অনলাইন
পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চীন: ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা আরো গভীর করার অঙ্গীকার
মানবজমিন ডিজিটাল
(৮ ঘন্টা আগে) ২১ জুন ২০২৫, শনিবার, ১২:৩০ অপরাহ্ন

চীনের ইউনান প্রদেশে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা আরো গভীর করার অঙ্গীকার করেছে। এই সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভূদৃশ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে। শুক্রবার বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী/পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের উদ্বোধনী বৈঠকের পর এই ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইদং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে প্রাথমিক অধিবেশনে যোগ দেন।নতুন ত্রিপক্ষীয় ফোরামের লক্ষ্য হলো সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, আরও বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে কাজ করা।
বালুচ তার বক্তব্যে চীন এবং দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে সম্পৃক্ততার আরও গভীর করার জন্য পাকিস্তানের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। তিনি চীন ও বাংলাদেশ উভয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, সমুদ্র বিজ্ঞান, সবুজ অবকাঠামো, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুই দেশের সঙ্গে কাজ করার জন্য পাকিস্তানের আগ্রহের কথা জানান।
আলোচনার সময় সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য তিনটি দেশ একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়েছে। এই ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের চিহ্ন। বিশেষ করে এটি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে একত্রিত করেছে, যারা কয়েক দশক ধরে কূটনৈতিকভাবে দূরে ছিল। গত বছর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট উষ্ণ হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ঢাকা সক্রিয়ভাবে বৃহত্তর কূটনৈতিক দিগন্ত অনুসরণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে চীন ও পাকিস্তান উভয়ের সাথেই নতুন পর্যায়ের যোগাযোগ। চীন তার পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং আঞ্চলিক সংযোগ উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় তার প্রভাব আরও গভীর করার চেষ্টা করেছে। মার্চ মাসে ইউনূসের বেইজিংয়ে রাষ্ট্রীয় সফর এবং তিস্তা নদী ও মংলা বন্দরের মতো সংবেদনশীল অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য চীনকে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ শেখ হাসিনার ভারতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ইতিমধ্যে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ন্যূনতম যোগাযোগের পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরাসরি বাণিজ্য, সামরিক বিনিময় এবং উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করেছে। বেইজিংয়ের জন্য, ক্রমবর্ধমান ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক তার দীর্ঘমেয়াদী আঞ্চলিক লক্ষ্যগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। যার মধ্যে রয়েছে বিকল্প অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ, বঙ্গোপসাগরে তার উপস্থিতি সম্প্রসারণ এবং প্রতিবেশী অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত স্থান হ্রাস করা। ভারতের জন্য, চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ জোট গঠন উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যেহেতু প্রস্তাবিত চীনা-সমর্থিত কিছু অবকাঠামো প্রকল্প ভারতের সংবেদনশীল উত্তর-পূর্ব করিডোরের কাছাকাছি অবস্থিত।
যদিও ত্রিপক্ষীয় ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এই সম্পর্কের প্রাতিষ্ঠানিককরণ দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা অন্বেষণের জন্য তিন দেশের সদিচ্ছার ইঙ্গিত দেয়। এই গ্রুপ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যদি অংশীদারিত্ব বিস্তৃত হয় এবং বৃহত্তর সংযোগ, প্রতিরক্ষা সংলাপ এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সমন্বিত অবস্থান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও পরবর্তী দফার বৈঠকের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি, তবে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠার ফলে একাধিক ক্ষেত্রে ফলো-আপ আলোচনা এবং সহযোগিতা ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র : ডন
পাঠকের মতামত
Great! to see this type of cooperation.Together we are more strong.