বাংলারজমিন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যা হচ্ছে
স্টাফ রিপোর্টার, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে
২৮ জুন ২০২৫, শনিবারকক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে খুন-সন্ত্রাসের রাজত্ব। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার, পারিবারিক কলহ এবং ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে প্রতিনিয়ত ঘটছে হত্যাকাণ্ড। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এই পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিক এবং আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা। গত তিন মাসে কেবল উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্তত ১৫টি হত্যাকাণ্ড, ৩০টির বেশি অপহরণ এবং অসংখ্য সন্ত্রাসী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ক্যাম্পে দায়ের হয়েছে ৩০৭টি মামলা, যার আওতায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৭২৫ জন। শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্তই খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৫টি, যার পেছনে মূলত মাদক নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র ব্যবসা ও গ্রুপিংয়ের দ্বন্দ্ব। সূত্রমতে, ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ নিজেদের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে একে-অপরের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আধিপত্য ধরে রাখতে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সংঘাত হচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে। এছাড়া, পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, এমনকি সামান্য বিরোধ থেকেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ক্যাম্পের পরিস্থিতি এতটাই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে যে, দিন দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
প্রতিদিনের মতো দিনের বেলায় ক্যাম্পের ভেতরে চলছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দোকানপাট, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বিভিন্ন শ্রমজীবী পেশা। তবে সন্ধ্যা নামলেই পাল্টে যায় চিত্র। রাতের আঁধারে শুরু হয় সন্ত্রাসীদের অপরাধ তৎপরতা। ইয়াবা পাচার, অস্ত্র কেনাবেচা, মানবপাচার, জুয়া, নারী নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটছে নিয়মিত। স্থানীয় গ্রামবাসী জাফর আলম জানান, প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কখন গুলি শুরু হবে আর কে গুলির শিকার হবে, বলা যায় না। সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পাই না। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য রোহিঙ্গা অপরাধচক্রের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। অনেক অপরাধী প্রশাসনের অভিযানের আগেই গা ঢাকা দিতে সক্ষম হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় দৈনিক আলোকিত উখিয়ার সম্পাদক ও সংবাদ বিশ্লেষক মিজানুর রশীদ মিজান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। তাই এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সময়। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়ার সভাপতি নূর মুহাম্মদ সিকদার বলেন, বিচ্ছিন্ন অভিযান দিয়ে ক্যাম্পে চলমান অপরাধ দমন সম্ভব নয়। সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারের সমন্বিত কঠোর পদক্ষেপ। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিদিনের রুটিন অভিযানে রোহিঙ্গা অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো পুরোপুরি নির্মূল করতে আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
পাঠকের মতামত
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য রোহিঙ্গা অপরাধচক্রের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। অনেক অপরাধী প্রশাসনের অভিযানের আগেই গা ঢাকা দিতে সক্ষম হচ্ছে।