বাংলারজমিন
সালথায় পিয়াজের দাম কমায় বিপাকে কৃষক
সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
ফরিদপুরে হঠাৎ করে কমে গেছে পিয়াজের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি পিয়াজের দাম কমেছে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ফলে পিয়াজের রাজধানীখ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষকরা এবার পিয়াজ চাষে পড়েছেন বড় ধরনের সংকটে। কৃষকরা জানান, উৎপাদন খরচ, শ্রমিক মজুরি ও পরিবহন খরচ মিলে যেখানে প্রতি মণ পিয়াজ চাষিদের ২ হাজার টাকার ওপরে খরচ পড়েছে। কিন্তু বাজারে সেই পিয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ফলে প্রতি মণেই লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। শুক্রবার সরজমিন উপজেলার বালিয়া বাজারের পিয়াজ হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতার সংখ্যা বেশি। অনেক কৃষক দাম শুনে পিয়াজ না বেচেই ফিরে যাচ্ছেন। বালিয়া বাজারে পিয়াজ বিক্রি করতে আসা এক পিয়াজচাষি হতাশার সুরে বলেন, সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক, পানি সবকিছুর খরচ মিলে প্রতি মণ পিয়াজে গড়ে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। আমরা কী খাবো? উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে সাপ্তাহিক হাট বসে যেখানে হাজার হাজার মণ পিয়াজ কেনাবেচা হয়। যার মধ্যে শনিবার ও বুধবার নকুলহাটি, রবি ও বুধবার ঠেনঠেনিয়া, সালথা সদর হাট ও শুক্রবার ও সোমবার বালিয়া গট্টি, কাগদি, জয়কাইল, মোন্তার মোড়, মাঝারদিয়া, বাউষখালী ও যদুনন্দীতে বসে পিয়াজের হাট। এসব হাটে ফরিদপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে পাইকাররা এসে ট্রাকভর্তি পিয়াজ কিনে নিয়ে যান।
পিয়াজ চাষিরা বলছেন, পিয়াজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলের জন্য সরকারিভাবে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। ধান বা গমের মতো পিয়াজেও সহায়তা পেলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন না। পাশাপাশি প্রতি ইউনিয়নে কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার গড়ে তুলে পিয়াজ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তারা। চাষি সিরাজ মোল্যা বলেন, আমরা চাই প্রতি মণ পিয়াজের ন্যূনতম দাম ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা করা হোক। না হলে আমাদের মতো চাষিরা পিয়াজ চাষ ছেড়ে দেবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সালথায় পিয়াজের চাষ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ, যা ১ লাখ ৬৮ হাজার টনের বেশি। উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুদীপ বিশ্বাস বলেন, ফলন খুবই ভালো হয়েছে। কৃষকরা পরিশ্রম করেছেন। তবে এখন বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমে গেছে। আমরা কৃষকদের সাহস ও পরামর্শ দিয়ে পাশে আছি। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার মানবজমিনকে বলেন, কৃষিপণ্যের বাজার সব সময় চ্যালেঞ্জিং। সম্প্রতি বৃষ্টিপাত ও বাইরে থেকে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।