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই আমি সরকারের কাছে আমার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমার স্ত্রী-সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও অনুরোধ করছি।
তার বাবা মো. মাকসুদুর রহমান সেন্টু বলেন, আমার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেকে একটু ভালো করে পড়াতে ঢাকা পাঠাই। তবে ২৪-এর জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সে এখন গুরুতর আহত। যদিও আন্দোলনে আহত হওয়ায় ছেলেকে সরকারিভাবে ২ লাখ টাকা এবং বিএনপি থেকে ৪০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। তবে আমার খরচ হয়ে গেছে আরও চার লক্ষাধিক টাকা। এজন্য বিক্রি করতে হয়েছে নিজের জমিও। তবুও ছেলে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এখন কেবল ব্যথার ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছে সে। তিনি বলেন, ছেলের স্ত্রী আর দুই সন্তানকে এখন আমিই দেখছি। কিন্তু এভাবে কতোদিন। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যে কোনোভাবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে আমার ছেলেকে যেন পুরোপুরি সুস্থ্য করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ জানান, আন্দোলনে যারা শহীদ এবং আহত হয়েছেন, তাদের জন্য সরকারি যে বরাদ্দ এসেছে তা এরইমধ্যে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সামনে যদি কোনো বরাদ্দ আসে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয়া হবে।
পাঠকের মতামত
EI LOKTA KON COLLAGE ER CHATRO BA KON DESHER JANOTA ETA KE DEKHE MONE HOCCHE EI SAB LOKDER JANNO ETO LOKER PRAN GIYECHE EI ANDOLONE .