অনলাইন
ছেলের বিয়ে পেছানোর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব দিতে গিয়ে সমালোচনার মুখে নেতানিয়াহু
মানবজমিন ডিজিটাল
(৬ ঘন্টা আগে) ২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ২:০৪ অপরাহ্ন

ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। ক্ষয়ক্ষতির বহরও নেহাত কম নয়। তবে প্রাণ ও সম্পত্তিহানির চেয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি বলে মনে হয়েছে যুদ্ধের জেরে ছেলের বিয়ে পেছানোর ঘটনা।
গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরতে গিয়ে নেতানিয়াহুর এহেন ‘ব্যক্তিগত ক্ষতি’র তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই তাকে স্বার্থকেন্দ্রিক বলে উল্লেখ করেছেন অনেক ইসরাইলি। গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলের বিরশেবা শহরের এক হাসপাতালে আছড়ে পড়েছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। যার জেরে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেখানে। এই হামলা প্রসঙ্গেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য পিছিয়ে দিতে হয়েছে। এই ঘটনায় আমার স্ত্রী ও হবু পুত্রবধূ অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছে। হতাশা সহ্য করে তারা সত্যিকারের ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছে। আমরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনওভাবে যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি।'
একইসঙ্গে বৃটেনের ‘ব্লিটজ’ যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে ইসরাইলের বর্তমান সংকটের তুলনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার ছেলে অ্যাভনারের বিয়ের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টিকে পরিবারের ত্যাগের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
নেতানিয়াহু বলেন, এমন কিছু মানুষ আছে যাদের পরিবারের কেউ না কেউ নিহত হয়েছেন , পরিবারগুলো প্রিয়জনদের হারানোর শোক বহন করছে , আমি সত্যিই তাদের সাথে সমব্যাথী। আমাদের প্রত্যেকেকেই ব্যক্তিগত মূল্য চোকাতে হয়েছে এবং আমার পরিবারও এর থেকে রেহাই পায়নি।
সোরোকা হাসপাতাল- যেখানে এক দিন আগে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল- সেই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যগুলো অনলাইন এবং ইসরাইলের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নিন্দার ঝড় তুলেছে। সমালোচকরা নেতানিয়াহুকে যুদ্ধের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের ভাবমূর্তিকে অগ্রাধিকার দেয়ার অভিযোগ করেছেন।
ইসরাইল জানিয়েছে যে, এই সংঘাতে এখনও পর্যন্ত তাদের ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। মার্কিন মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো অনুমান করছে, ইসরাইলের আকস্মিক বিমান হামলার পর ইরানি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে ২৬৩ জন।
নেতানিয়াহু তার ছেলের বিয়ের জন্য ছুটি নেয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জনসাধারণের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। মূলত নভেম্বরে এই বিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছিল কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তা বাতিল করা হয়।
আনাত অ্যাংরেস্ট, যার ছেলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় জিম্মি ছিল, তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অ্যাংরেস্ট এক্স-এ লিখেছেন, ‘আমার ছেলে ৬২২ দিন ধরে গাজার নরকীয় অন্ধকূপে আছে’। ডেমোক্র্যাটিক নেসেট সদস্য গিলাদ কারিভ নেতানিয়াহুকে ‘নার্সিসিস্ট’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, ‘আমি এমন অনেক পরিবারকে জানি যারা তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান স্থগিত করেছে। তারা কখনও সেই বিয়ে উদযাপন করবে না যা একসময় হওয়ার কথা ছিল।’
কারিভ নেতানিয়াহুর মুখে তার স্ত্রীর প্রশংসাও উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, যেসব ডাক্তার রাতের শিফটের জন্য বাড়ি থেকে বের হন তারা হলেন আসল নায়ক। যেসব শিক্ষকরা আমাদের বাচ্চাদের জুম এবং ফোনকলের মাধ্যমে একসাথে রাখেন তারা হলেন নায়ক।
সাংবাদিক আমির টিবনের মুখেও শোনা গেছে সমালোচনার সুর। তিনি বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুর সাথে যা ঘটেছে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। যখন ব্যক্তিগত উদাহরণের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়, তখনও তিনি প্রথমে নিজের প্রতিই বেশি মনোযোগী হন।’
সূত্র : এনডিটিভি