খেলা
গল জয়ের রণকৌশল ‘বিশ্বাস’
ইশতিয়াক পারভেজ, গল শ্রীলঙ্কা থেকে
১৬ জুন ২০২৫, সোমবার
আকাশে মেঘ, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। গল স্টেডিয়ামের কিছু দূরেই ভারত মহাসাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তার সমস্ত শক্তি নিয়ে। সকাল তখন ৯টা ছুঁই ছুঁই, সাদা বাসে করে মাঠে হাজির বাংলাদেশ দল। অনুশীলন শুরু হতে নির্ধারিত সময়ের তখনও এক ঘণ্টা বাকি। শ্রীলঙ্কায় এসে একদিন বিশ্রাম নিয়ে যেন চনমনে বাংলাদেশ। এখানে সবার আগে দুটি ব্যাট হাতে অনুশীলনের জন্য চলে এলেন মুশফিকুর রহীম। এরপর একে একে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, এনামুল হক বিজয়রা নেটে চলে এলেন। সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন নেটের উইকেট পরখ করে নিলেন। প্রধান কোচও বসে রইলেন না। গ্রাউন্ডসম্যানদের নিয়ে তিনিও শিষ্যদের নিয়ে ব্যস্ত হলেন অনুশীলনের উইকেট প্রস্তুতে। তবে খুঁজে পাওয়া গেলো না নয়া ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে। কী হয়েছে তার! খোঁজ নিয়ে জানা গেল জ্বর। তাকে দেয়া হয়েছে বিশ্রাম। তিনি ভালো আছেন হয়তো আজ দলের সঙ্গে অনুশীলনও করবেন। তবে প্রশ্ন থাকছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে একাদশে তিনি থাকবেন তো! যদি সেটি না হয় কেমন হবে একাদশ।
এই ম্যাচের আগে টাইগারদের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন গল জয়ের রণকৌশলটা কী হবে! টাইগারদের সম্প্রতি নড়বড়ে ব্যাটিং নিয়ে বিশ্বাসটাই সম্বল প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের। তিনি বলেন, ‘দল এগোচ্ছে, শেখার প্রক্রিয়াও চলছে, গত টেস্টে আমাদের ব্যাটিং পার্টনারশিপ নিয়ে ভাবনার প্রমাণ মিলেছে। আমরা উন্নতির পথে আছি। অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে, তাই প্রতিটি টেস্ট থেকে শেখার চেষ্টা করছি।’ মিরাজ যদি শেষপর্যন্ত খেলতে না পারেন তাহলে কী হবে! চিন্তাটা হয়তো বেশ ভালোভাবেই ভাবাচ্ছে দলের স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদকে। যে কারণে তার সবমনোযোগ স্পিনারদের দিকেই। গা গরম করা ভলিবল খেলা শেষ হতেই তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, হাসান মুরাদদের নিয়ে নেমে পড়লেন অনুশীলনে। গলে দলের অন্যতম শক্তি হতে পারেন এই স্পিনাররাই। পরিসংখ্যানও বলছে একই কথা। গলের উইকেটে পেসারদের তুলনায় স্পিনারদের সাফল্য বেশি। এখানে শ্রীলঙ্কার ২৭ জয়ের অধিকাংশই এসেছে স্পিনারদের হাত ধরে। সেরা ১০ উইকেট সংগ্রাহকের প্রায় সবাই স্পিনার। এ মাঠে ব্যক্তিগতভাবে একশ’র বেশি উইকেট রয়েছে লঙ্কান স্পিন জাদুকর মুত্তিয়া মুরলিধরন ও রঙ্গনা হেরাথের। মুরলিধরনের উইকেট ১৫ টেস্টে ১১১ এবং হেরাথের ১৯ টেস্টে ১০২টি। এ মাঠে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট অফ স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের, ১ টেস্টে ৬টি। তার সেরা বোলিং স্পেল ১১৩ রানে চার উইকেট। তাই মিরাজকে কতটা প্রয়োজন তা সবারই জানা। প্রধান কোচ সিমন্স অবশ্য মিরাজের জ্বরকে দলের জন্য মধুর সমস্যা হিসেবেই দেখছেন।
তিনি বলেন, ‘গত দুই দিনে সে অনেকটাই ভালো আছে। আমরা দেখব সন্ধ্যায় ওষুধের পর সে কেমন থাকে। আশা করি, কাল অনুশীলন করতে পারবে এবং খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে। এটা (মিরাজের অসুস্থতা) নিশ্চয়ই চিন্তার। তবে একজনের সমস্যা অন্যজনের জন্য সুযোগ এনে দেয়। দলের সবাই চায় মিরাজ সুস্থ হয়ে উঠুক, কিন্তু তারা এও জানে, যদি মিরাজ না খেলতে পারে, তাহলে অন্য কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। এটা সমস্যা, তবে সমস্যাটা মধুর।’ স্পিনারদের পাশাপাশি এখানে ব্যাটারদেরও দারুণ সুযোগ। গলে একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরির কৃতিত্ব ক্রিস গেইলের।
২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৩৭ বলে ৩৪ চার ও ৯ ছক্কায় ৩৩৩ রান করেন ক্যারিবীয় লিজেন্ড। ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে ১২টি। পরিসংখ্যানে স্পিনারদের সহায়তা পাওয়ার কথা। কিন্তু সুনামীতে গল স্টেডিয়াম ধ্বংস হবার পর ব্যাটারদের জন্য বয়ে এনেছে আশীর্বাদও। যার প্রমাণ রেখেছে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের ব্যাট। ২০১৩ তে তার ব্যাট থেকে এই গলেই আসে দেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। এছাড়াও সেই ইনিংসে মোহাম্মদ আশরাফুল ১৯০, নাসির হোসেন সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক সৌরভ ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন। তারমানে সাদমান ইসলাম, বিজয়, শান্ত, লিটনদেরও দারুণ সুযোগ। তবে টাইগারদের ওপেনিং নিয়ে চিন্তা। আর তা দূর করতে আসতে পারে ব্যাটিং লাইনে পরিবর্তন। গুঞ্জন রয়েছে সাদমানের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন অধিনায়ক শান্ত নিজেই। সেই ক্ষেত্রে বিজয় কোথায় খেলবেন? প্রধান কোচ জানিয়েছেন তিনি কাল উইকেট দেখেই ঠিক করবেন কম্বিনেশন।