ঢাকা, ২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

স্বেচ্ছামৃত্যুর বিল পাশ বৃটিশ পার্লামেন্টে, ঐতিহাসিক আইন পরিবর্তনের পথে যুক্তরাজ্য

মানবজমিন ডিজিটাল

(৫ ঘন্টা আগে) ২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ৫:২০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:৩৮ অপরাহ্ন

স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দেয়ার জন্য একটি বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে বৃটেনের পার্লামেন্ট।  যা গত এক প্রজন্মের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় সামাজিক পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করেছে। ৩১৪-২৯১ ভোটে সংসদীয় বাধা অতিক্রম করে বিলটি পাস হয়েছে। টার্মিনালি ইল অ্যাডাল্টস (এন্ড অফ লাইফ) নামের এই বিলের বিষয়বস্তু হচ্ছে বাঁচার ইচ্ছা ফুরিয়ে এলে স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার সংরক্ষণ। নিরাময়ের অযোগ্য গুরুতর ব্যাধিগ্রস্ত, বছরের পর বছর কোমায় থাকা এবং চিররুগ্ন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যাদের বেঁচে থাকার জন্য হাতে হয়তো ছয় মাস বা তার কম সময় বাকি আছে তারা স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারবেন। সেই বিলই পাস হয়েছে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে। 

হাউস অফ কমন্সে পাস হয়ে এবার তা অনুমোদনের জন্য যাবে উচ্চকক্ষ হাউস অফ লর্ডসে। সেখানে এই বিলের চুলচেরা যাচাই বাছাই হবে। আরও কয়েক মাস কেটে যেতে পারে এতে। যদিও আরও সংশোধনী আসতে পারে, অনির্বাচিত লর্ডরা হাউস অফ কমন্সের নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা পাস হওয়া আইন আটকাতে চেষ্টা করবেন। এই ভোটের ফলে  অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং অন্যান্য দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গ রাজ্যের মতো স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বৃটেন । 

বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের  স্টারমারের লেবার সরকার আইনটির বিষয়ে নিরপেক্ষ ছিল, অর্থাৎ রাজনীতিবিদরা তাদের বিবেক অনুসারে ভোট দিয়েছেন। স্টারমার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিলটির সমর্থকরা বলছেন যে, এটি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের প্রতি মর্যাদা এবং সহানুভূতি প্রদান করবে, কিন্তু বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন যে এই বিল আইনে পরিণত হলে দুর্বল মানুষদের তাদের জীবন শেষ করতে বাধ্য করা হতে পারে।

ভোটের ফলাফল  শুনতে পার্লামেন্টের বাইরে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। যারা সমর্থক তাঁদের হাতে ছিল, মাই লাইফ, মাই ডেথ লেখা প্ল্যাকার্ড। অন্যদিকে বিরোধিতাকারীরা স্লোগান তোলেন  কিল দ্য বিল, নট দ্য ইল।

ভোটের  ফলাফল সামনে আসার পর হাততালি দিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন বিলের সমর্থনকারীরা। যারা এর বিরোধিতা করেছিলেন তারা নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত এমা ব্রে বলেন, তিনি আশাবাদী এই বিল তার মতো অবস্থায় থাকা মানুষদের সাহায্য করবে। ৪২ বছর বয়সী ব্রে-এর দুটি সন্তান রয়েছে। তার হাতে আর মাত্র ছয় মাস সময় আছে। কিন্তু  তীব্র যন্ত্রনা কমাতে ইতিমধ্যেই  অনাহারে থেকে  মৃত্যুর পরিকল্পনা করছেন এই  নারী। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘ভোটের এই ফলাফলের অর্থ, আমার মতো একই কষ্টের মধ্য দিয়ে বাকিদের হয়তো যেতে হবে না।’

জনমত জরিপে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ বৃটিশ নাগরিক স্বেচ্ছা মৃত্যুকে সমর্থন করেছেন। যারা স্বেচ্ছামৃত্যু চান, তাদের অন্তত দুজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সই করা অনুমতি এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি প্যানেলের সম্মতি নিতে হবে। বিলের প্রস্তাবক লেবার পার্টির এমপি কিম লিডবিটার বলেন, এই আইন পরিবর্তনে জীবনের শেষ ধাপে চলে যাওয়া অসুস্থ মানুষ সহানুভূতির কামনা করে নিরাপদে আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারবেন। 

উল্লেখ্য, এই বিল ১০ বছর আগে পার্লামেন্টে পেশ করেও পাস হতে পারেনি। বিলটি প্রস্তাবকারী লেবার আইন প্রণেতা কিম লিডবিটার বলেছেন, এই আইনটি এখনও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করে। ভোটের পর তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘বিলটির প্রতি আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলো অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার করা হয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে এটি যাদের সাহায্য করার প্রয়োজন তাদের সাহায্য করবে।’

অন্যদিকে আইন পরিবর্তনের বিরোধিতাকারী একটি দল 'কেয়ার নট কিলিং' একটি বিবৃতি জারি করে বিলটিকে ‘গভীর ত্রুটিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছে। গ্রুপের সিইও গর্ডন ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, 'বিলে ১৩০টিরও বেশি সংশোধনী বিবেচনা করার জন্য সংসদ সদস্যদের ১০ ঘণ্টারও কম সময় দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতিটি পরিবর্তনের জন্য ৫ মিনিটেরও কম সময় দেয়া হয়েছিল। কেউ কি মনে করেন যে এই খসড়া আইনের পরিবর্তনগুলো  বিবেচনা করার জন্য এটি যথেষ্ট সময়, যা আক্ষরিক অর্থেই জীবন-মৃত্যুর বিষয়?'

কিছু আইন প্রণেতা বলেছেন যে এত বড় সামাজিক পরিবর্তন নিয়ে  বিতর্কের জন্য আরও সংসদীয় সময় বরাদ্দ করা উচিত ছিল এবং মন্ত্রীদের আরও বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ততা এবং জবাবদিহিতায়  অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।

সূত্র : রয়টার্স

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status