বাংলারজমিন
বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়
শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান
বালাগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
২৮ জুন ২০২৫, শনিবারস্কুলটি বাঁচান, শিক্ষক সংকটে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপন্ন হয়ে যাবে- এমনটি মেনে নেয়া যায় না। একটা স্কুল এভাবে চলতে পারে না। যে শিক্ষকরা আছেন, তাদেরও অনেক বয়স হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার শতবর্ষী একমাত্র সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থা নিয়ে এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন খোদ এই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। উপজেলা সদরে অবস্থিত বালাগঞ্জ সরকারি দ্বারকানাথ উচ্চ বিদ্যালয়টি (পূর্বের নাম বালাগঞ্জ ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়) শিক্ষক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় ধুঁকছে। পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। এ সংকট কবে নাগাদ দূর হবে তাও বলতে পারছেন না বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা। প্রাচীন এ বিদ্যাপিঠের শত বছরের বৎসরের গৌরব কী এভাবেই হারিয়ে যাবে- এই প্রশ্ন সচেতন মহলের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণের পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে সরকারের অনুকূলে বিষয়-সম্পত্তি বিধি মোতাবেক হস্তান্তর করা হয়। উপজেলার একমাত্র সরকারি বিদ্যালয় হওয়ার শিক্ষার্থী সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এতে প্রতিটি শ্রেণিকে দু’টি শাখায় বিভক্ত করে পাঠদান চালাতে হয়। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৮৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ২৬টি শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৭ জন। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিগত দিনে এ অঞ্চলে শিক্ষার দ্যুতি ছড়ানো এ প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া জনবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়া এ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী না থাকায় অনিরাপদ অবস্থায় আছে। অন্যান্য বা সহায়ক ৫টি পদের মধ্যে আছেন একজন। এরমধ্যে অফিস সহকারী, দপ্তরি, নৈশপ্রহরী ও আয়ার পদটি শূন্য। এদিকে, দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে বিদ্যালয়ের আশপাশে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। নানা সময়ে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলা বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর থেকেই শিক্ষার মান ক্রমান্বয়ে খুবই নিম্নমুখী হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবক ও স্থানীয়দের।
ম.আ মুহিত নামের এক অভিভাবক ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলের বেহাল অবস্থায় ছেলের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই চিন্তিত। দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সরকারি স্কুল হলেও আমরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকারি স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক, নিয়মিত পাঠদান হয়, আমাদের তা হয় না। বছরে ৪-৫ মাস বিভিন্ন অজুহাতে স্কুল বন্ধ থাকে। এরমধ্যে শিক্ষক সংকটে নিয়মিত ক্লাসও হয় না। মাসুক মিয়া নামে আরেক অভিভাবক বলেন, স্কুলের এই পরিস্থিতি বাচ্চাদের জন্য তা মোটেই সুখকর নয়। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে তাদের ভবিষ্যৎ ও পড়ালেখা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শিক্ষকদের শূন্যপদ থাকায় তাদের ক্লাসে দিয়েও কোনো ফায়দা হচ্ছে না।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্ররা বলেন, এক সময় স্কুলটির স্বর্ণ যুগ ছিল। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য উপজেলার স্কুলের চেয়ে এই স্কুলের পড়ালেখা ও ফলাফল অনেক ভালো ছিল। আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে এখানে পড়াশোনা করতো অনেকেই। কিন্তু উন্নয়ন- অগ্রযাত্রার এইযুগে স্কুলে শিক্ষাব্যবস্থার এমন হাল দেখে খুবই খারাপ লাগছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতীয়করণের পর থেকেই শিক্ষক শূন্যতায় সঠিকভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। মাত্র ৭ জন শিক্ষক দিয়ে এতবড় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দেব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বলেন, শিক্ষক চাহিদার বিষয় উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. নুরের জামান চৌধুরী বলেন, ইউএনও আমাকে লিখিত জানিয়েছেন। শিক্ষক সংকটের কথা জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।